২১ টাকা নিয়ে বাড়ি ছাড়া ছেলেটাই ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্য কারিগর!

মহানাটকীয় পটভূমিতে বিরাটের ইনিংস, সূর্য কুমারের ক্যাচ, বুমরার স্পেল, হার্দিকের ওভার- শনিবার ভারতের ভুবনসেরা হওয়ার জন্য অনেকের শাপমুক্তি হল। কিন্তু খেলা শেষে যখন আবেগের বন্যায় ভেসেছে দেশবাসী, কান্নায় ভিজেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠ, তখন দেশের জার্সি গায়ে কপালে লাল টিপ পরা মানুষটিকে অনেকেরই অচেনা লেগেছে।

সতেরো বছর পর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (T20 World Cup) জিতল টিম ইন্ডিয়া। তেরো বছর পর আবার বিশ্বজয়ী ভারতীয় ক্রিকেটদল (Indian Cricket Team won WC)। ২৯ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত হার্টবিট বেড়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাত রানে হারিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছে রোহিত- বিরাটরা (Rohit Sharma-Virat Kohli)। মহানাটকীয় পটভূমিতে বিরাটের ইনিংস, সূর্য কুমারের ক্যাচ, বুমরার স্পেল, হার্দিকের ওভার- শনিবার ভারতের ভুবনসেরা হওয়ার জন্য অনেকের শাপমুক্তি হল। কিন্তু খেলা শেষে যখন আবেগের বন্যায় ভেসেছে দেশবাসী, কান্নায় ভিজেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠ, তখন দেশের জার্সি গায়ে কপালে লাল টিপ পরা মানুষটিকে অনেকেরই অচেনা লেগেছে। স্যোশাল মিডিয়ায় আলাদা করে তাঁকে নিয়ে লেখালেখি না হলে তিনি হয়তো আজও অন্তরালেই থেকে যেতেন। নাম, রাঘবেন্দ্র দ্বিবেদী (Raghavendra Dwivedi)। মাত্র একুশ টাকা নিয়ে বাড়ি ছাড়া ছেলেটিই আজ ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের মূল কারিগর!

আজ থেকে প্রায় ২৪ বছর আগে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে যাওয়ায় মাঠে ব্যাট করার আশা চিরকালের মতো শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। আর তাই ক্রিকেট দেবতাও তাঁকে খালি হাতে ফিরতে দেননি। রাঘবেন্দ্র আসলে টিম ইন্ডিয়ার থ্রোডাউন স্পেশালিস্ট। ২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালীন, বিরাট কোহলি (Virat Kohli)বলেছিলেন, ” আমার আজকের সাফল্যে এই লোকটির বিশাল ভূমিকা রয়েছে, কিন্তু তাঁর কঠোর পরিশ্রম কখনও কখনও বিশ্বের নজরে পড়ে না।” তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের মেরুদণ্ড। ২০১১ সালে থ্রোডাউন বিশেষজ্ঞ হিসাবে ভারতীয় দলে যোগ দেন রঘু। গত এক দশকে অনুশীলন সেশনে কমপক্ষে ১ মিলিয়ন বল থ্রো করেছেন।১৫০ কিমি গতিবেগে তাঁর ডেলিভারি মোকাবেলা করার ক্ষমতা সকলের নেই। কিন্তু রোহিত – বিরাটকে তৈরি করতে নিরলস ভাবে চেষ্টা করে গেছেন তিনি। টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটারদের মতে রঘু যখন সাইডআর্ম করেন, তখন বিশ্বের অন্য কোনও থ্রোডাউন বিশেষজ্ঞ তাঁর গতির সাথে মিল রাখতে পারে না। আজ হিট ম্যান ছক্কা হাঁকালে সবাই উল্লাস করে কিন্তু কে তাঁকে তৈরি করল সে খবর কেউ রাখে না।

রাঘবেন্দ্র উত্তর কন্নড় জেলার কুমতার বাসিন্দা। তাঁর ক্রিকেট প্রেম পরিবারের বিশেষ পছন্দের ছিল না। তাঁর বাবা যখন খেলা আর পড়াশনার মধ্যে যে কোনও একটাকে বেছে নিতে বলেছিলেন রঘু এক মুহূর্ত না ভেবে মাত্র একুশ টাকা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। কখনও হুবলি বাসস্ট্যান্ডে আবার কখনও শ্মশানে রাত কাটিয়েছেন। হুবলিতে তিনি ক্রিকেটারদের বল ছুড়ে অনুশীলনে সাহায্য করতেন। এরপর এক বন্ধুর সাহায্যে তিনি বেঙ্গালুরুতে কর্ণাটক ইনস্টিটিউট অফ ক্রিকেটে যোগ দেন। কাজ ছিল অনুশীলনের জন্য আসা কর্ণাটকের ক্রিকেটারদের বোলিং মেশিনে সাহায্য করা। এরপর আসে লাইফের টারনিং পয়েন্ট। কর্ণাটকের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক এবং বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৯ নির্বাচন কমিটির প্রধান তিলক নাইডু তাঁকে শ্রীনাথের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন তিনি চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের কাছে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কাজ করতেন। এই সময় একটিও পয়সা পেতেন না, মাসের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় ধরে না খেয়ে কাটাতেন। এনসিএতে থাকাকালীন তিনি বিসিসিআই লেভেল-১ কোচিং কোর্স সম্পন্ন করেন। অনুশীলনের জন্য আসা ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি একজন প্রিয় হয়ে ওঠেন। সচিন সবটা জানার পর রাঘবেন্দ্রের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। যার ফলে ২০১১ সালে ভারতীয় দলের প্রশিক্ষণ সহকারী হিসাবে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাঘবেন্দ্র ভারতীয় দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নিরলস পরিশ্রমের ফল মিলল ২০২৪ সালের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। তাইতো কাপ হাতে সবার আগে তাঁর সঙ্গেই ছবি তুললেন টিম ইন্ডিয়ার কোচ থেকে ক্যাপ্টেন সকলেই।

 

Previous articleডবল ইঞ্জিন মধ্যপ্রদেশে তিন বছরে নিখোঁজ ৩১ হাজার মহিলা!
Next articleঅভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি চান, চোপড়া কাণ্ডে সুর নরম বিধায়ক হামিদুলের