অভিষেক-ম্যাজিকে কাটল জট, রাস্তা পেয়ে আপ্লুত অশীতিপর প্রাক্তন শিক্ষক

সুমন করাতি, হুগলি

বঙ্কিমচন্দ্রের নবকুমার পথ হারিয়েছিল। আর আরামবাগের নবকুমার লড়াই করেছেন পথের দাবিতে। জমানা বদলেছে কিন্তু রাস্তা হয়নি। পথের দাবিতে বহু পথ হেঁটেছেন আরামবাগের গুপ্ত পাড়ার লড়াকু শিক্ষক নবকুমার গুপ্ত। শেষে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) কনভয়ের সামনে রাস্তায় শুয়ে রাস্তার দাবি জানান অশীতিপর প্রাক্তন শিক্ষক। গাড়ি থেকে নেমে সব শুনে আশ্বাস দিয়েছিলেন অভিষেক। প্রায় ৮ বছরের লড়াই শেষে রাস্তা হল। তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের এই উদ্যোগে আপ্লুত নবকুমার ও তাঁর পাড়ার বাসিন্দারা।রাস্তার দাবিতে ২০১৭ সাল থেকে লড়াই করছিলেন বৃদ্ধ লড়াকু শিক্ষক নবকুমার গুপ্ত (Nabakumar Gupta) ও জয়া গুপ্ত। গ্রামের মূল রাস্তা থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন। পুকুর পাড় দিয়ে, অন্যের ভিটে বা জায়গা ডিঙিয়ে তাঁদের যেতে হত মূল রাস্তায়। বিভিন্ন সময়ে কটুক্তি জুটত। কিন্তু নিরুপায় হয়েই তাঁদের এইভাবেই যাতায়াত করতে হয়েছে। তাঁদের পাড়াটি ছিল একেবারেই পাণ্ডব বর্জিত। অভিযোগ, বাম জমানায় কোনও কাজ হয়নি। বৃদ্ধ শিক্ষকের দাবি, তিনি অনেকবার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তারা কাজ করেনি। উলটে সিপিআইএমের নেতারা নাকি তাঁকে বলেছিলেন, কোনও কংগ্রেসির পাড়ায় রাস্তা করে দেওয়া হবে না। প্রতিবাদ করেছিলেন নবকুমার। কপালে জুটেছিল হুমকি। কিন্তু সুরাহা হয়নি। রাজ্যে পালা বদলের পরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি। ফের আবেদন জানান। পর্যায়ক্রমে বিডিও, এসডিও, ডিএম, পঞ্চায়েত দফতর, গ্রামোন্নয়ন দফতর-সহ একাধিক জায়গায় চিঠি লেখেন। তার উত্তরও পান। কিন্তু রাস্তা হয় না। বিডিও তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন, আপনার তো রাস্তা হয়ে গিয়েছে। খাতায়-কলমে ৯ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। শুনে বৃদ্ধের মাথায় হাত পড়ে। এক ছটাক মাটিও পড়েনি। বিডিও-কে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। দেখা যায়, সত্যিই কোনও রাস্তাই হয়নি।

গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জনসংযোগ করতে ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ যাত্রায় বেরিয়ে ছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। আরামবাগেও আসেন। ভালিয়া থেকে যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি, সেই সময়ে তাঁর কনভয়ের সামনে  রাস্তায় শুয়ে পড়ে গাড়ি আটকান বৃদ্ধ মাস্টারমশাই। হইচই পড়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমে অভিষেক সেই বৃদ্ধ শিক্ষিক নবকুমার গুপ্তের কাছে যান। পুরো ঘটনা শোনেন। আশ্বাস দেন, খুব শিগগিরই রাস্তার কাজ হবে। আর যাঁরা কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরপর দিনই জেলা পরিষদ ও জেলাশাসকের অফিস থেকে প্রতিনিধিরা আসেন। যাবতীয় তথ্য নিয়ে যান। প্রকল্প পাঠান। অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয় হয় ৮১ বছরের বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের। তৈরি হয়েছে রাস্তা। এর জন্য আপ্লুত বৃদ্ধ নবকুমার শুধু বার বার ধন্যবাদ জানাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।