Wednesday, November 5, 2025

অনন্ত-রাধিকার বিয়েতে আলোর খেলায় ইতিহাস তৈরি কলকাতার অনিকেতের!

Date:

Share post:

‘অ্যান্টিলিয়া’র রাজকীয় অন্দরে দুরুদুরু বুকে পা রাখা যুবককে নিয়ে আজ দেশজুড়ে চর্চা। কথায় বলে বাংলা আজ যেটা ভাবে দেশ তা কাল ভাবে। বাঙালি ভাবনার সঙ্গেও এই বাগধারা যেন ওতপ্রোতভাবে জুড়ে গেছে। তারই প্রমাণ মিললো গত ১৩ জুলাই অনন্ত আম্বানি-রাধিকা মার্চেন্টের (Anant Ambani Radhika Merchent) ‘শুভ আশীর্বাদ’-এ প্রাসাদোপম সেটে আলোর খেলায়। দেশের অন্যতম হাইপ্রোফাইল বিয়েতে ভারতের ধর্ম-সংস্কৃতিকে তুলে ধরার নেপথ্য কারিগর হিসেবে বাংলার নাম উজ্জ্বল করলেন অনিকেত মিত্র (Aniket Mitra)। মুকেশকর্তার ছোট ছেলের বিবাহ পরবর্তী আশীর্বাদের অনুষ্ঠানে মঞ্চে যখন রাহুল শর্মা, নীলাদ্রি কুমার, শ্রেয়া ঘোষাল (Shreya Ghoshal), কৌশিকী চক্রবর্তী (Kaushiki Chakraborty), হরিহরণ, এ আর রহমান (AR Rahman), সোনু নিগম, শঙ্কর মহাদেবনের (Shankar Mahadevan) সুরের ঝংকার, তখনই থ্রিডি গ্রাফিক্সের মায়াজালে তৈরি হচ্ছে একের পর এক মুহূর্ত, আর এক লহমায় বদলে যাচ্ছে সেটের চেহারা। কী নেই তাতে? ভারতের নানা তীর্থস্থানের প্রেক্ষাপট থেকে দেব দেবীর ছবি, মহাকাব্য থেকে পুরাণের দৃশ্যকল্পকে শাস্ত্রীয় সংগীতের সুরেলা মেজাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে আলোর অঙ্কনে ফুটিয়ে তুললেন উত্তর কলকাতার যুবক।

অনন্ত আম্বানি -রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের পরের দিন হাই প্রোফাইল অতিথিদের আশীর্বাদ পর্বের মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ার নজর কেড়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানেই সনাতন ধর্ম এবং লোকশিল্প-সংস্কৃতির কোলাজ তৈরি হয়েছে আলোর খেলায়, যার সবটাই অনিকেতের নিজের হাতে আঁকা। পুরোটার সঙ্গী বা সহকারী বলতে শুধুমাত্র এক জন- অনিকেতের স্ত্রী, প্রিয়ম আগরওয়াল। বৈভবী ও শ্রুতি মার্চেন্ট আম্বানি পরিবারের বিয়ের কোরিওগ্রাফি সামলেছেন। এই সূত্র ধরেই অনন্ত রাধিকার বিয়ের অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরেছেন সস্ত্রীক অনিকেত। ধনুকুটেড এর বাড়ির অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার মতো পোশাক তাঁদের কাছে ছিল না, কিন্তু এই অনুষ্ঠানকে গোটা দেশ তথা বিশ্বের বুকে স্মরণীয় করে রাখতে যে ইতিহাস তৈরি করার যোগ্যতার প্রয়োজন সেটার সার্থক রূপকার একমাত্র অনিকেত। শিল্পী বলছেন প্রায় দেড় দু মাস ধরে মাওয়া খাওয়া ভুলে একটানা কাজ করে যাওয়া। মন শান্ত রাখতে গীতা পাঠ করতেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার যে সংস্থা প্রোজেক্টটার কারিগরি এবং থ্রিডি ম্যাপিং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তার বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল, তাদের ভারতীয় সংস্কৃতি, পুরাণ, ইতিহাসের পাঠ দিয়ে পুরো বিষয়টাকে ফ্রেম বাই ফ্রেম ডিজাইন সহজ করে বোঝানোর ভারও ছিল অনিকেত-প্রিয়মের উপরেই। প্রতিমুহূর্তের আপডেট দেয়া হতো মুকেশ-নীতাকে আর সেখানেই মিলতো রিলায়েন্স দম্পতির মুগ্ধতা। যা অনুপ্রেরণা দিত বলছেন অনিকেত।

যাঁদের গান শুনে বড় হয়েছেন, একটা আলাদা ভালো লাগা তৈরি হয়েছে সেই সব শিল্পীদের মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন ভিজুয়াল গ্রাফিক্সের নেপথ্যে থাকাটা যে কতটা আনন্দের সেটা ভাষায় বোঝাতে পারছেন না অনিকেত। তবে তিনি বলছেন পারিশ্রমিক কাজের মূল্যায়ন এই শব্দ রয়েছে কিন্তু তার থেকেও বড় প্রাপ্তি হলো সেই মানুষটার চোখে বিস্ময় আর মুগ্ধতা দেখা যাকে একবার সামনে থেকে দেখার জন্য চিরকাল প্রার্থনা করে গেছেন কলকাতার ছেলেটা। তিনি আর কেউ নন- বলিউড বাদশা শাহরুখ খান (Shahrukh Khan)। তার টানেই তো অনিকেতের মুম্বইতে কাজ করা। “মাথার উপরে শূন্যে আলোর মায়ায় যখন একটু একটু করে ফুটে উঠছে আমার আঁকা গণেশমূর্তি, উনি তখন মুগ্ধ চোখে একদৃষ্টে তাকিয়ে! আর কী বা চাই!”, বলছেন অনিকেত। এখানেই জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত খুঁজে পেয়েছেন বাঙালি শিল্পী। বাকিটা ইতিহাস।


spot_img

Related articles

বিলাসপুরের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত বেড়ে ৮: মৃত চালকের উপরই দায় চাপানোর চেষ্টা!

বরাবর যেভাবে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ট্রেনের চালকের উপর দায় চাপিয়ে অব্যবস্থা ও পরিকাঠামোর অভাবকে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করে...

ঠাকুরবাড়িতে প্রকাশ্যে ঘরোয়া কোন্দল! শান্তনুর সঙ্গ ছাড়লেন দাদা সুব্রত 

মতুয়া সংগঠন ঘিরে দীর্ঘদিনের অন্দরের টানাপোড়েন এবার প্রকাশ্যে। পারিবারিক অশান্তি এবং সংগঠনের ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে দেখা দিল...

বিরোধীদের কুৎসায় কালি: রাজ্যে SIR প্রক্রিয়ার প্রথমদিন শান্তিপূর্ণ, তথ্য পেশ কমিশনের

নির্বাচন কমিশনের তরফে বিএলও। রাজনৈতিক দলের তরফে বিএলএ। রাজ্যের নাগরিক ভোটার। এই তিনের সমন্বয়ে মঙ্গলবার থেকে গোটা রাজ্যে...

খুব তাড়াতাড়ি আসবেন কলকাতায়, মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তার উত্তরে জানান শাহরুখ

রবিবার শাহরুখ খানের ৬০তম জন্মদিন ছিল। এদিন শাহরুখকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই শুভেচ্ছার এবার উত্তর...