বাংলা ভাগের চেষ্টা করছেন সুকান্ত, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া প্রস্তাবের বিরোধিতায় সরব তৃণমূল

বাংলা ভাগ করার চেষ্টা করছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব ঘিরে রাজনৈতিক মহলে বাড়ছে বিতর্ক। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi)সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলা ভাগের চক্রান্ত করলেন সুকান্ত মজুমদার! প্রতিবাদে সরব তৃণমূল। কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলার জন্য বিন্দুমাত্র বরাদ্দ করেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Nirmala Sitaraman)। মঙ্গলের বাজেটের পর বুধবার লোকসভায় অর্থমন্ত্রীকে শ্বেতপত্র প্রকাশের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। আর ঠিক এই দিনই উন্নয়নের মিথ্যে প্রতিশ্রুতির নামে ঘুরপথে বাংলা ভাগ করার প্রস্তাব নরেন্দ্র মোদিকে দিলেন বিজেপির বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar), অভিযোগ তৃণমূলের(TMC)।

উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের অংশ করে নিতে পারলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের সুযোগ সুবিধা মিলবে এই যুক্তি তৈরি করে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলাকে তাঁরই হাতে থাকা মন্ত্রকের অধীনে আনার আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যভাগের চক্রান্ত করার অভিযোগ আনল শাসকদল তৃণমূল। বুধবার তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy)এক ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করে এই দাবি করেছেন। রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘ কেন্দ্রের একজন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার নাকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উত্তরবঙ্গের যে আটটি জেলা আছে, সেই আটটি জেলাকে উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মন্ত্রী হিসাবে যে শপথ নিয়েছিলেন সংবিধান মেনে চলবেন। এই দাবি সংবিধানের পরিপন্থী। কারণ উত্তরবঙ্গ বলে কোনও ভূখন্ড ভারতের মধ্যে নেই। যে আটটি জেলাকে বলা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ আসলে পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত আটটি জেলাকে কথার সুবিধার জন্য লোকে উত্তরবঙ্গ বলে থাকে। আসলে তা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর প্রান্ত। আসলে ২০১১ সালে সিপিএমকে হটিয়ে বাংলার মানুষের আর্শীবাদ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি নির্বাচনে, লোকসভা, বিধানসভা কিংবা পুরসভার ভোট হোক, ধারাবাহিক ভাবে জিতে চলেছেন। ওরা আধাসেনা পাঠিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও, বাংলার মানুষের মন টলাতে পারল না। তখন রাজ্যকে ভাগ করার চক্রান্ত করছে।’ তিনি আরও বলেন ‘যে যদি সুকান্ত মজুমদারের দাবি মেনে নিতে হয়, তাহলে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, এই সমস্ত রাজ্যে দীর্ঘ দিন ধরে নতুন রাজ্যের দাবি আছে। সেই দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পড়ে রয়েছে। মোট ৪০টি নতুন রাজ্যের দাবি সারা ভারতবর্ষ জুড়ে। যে ৪০টি নতুন রাজ্যের দাবি রয়েছে, আগে সরকার সেইসব নিয়ে বিবেচনা করুক। পরে বাংলা নিয়ে ভাববে।

 

বাজেটে যেখানে বন্যা প্রবণ এলাকার জন্য উত্তরাখণ্ড কিংবা সিকিমকে বরাদ্দ করা হয়েছে সেখানে উত্তরবঙ্গের দিকে ফিরেও তাকাইনি কেন্দ্রের নতুন ‘নড়বড়ে ‘ সরকার। নিজের বাজেট বিরোধী বক্তৃতায় এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন অভিষেক। সুকান্ত মজুমদারের এই চক্রান্তের বিরোধিতা করে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, ‘বিজেপি উন্নয়নের বিরোধী। বিভাজনের রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। বাংলাকে টাকা দেওয়া যাবে না এই কথা তো উনারাই বারবার দিল্লিকে জানিয়েছেন। আসলে লোকসভা নির্বাচন এবং উপনির্বাচনে বাংলায় বিজেপির হারের দায় শুভেন্দুর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছেন সুকান্ত। বাইরে নজর ঘোরানোর জন্য এই ধরনের বিতর্কিত বিষয় বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন।’ ঘটনাচক্রে বুধবারই রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ কোচবিহারকে গ্রেটার কোচবিহার হিসাবে কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল করার দাবি জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে অস্বস্তি বেড়েছে বঙ্গ বিজেপির।


Previous articleপরাজয়-গো.ষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে নজর ঘোরাতে বঙ্গভঙ্গের উ.স্কানি, কুণালের নিশানায় বিজেপি
Next articleসুপ্রিম নির্দেশ, পিছিয়ে গেল হাইকোর্টে স্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ