মুখে নারী নির্যাতন বিরোধী বুলি শোনা গেলেও মোদি তথা বিজেপি (BJP) সরকারের আসল চেহারা ফের প্রকাশ্যে এল। যেখানে আর জি করে (R G Kar) ডাক্তারি পড়ুয়া মৃত্যুর খবরে উত্তাল দেশ, সেখানে অসমের বিজেপির ডবল ইঞ্জিন রাজ্যে শিলচর হাসপাতাল (Silchar medical college and hospital) কর্তৃপক্ষের ‘আজব ফতোয়া’য় নয়া বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার দ্রুত তদন্তে মরিয়া রাজ্য সরকার সেখানে মহিলা পড়ুয়া ডাক্তারদের নিরাপদ থাকতে রাতে একা ঘোরাফেরা না করার পরামর্শে শুরু নয়া বিতর্ক। ইতিমধ্যে আর জি করের ঘটনায় পথে নেমে নারী সুরক্ষার দাবিতে সোচ্চার বিজেপি সেখানে ডবল ইঞ্জিন হিমন্ত বিশ্বশর্মার (Himant Biswa sarma) রাজ্যে শিলচর হাসপাতালের প্রিন্সিপাল তথা মুখ্য সুপার ডাঃ ভাস্কর গুপ্তের পরামর্শ সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। তবে চাপের মুখে পড়ে সেই উপদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হল অসম সরকার।

অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এক্স হ্যান্ডেলে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হচ্ছে। শীঘ্রই একটি নতুন নির্দেশিকা দেওয়া হবে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন এবং সরকারি নির্দেশিকা অনুসরণ করে নয়া পরামর্শবিধি জারি হবে। অসমের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মহিলা ডাক্তার ও অন্য মহিলা কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছিল, তাঁরা যেন রাতে একলা ঘোরাফেরা না করেন। নারী নিরাপত্তা নিয়ে এহেন পরামর্শে ডাক্তারদের মধ্যে বিশেষ করে মহিলা হাসপাতাল কর্মীদের ভিতরে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। প্রিন্সিপাল গুপ্ত নয়া নির্দেশিকায় লিখেছিলেন, মহিলা ডাক্তার, ছাত্রী এবং অন্য মহিলা কর্মীদের উদ্দেশে জানাচ্ছি, যতটা সম্ভব অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে চলুন। একলা থাকলে বিশেষ করে লোকজনহীন এলাকায় যাবেন না। অত্যাবশ্যক জরুরি কারণ ছাড়া কেউ হস্টেল বা লজিং রুম ছেড়ে রাতে বাইরে বেরবেন না। যদি রাতে বেরনোর প্রয়োজন হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে।

তিনি আরও নির্দেশ দেন, বেশি রাতে হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে বাইরে যাবেন না। হস্টেলে বসবাসকারী সব আবাসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়মবিধি মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। সন্দেহজনক অথবা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বেশি মেলামেশা করবেন না, এ ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। এছাড়াও আশ্চর্যজনকভাবে মহিলা ডাক্তারদের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে জনসাধারণের সঙ্গে মিষ্টিমুখে, অমায়িক ব্যবহার করার পরোক্ষ নির্দেশ দেন তিনি। যদিও শিলচর হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স থেকে কর্মীরা এ ধরনের বিজ্ঞপ্তির তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁদের দাবি, ঘরবন্দি করে রাখার পরামর্শ দেওয়ার চেয়ে সকলের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। তাঁদের অভিযোগ, আমরা বাইরের লোক কেন, হাসপাতালের ভিতরেই পুরুষ কর্মীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত হই। নোংরা ভাষা প্রতিনিয়ত শুনতে হয়। আমরা এর আগেও বহুবার এনিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি। উল্টে পড়ুয়া ও মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করে রাতে ঘরবন্দী হ ওয়ার নির্দেশ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল তথা মুখ্য সুপারের।
