নারী-অধিকার রক্ষায় ৩ সেপ্টেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন: ‘অপরাজিতা’ বিল পেশ করে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর

মেয়েদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে ৩ সেপ্টেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন। আজ মেয়েদের অধিকার সুরক্ষিত। মঙ্গলবার, বিধানসভায় (Assembly) ‘অপরাজিতা উইম্যান অ্যান্ড চাইল্ড ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিন্যাল লস সংশোধনী বিল ২০২৪’ বিল পেশ করে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর কথায়, “আজ ৩ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক দিন।  ১৯৮১ সালে ওই দিনে মেয়েদের অধিকারী সুরক্ষিত করার জন্য রাষ্ট্র সংঘের নারী বৈষম্য বিরোধী কমিটি হয়। নারী সুরক্ষার স্বার্থে মা-বোনেরা যে লড়াই করছে। ছাত্র-ছাত্রী, নাগরিক সবাইকে অভিনন্দন।“

আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, “আমাদের পুলিশ তদন্ত করছিল। যতদিন তদন্ত কলকাতা পুলিশের হাতে ছিল, আমি কোনও দায়িত্ব পালন করিনি, বলতে পারবেন না।  ১২ তারিখ নির্যাতিতার বাড়িতে যাই। যা যা তদন্তে উঠে এসেছিল, সেইসব তার মা বাবার কাছে পাঠান হয়। আমি ওঁদের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছি। রবিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত তার আগেই সেই তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছে। আমরা সিবিআইয়ের কাছে বিচার চাই।“

এরপরে অপরাজিতা বিলের ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। ‘অপরাজিতা’ বিলকে সমর্থন করলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমি রেজাল্ট দেখতে চাই। ওই বিলকে আগে আইনে পরিণত করুন।“ তারও জবাবে মমতা বলেন, “বিরোধী দলনেতাকে বলুন বিলে রাজ্যপালকে বলুন সই করতে। তার পরেই দেখবেন রুলস হয়ে গিয়েছে।“

একে একে তথ্য দিয়ে বিরোধী দলনেতাকে বিঁধে মমতা বলেন, “আমি কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্য সেটা বলব। আপনার থেকে জ্ঞান নেব না। বিরোধী দলনেতাকে আমার কথা ধৈর্য্য ধরে শুনতে হবে। আমি প্রেস-মিডিয়ার বিরোধী নই। মেয়েদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে শামিল হতে হবে। ৩ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক দিন। ইউনাইটেড নেসনস শুরু করেছিল মহিলাদের জন্য নারী বৈষম্য বিরোধী কমিটি। আমি সমবেদনা জানাচ্ছি নির্যাতিতার পরিবারকে। গোটা দেশে যারা অত্যাচারিত হয়েছে। তাদের পরিবারকেও সমবেদনা জানাচ্ছি।“

মুখ‍্যমন্ত্রীর কথায়, “কোনও শর্ত ছাড়া এই বিল সমর্থন করবে সেই আশা রাখি। ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। আমি নিজে সিবিআইকে দিয়ে দেব বলেছিলাম। কিন্তু আমি রবিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। আদালতের নির্দেশে সিবিআই হয়ে যায়। আমাদের আপত্তি নেই। উই ওয়ান্ট জাস্টিস। সিবিআইয়ের থেকে জাস্টিস চাই। বিরোধী দলনেতাকে বলছি, রাজ্যপালকে বলুন এই বিলে সই করতে। আমিও চাই আপনাদের মতো এই বিল দ্রুত কার্যকর করতে।“

কামদুনির প্রসঙ্গও উঠে আসে মুখ‍্যমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেন, “৮৮ ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট আছে। মহিলাদের জন্য ৫২’টা নির্দিষ্ট কোর্ট আছে। কামদুনি কেসে পিপি বদল হয়েছে অনেক সময় ট্রান্সফারের কারণে। আদালত আমাদের হাতে নেই। আদালত আপনাদের হাতে আছে।“

মমতার কথায়, “আমি মনে করি বিরোধীদের দায়বদ্ধতা আছে। ট্রেনের ভেতর রক্ষা করার দায়িত্ব আর পি এফের। রাজ্য সরকারের নয়। ম্যাক্সিমাম ফেক নিউজ। একাধিক বিকৃত তথ্য দেওয়া হল। খবরের কাগজের নামে যা দেখানো হল।“

কী আছে বিলে?
মুখ্যমন্ত্রী জানান মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ নীরসনে চরমতম শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্য কে সামনে রেখে তৈরি হয়েছে নতুন বিল। ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে ধর্ষিতা মারা গেলে অথবা জড় অবস্থায় পৌঁছে গেলে অপরাধীর বাধ্যতামূলকভাবে মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার সংস্থান রাখা হয়েছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং জরিমানার সংস্থান থাকছে। গণধর্ষণের ক্ষেত্রেও ধর্ষণকারীদের আমৃত্যু কারাবাস করতে হবে। বয়স নির্বিশেষে যেকোনো ধর্ষণের মামলাতে একই ধরনের শাস্তির বিধান থাকছে। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে এক মাসের বদলে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। মূল আইনে যেখানে এক বছরের মধ্যে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা ছিল, তা সংশোধন করে এক মাসের মধ্যে করা হবে। মূল আইনে কোনও থানায় ঘটনা নথিভুক্ত করার পর দু’মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলা ছিল। এই সংশোধনীতে তা কমে ২১ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হচ্ছে। যদি কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় পুলিশ ২১ দিনে তদন্ত শেষ করতে পারছে না, আরও ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোন আধিকারিক স্বয়ং ওই ঘটনার তদন্ত করবেন। চার্জ গঠনের এক মাসের মধ্যে ট্রায়াল সম্পূর্ণ করার কথাও বিলে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচারের ঘটনার তদন্তে অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স তৈরীর কথা বলা হয়েছে। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য জেলায় জেলায় বিশেষ আদালত গঠন করারও প্রস্তাব রয়েছে। যার দায়িত্বে থাকবেন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট পদমর্যাদার পুলিশ কর্তারা।












Previous articleরাজ্য বিধানসভায় পেশ ধর্ষণবিরোধী বিল, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারায় বদলের প্রস্তাব
Next articleনামী বেসরকারি স্কুলে কোটি কোটি টাকার তছরুপ! শহর জুড়ে জোর তল্লাশি ইডির