মুখ্যমন্ত্রীর বেনজির সৌজন্য সত্ত্বেও জুনিয়র ডাক্তারদের ‘বায়নায়’ হল না বৈঠক

বৃষ্টির মধ্যে ২ ঘণ্টা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে বেরিয়ে এলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ জানালেন, তোমাদের ছাতা দেওয়া হয়েছে। বসার জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। তোমরা ভিজো না। বৈঠক করতে না চাও এককাপ চা খেয়ে যাও। বেনজির সৌজন্য মুখ্যমন্ত্রীর। তাও গা-জোয়ারি করে বৈঠক না করে ফিরে এলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা।

৩৫ দিনের মাথায় ফের বৈঠকের দোরগোড়ায় গিয়ে ফের জটিলতা। সরাসরি সম্প্রচার বা দুপক্ষের ভিডিও রেকর্ডিং-কোনও কিছুতেই সহমত না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ধর্নামঞ্চে যাওয়ার দিন সন্ধেতেও বৈঠক নিয়ে জট কাটল না। কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বাড়িতে গিয়েও লাইভ স্ট্রিমিং-এর দাবি জানান জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানান নিরাপত্তার কারণে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয়। এর পর দুপক্ষের ভিডিও রেকর্ডিং-এর দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। সেই দাবিও মানা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। ফলে প্রায় দুঘণ্টা বৃষ্টি মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাইরে ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররাও। এক সময়ই বেরিয়ে আসেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ”লক্ষ্মী ভাইবোনেরা বৃষ্টিতে ভিজো না, কথা না বলো চা খেয়ে যাও”।

তাঁর কথায়, ”যদি না-ই আসো বাড়িতে এলে কেন। আমাকে অসম্মান করছ। এর আগেও আমি তিন দিন অপেক্ষা করে বসে থেকেছি। রাজনীতি ভুলে যাও। মানুষের স্বার্থে এসো, কথা বলো। মিনিটস সই করে দেব, আমাদের তরফে একজন সই করবে, তোমাদের তরফেও এক জন সই করবে। বৈঠক না করো, অন্তত এক বার ভিতরে এসে চা খেয়ে যাও।”

কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসকরা ভিডিওগ্রাফির দাবিতে অনড়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন বিষয়। ভিডিও সরকারের তরফে করা হবে। আদালতের অনুমিত নিয়ে সেই ভিডিও জুনিয়র ডাক্তারদের তুলে দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”তোমরা তো মিটিংয়ে আসার আগে বলোনি যে লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে বা ভিডিও রেকর্ডি করতে হবে। তোমাদের চিঠিতে তো লেখা ছিল না। আমরা যে চিঠি দিয়েছিলাম তাতেও লেখা ছিল না। এর আগেও তোমাদের জন্য তিন দিন অপেক্ষা করেছি। আজও দু’ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করালেন আমাকে। আপনারা আমাকে এত অসম্মান কেন করছেন?”

মুখ্যমন্ত্রী বেনোজির সৌজন্যের পরেও বিন্দুমাত্র নমনীয় মনোভাব দেখা যায়নি আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মধ্যে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সদর্থক পদক্ষেপের জন্যেই প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের। ৫টি দাবি নিয়েই শনিবার সন্ধে সাতটায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আসেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ১৫ জনকে বৈঠকে ডাকা হলেও, ৩২জনের প্রতিনিধিদল নিয়ে উপস্থিত হন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সবাইকেই বৈঠকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি ছিল
• চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের ঘটনার দ্রুত বিচার
• দোষীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি
• সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করে তদন্ত
• তথ্য লোপাটের জন্য যাঁরা দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
• স্বাস্থ্যসচিব, ডিএমই, হেল্থ সার্ভিসেসের ডিরেক্টর, কলকাতার পুলিশ কমিশনর বিনীত গোয়েল, ডিসি নর্থ, ডিসি সেন্ট্রাল ইস্তফা

শনিবার, দুপুর ১টা নাগাদ জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না মঞ্চে হঠাৎ উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের কর্মবিরতিতে প্রত্যাহারের আবেদন জানান। এরপরেই জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, তাঁরা আলোচনা করতে চান। আজই আলোচনা হোক। এই আর্জি জানিয়ে ইমেইল করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তার উত্তরে মুখ্যসচিব মেইল করে জানানো হয়, এদিন সন্ধে ৬টায় মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে আসতে পারেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে, ১৫জনের প্রতিনিধিদল আসতে পারেন। তবে, নবান্নের মতো ৩২ জন নিয়েই কালীঘাটে যান আন্দোলনকারীরা সবাইকেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

নবান্নের বৈঠকের আগে লাইভ স্ট্রিমিং-এর দাবিতে অনড় থাকায় বৈঠক ভেস্তে যায়। এদিনও বৈঠকের আগে ফের বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার চান জুনিয়র ডাক্তাররা। রেকর্ডিং হলেও, সেটা দু তরফেই করার দাবি জানানো হয়। কিন্তু প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, তারাই রেকর্ড করবেন। পরে সেটি জুনিয়র ডাক্তারদের দেওয়া হবে। এই নিয়ে প্রাথমিক জটিলতা তৈরি হয়। কারণ, আন্দোলনকারীরা জানান, স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থানে তাঁদের যে সহযোদ্ধারা আছেন, তাঁদেরও জানার অধিকার আছে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের ভিডিও রেকর্ডিং করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এরপর জুনিয়র ডাক্তারদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিটিং-এর মিনিট লেখা হবে। দুই তরফের সই করা, সেই মিনিটস-এর প্রতিলিপি তুলে দেওয়া হবে জুনিয়ার ডাক্তারদের হাতে। এর পরেও ভিডিওগ্রাফির দাবি নিয়ে বায়না করেন আন্দোলনকারীরা। বুঝিয়ে না পেরে শেষ পর্যন্ত আবার বাড়ির ভিতর ঢুকে যান মুখ্যমন্ত্রী। কিছুক্ষণ পারে রণেভঙ্গ দিয়ে ফিরে আসেন জুনিয়াটর ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর বেনজির সৌজন্য, সদর্থক পদক্ষেপের পরেও জুনিয়র ডাক্তারদের গাজোয়ারির ফলে ভেস্তে গেল দ্বিতীয় বৈঠকও।

আরও পড়ুন- অভিনব উদ্যোগ! মিড-ডে মিলে খুদে পড়ুয়াদের পাতে রান্নাপুজোর হরেকরকম খাবার

 

Previous articleঅভিনব উদ্যোগ! মিড-ডে মিলে খুদে পড়ুয়াদের পাতে রান্নাপুজোর হরেকরকম খাবার
Next articleআরজি কর ধর্ষণ-খুন মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার টালা থানার ওসি, গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষও