নিজেদের মূর্তি না বানিয়ে ফ্লাড কন্ট্রোলের টাকা দিলে কাজ হত: বর্ধমান-বাঁকুড়ায় কেন্দ্রকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর

বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে ফের ডিভিসির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগের পাশাপাশি বিরোধী নেতাদেরও নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার, প্রথমে বর্ধমান ও তার পরে বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় যান মুখ্যমন্ত্রী। খতিয়ে দেখেন বন্যা পরিস্থিতি। এমনকী, দুর্গাপুর ব্যারাজের উপর গাড়ি থামিয়ে নেমে দেখেন জল ছাড়ার পরিমাণ। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন অন্য রাজ্যকে বাঁচাতে বাংলাকে ভাসনো হচ্ছে। তীব্র কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “নিজেদের বড় বড় মূর্তি বানিয়ে, বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে টাকা খরচ না করে ফ্লাড কন্ট্রোলের (Flood Control) এক চতুর্থাংশ টাকা যদি আমরা পাই, আমরা কাজ করতে পারি।“এদিন প্রথমে পূর্ব বর্ধমানে গিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক, অরুপ বিশ্বাস, প্রদীপ মজুমদার, স্বপন দেবনাথ, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, রাজ্যের মুখ্যসচিব-সহ অন্যান্য সচিব, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের জনপ্রতিনিধিরা। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রশাসনের এক আধিকারিকরা বাড়িতে বসে না থেকে মাঠে নেমে কাজ করুন। বর্ধমানে দামোদর নদের ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় রীতিমত ক্ষুব্ধ মমতা (Mamata Banerjee)। বন্যা পরিস্থিতিতে সকলকে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার বার্তা দেন তিনি।বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই দু-তিনদিনে আরও বৃষ্টি হবে। যাঁদের জায়গায় জল জমে আছে, আবার যদি জল জমবে ,আবার ডিভিসি যদি জল ছাড়ে তাহলে বিপদ বাড়বে। এই সব জায়গায় বিডিওদের, ডিএম, আইসিদের বলা হয়েছে মানুষকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাজ করবেন। কেউ বাসস্থান ছাড়তে চায় না। বিধায়কদেরও গুরুত্ব দিতে বলেছি।

এরপরেই নাম না করে বিজেপিকে ঠুকে মমতা বলেন, নিজেদের বড় বড় মূর্তি বানিয়ে, বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে টাকা খরচ না করে ফ্লাড কন্ট্রোলের এক চতুর্থাংশ টাকা যদি আমরা পাই, আমরা কাজ করতে পারি। এভাবেই বিজেপিকে বিঁধলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বাংলার একাধিক জেলা। বহুমানুষের ঠাঁই হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। সোমবার দুপুরে বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় ত্রাণ শিবিরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বললেন দুর্গতদের সঙ্গে। নিজে তাঁদের হাতে তুলে দিলেন ত্রাণ সামগ্রী। মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে পেয়ে কেঁদে ফেললেন দুর্গতরা। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন মমতা।

মমতা অভিযোগ করেন, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই নিজেদের বাঁচাতে জল ছেড়ে দেয় বাংলার উপর। ফারাক্কার জলে প্লাবিত হয়। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করার ফলে জলটা ছেড়ে দেয়। মালদা, মুর্শিদাবাদ বিহারের কিছুটা প্লাবিত হয়। বিহার বাঁধ কেটে দিয়ে বাংলায় জল ঢুকিয়ে দেয়। গঙ্গা এ্যাদকশন, ফ্লাড কন্ট্রোল সব দিল্লীর অধীন। আজ পর্যন্ত তারা কোনো কাজ না করার ফলে সব ডুবে যাচ্ছে- অভিযোগ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। জানান, রাজ্যে অনেক ফ্লাড সেন্টার করা হয়েছে। স্কুল ছুটি হয়ে গেলে সেগুলিতে কাজে লাগাতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে ৪০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ডিপিআর তৈরি হচ্ছে। ৩ বছর লাগবে। এটা আমরা করবে। অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। যেখানে জল জমে আছে, সেখানে এসি, টিভি বন্ধ রাখবেন। বিদ্যুতের কাজ হচ্ছে। ডিভিসি নিয়ে আমরা শেয়ার তুলে নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। আমাদের দুজন পদত্যাগ করেছেন। তাদের কিছু জানানো হত না। বাংলার এই বঞ্চনা আমরা মানবো না। এর উত্তর মানুষ দেবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলে যান বড়জোড়ায় একটা দ্বীপ আছে সেখানে যাবো, আজ রাতে দুর্গাপুরে থাকব। কাল বীরভূমে যাব প্রশাসনিক বৈঠক করতে। তাহলেই বন্যা কবলিত জেলাগুলি ঘোরা তার সম্পূর্ণ হবে। বর্ধমান থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার পথে দুর্গাপুর ব্যারাজে দাঁড়িয়ে জল ছাড়ার পরিমাণ দেখেন মুখ্যমন্ত্রী।

ডিভিসিকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার দুর্ভাগ্য়, এখানে এবং অসমে যত বন্যা হয়, অন্য কোথাও তত হয় না। বাংলার অবস্থা নৌকার মতো। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই আমাদের চিন্তা বাড়ে। কারণ নিজেদের বাঁচাতে জল ছেড়ে দেয়। ডিভিসি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও কাজ না করার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর ডুবে যাচ্ছে। ভোটের জন্য যে টাকা খরচ করা হয়, তার একাংশ দিলেও বন্যা আটকাতে পারতাম।“

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ডিভিসি থেকে আমাদের শেয়ার প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। আমাদের দুই প্রতিনিধি পদত্যাগ করেছেন। বাংলার বঞ্চনা মানব না আমি।