বাংলায় জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে মদতদাতা BJP নিজেদের শাসিত রাজ্যে এসমা জারি করে নার্সদের বিক্ষোভ আটকালো। ওড়িশায় (Odissa) সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত স্টাফ নার্সরা ১০ দাবি সামনে রেখে বুধবার থেকে দু’দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন। কিন্তু দুদিন- একদিন নয়, এক ঘণ্টার জন্যও ধর্মঘটে যোগ দিলে পুলিশ (Police) অথবা সেনাবাহিনী পাঠিয়ে বাড়ি থেকে তুলে আনা হবে ফতোয়া জারি করে ওড়িশার বিজেপি সরকার। এসমা লাগু করে স্পষ্ট ভাষায় রাজ্যের সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদি কোনও নার্স আন্দোলনের নামে এক ঘণ্টাও কর্মবিরতি করেন, তাহলে পুলিশ বা সেনাবাহিনী পাঠিয়ে বাড়ি থেকে তুলে এনে কাজে যোগদান করাতে হবে। এসমা অগ্রাহ্য করলে ভবিষ্যতেও আন্দোলনকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা কোথাও সরকারি চাকরি না পান তার ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। অথচ বাংলায় আর জি করের ঘটনাকে সামনে রেখে জুনিয়র ডাক্তাররা প্রায় ৪৪ দিন কর্মবিরতি পালন করলেও এসমা জারি করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রাজনৈতিক মহলের মতে, নিজেদের রাজ্য কড়া বিজেপি বিরোধীশাসিত রাজ্যে নৈরাজ্য মদত দিচ্ছে। তৃণমূলের তরফ থেকে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, এখানে ধৈর্য ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ ওড়িশায় এসমা জারি করে আন্দোলন ভাঙা হয়েছে। আন্দোলনকে সম্মান দেয় বাংলার সরকার। আর ওড়িশায় এসমা জারি করে আন্দোলনের কণ্ঠরোধ হয়।কয়েকমাস আগে হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে পট পরিবর্তন হয়েছে ওড়িশায় (Odissa)। ক্ষমতায় বিজেপি। সেখানে ১০ দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নার্সিং স্টাফরা। তাঁদের দাবির মধ্যে অন্যতম হল চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের স্থায়ীকরণ ও নিয়োগের ক্ষেত্রে আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল। তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন, দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের দাবিগুলি পূরণ না হলে, ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিষেবা একেবারে স্তব্ধ করে দেবেন। কর্মবিরতি পালন করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে জাতীয় জরুরি পরিষেবা আইন বা এসমা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ওড়িশার স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওড়িশার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুকেশ মহালিঙ্গ জানান, নার্সিং স্টাফদের সংগঠনকে আলোচনায় বসার জন্য আহবান করা হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার এটুকু নিশ্চিত ভাবে জানাচ্ছে, স্বাস্থ্য পরিষেবা কোনওভাবেই বিঘ্নিত হবে না।
কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী স্বাস্থ্যপরিষেবার মতো জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পরিষেবা চালু রাখতে জন্য রাজ্য সরকার চাইলেই এসমা জারি করতে পারে। কিন্তু বাংলায় ৪৪ দিন ধরে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি পালন করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আন্দোলনকারীরা যেহেতু এখনও পড়ছেন, তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর জরুরি পরিষেবা আইন লাগু করবেন না। কারণ এই আইনে আন্দোলনকারীদের ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়া রীতিমতো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

কুণাল ঘোষ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও কড়া পদক্ষেপ নেননি। বলেছিলেন, তিনি নিজে আন্দোলন থেকে উঠে আসা নেত্রী, সেই কারণে তিনি এসমা জারি করবেন না। এমনকী সুপ্রিম কোর্টও জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দিতে বলে, কিন্তু কর্মবিরতিতে অনড় থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে আন্দোলনকারীদের মঞ্চ চলে যান। নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেন। কুণালের কথায়, আন্দোলনকে সম্মান দেয় বাংলার সরকার। আর ওড়িশায় এসমা জারি করে আন্দোলনের কণ্ঠরোধ হয়। যে দলের সরকার ওড়িশায় এসমা জারি করে আন্দোলন আটকায় সেই বিজেপি বাংলায় জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে উস্কানি দিয়েছে। এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না।
