ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ডোবাল কংগ্রেসকে (Congress)। কুমারী শৈলজা (Kumari Sailoja) বনাম ভূপেন্দ্র সিং হুডার দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের জেরেই হরিয়ানায় কংগ্রেসের ভরাডুবি। আর সেই সুযোগেই ফের সেখানে সরকার গড়ছে বিজেপি। তারপরেও বিজেপি (BJP) যেভাবে জাঠ অধ্যুষিত রাজ্য হরিয়ানায় (Hariyana) পরপর তিন বার ক্ষমতা দখল করল, তা দেখার পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই অভিমত, হরিয়ানায় বিজেপিকে জিততে পরোক্ষে সাহায্য করেছে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।হরিয়ানা (Hariyana) বিধানসভা ভোটের আগে এই আশঙ্কা করেছিলেন অনেকেই৷ সেই আশঙ্কাই মিলে গেল হুবহু৷ কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সুযোগে হরিয়ানায় আবার সরকার গড়ার সুযোগ পেতে চলেছে গেরুয়া শিবির। অথচ বুথ ফেরত সব সমীক্ষা এমনকী বিজেপির আভ্যন্তরীণ সমীক্ষাও আশঙ্কা করা হয়েছিল হরিয়ানার বিজেপি উড়ে যাবে। দিনের শুরুটা হয়েছিল সেই ভাবেই। কিন্তু বেলা যত বেড়েছে তত দো গিয়েছে, কান ঘেঁষে আসন চলে যাচ্ছে বিজেপির ঝুলিতে। ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে ফোনে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নবাব সিং সাইনিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেসের সান্ত্বনা পুরস্কার কুস্তিগীর অলিম্পিয়ান বিনেশ ফোগত। প্রথমবার রাজনীতির ময়দানে নেমে জুলেনা কেন্দ্র থেকে ৬০০০-র বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে ৩১টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস। এবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কংগ্রেস জিততে পারে ৩৬টি আসনে, বিজেপি জয় পেতে পারে ৪৯টি আসনে৷ এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা হরিয়ানায় বিজেপির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া বহাল থাকলেও কংগ্রেস এবারের ভোটে তার সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কুমারী শৈলজার মতে, “ফলাফল অত্যন্ত হতাশাজনক। আমাদের কর্মীরা এত দিন কাজ করেছেন, আমরা রাহুল গান্ধীর বার্তা নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়েছিলাম কিন্তু ফলাফলের পরে, মনে হচ্ছে তাঁদের সমস্ত প্রচেষ্টা বৃথা গিয়েছে। দলকে এটা দেখতে হবে, দল পর্যালোচনা করবে। এমন ফলাফল আসা উচিত হয়নি। মাঝে মাঝে আমাদের চুপ থাকতে হয় আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে এবং ত্রুটিগুলি নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের দেখতে হবে এমন ফলাফলের জন্য কারা দায়ী”।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিং হুডা নিজে তাঁর আসনটি জিতলেও দলকে ভোট বৈতরণী পার করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ কংগ্রেস সূত্রের দাবি, জাঠ ভোট একত্রিত করতে পারলেই হরিয়ানা বিধানসভা ভোটে জয় পাবে কংগ্রেস, ভূপেন্দ্র সিং হুডার তুলে ধরা এই তত্বের উপরে ভর করে এগোনোর চেষ্টা করেই মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস৷ বিজেপি অজাট ভোট একত্রিত করেছে, একইসঙ্গে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জাঠদের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে৷ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, ভুপেন্দ্র সিং হুডা বা কুমারী শৈলজা কেউই কংগ্রেস হাইকমান্ডকে একথা বোঝাতে পারেননি যে হরিয়ানার মত রাজ্যে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করলে ভালো ফল হতে পারে৷ এই কারণেই আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোট প্রস্তাব খারিজ করেছিল কংগ্রেস হাইকমান্ড৷ অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান দিনের পর দিন হরিয়ানার মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ঘর গুছিয়েছেন৷ আপাত ক্ষুব্ধ প্রভাবশালী বিজেপি নেতা ও রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী অনিল বিজকেও শেষমেষ মাঠে নামিয়েছেন ধর্মেন্দ্র প্রধান৷ সেই জায়গায় প্রভাবশালী হওয়া সত্বেও ভোটের প্রচারে যোগ দেননি কুমারী শৈলজার মত প্রবীণ কংগ্রেস নেত্রী৷