তপন কুমার সামন্তর প্রথম উপন্যাস ‘ধানের শীষে স্বপ্ন আছে নতুন ভোরের’ প্রকাশিত

ধানের শীষে স্বপ্ন আছে নতুন ভোরের।তপন কুমার সামন্তর এই প্রথম উপন্যাসটি বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে প্রকাশিত হল।এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে বাংলার ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেছেন তিনি। ১৯৭৭ এর সেই বামপন্থি সরকার গড়ে ওঠার আগে অবধি সারা বাংলার মানচিত্রকে তিনি তার উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন।ছয় এবং সাত-এর দশকে বাংলার আত্মসামাজিক দশা ঠিক কেমন ছিল, বামপন্থাদের লড়াই এবং মেদিনীপুরের সামাজিক ইতিহাসের কথা প্রকাশ পেয়েছে এই উপন্যাসটিতে।

মেদিনীপুর মানেই স্বাধীনতা সংগ্রামের উর্বর মাটি। সেই মাটির ফসল শুধু ক্ষুদিরাম মাতঙ্গিনীরা নয়, ফসল – হাজার হাজার মেদিনীপুরবাসী, যারা হার-না-মানা লড়াইটা লড়েছে। একটি প্রত্যন্ত গ্রামে সেই লড়াইয়ের গতি প্রকৃতির ছবি আঁকার প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছে সে ইতিহাস তুলে ধরার। গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষে ঘটে যাওয়া জালিয়ানওয়ালাবাগ ঝড় তুলেছিল সারা দেশে। শ’য়ে শ’য়ে কিশোর যুক্ত হয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে। চোরিচৌরার প্রশ্নে গান্ধিজীর ভূমিকা ঘিরে কংগ্রেস সম্পর্কে সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়েছিল বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী। মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল অহিংস পথ নিয়ে।
গত শতাব্দীর দু’য়ের দশকের শেষদিকে দেশের বহু জায়গায় গড়ে ওঠে কমিউনিস্ট সার্কেল। কলকাতাও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুতোভয় কিন্তু অহিংস পথ নিয়ে সংশয়ী যুবকদের অনেকেই যুক্ত হয়ে যায় সেই সার্কেলের সঙ্গে। মেদিনীপুরের কেউ কেউ সে সার্কেল এসে দিশা পায় আগামীর। যারা দিশা পায় তারা কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে একদিকে যেমন ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে যুক্ত হয়ে মেদিনীপুরে থানা আক্রমণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে অন্যদিকে তেমনি তেতাল্লিশের মন্বন্তরে লঙ্গরখানা চালানো থেকে তেভাগার লড়াই হয়ে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ট্রাম-ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন, চুয়ান্ন’র কালজয়ী শিক্ষকদের লড়াই, বেনামী জমি উদ্ধারসহ রাজ্যের বহু লড়াইয়ে যুক্ত হয়ে যায়। তাদেরই কেউ কেউ নিজেকে কমিউনিস্ট হিসাবে গড়ে তোলার সংগ্রামে আত্ম অনুশীলন করে যায় আজীবন।
কিন্তু তারপরও কিছু সংশয়, সংকট, বিতর্ক থেকেই যায় এই মতাদর্শ নিয়ে। উত্তরণের উপায় খোঁজে মানুষ। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে ওসব ভাবে ক’জন? তারা ভাবে দু গ্রাস ভাতের কথা। কথা বলে নিজেদের ভাষায়। লড়ে অন্ধবিশ্বাস, স্বার্থপরতার সঙ্গেও। এভাবেই সরল মানুষগুলো অর্জন করে আন্দোলনের বর্ষামুখ। সেই তরঙ্গে ভেসে বেশিরভাগ জীবন গরমভাতের স্বপ্নে বিভোর হয়েই জরুরি অবস্থার বিভীষিকাময় রাত্রির অবসান ঘটায়। নতুন ভোরে তাদের হৃদয়ে লাখো স্বপ্ন চারিয়ে যায় সাতাত্তরের ছাব্বিশে জুনে। এ গল্প এসবেরই।
লেখক তপন কুমার সামন্তর জন্ম ১৯৫৮ সালে। বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী হরেন্দ্রনাথ সামন্ত। তপনবাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীরবিদ্যায় স্নাতকোত্তর হয়ে প্রায় ৩৫ বছরের বেশি শিক্ষকতা করেছেন। ২২ বছর মূর্শিদাবাদের ডোমকল অবতরন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সুনাম ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করেছেন। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে সাড়ে তিন দশক ধরে যুক্ত তিনি।
লেখার সাথে যুক্ত ছোট বেলা থেকেই। বহু বছর ধরেই সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন। একাধিক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। মূলত বিজ্ঞান নিয়ে বেশি লেখালিখি করেছেন তিনি।