দুজনই ছিলেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা, রাজ্যের মন্ত্রী। কিন্তু একসময় দল ছাড়েন দুজনেই। একজন তৃণমূলে ফিরতে পারলেও, আরেকজন এখনও দুয়ারে দাঁড়িয়ে। সেই হেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajiv Bandopadhyay) এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় (Shobhan Chatterjee) ভাইফোঁটা দিন ফোঁটা নিলেন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Bandopadhyay) বাড়ি গিয়ে। শোভনের সঙ্গে অবশ্যই ছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Boishakhi Bandopadhyay)। ফোঁটা নিয়ে বেরিয়ে রাজীবের উপলব্ধি, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া ভুল ছিল। আর শোভন জানালেন, রাজনীতির ময়দানে আবার কবে সক্রিয় হচ্ছেন সেটা সাংবাদিকদের নিজেই জানাবেন।তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভাইফোঁটায় প্রতি বছর ডাক পান তৃণমূলের নেতারা। তাঁদের ফোঁটা দেন দলনেত্রী। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম নয়। রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতে আসেন সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, জাভেদ খান, অরূপ বিশ্বাস, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা। দেখা গেল কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেদের টাইলস স্টেটমেন্ট বজায় রেখে রংমিলিয়ে গোলাপি পোশাক পড়ে এসেছিলেন দুজনেই।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস নয়েক বিজেপিতে ছিলেন। বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থীও হয়েছিলেন। কিন্তু পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থীর কাছে। ওই বছরই অক্টোবরে ত্রিপুরার আগরতলায় এক সভায় তাঁর হাতে ফের তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ভাইফোঁটা নিয়ে বেরিয়ে রাজীব বলেন, “দিদি প্রত্যেক বছর ভাইদের ডাকেন। দিদির এই যে ভাইফোঁটা, এর কোনও তুলনা নেই। প্রত্যেক বছর এই দিনটার জন্য মুখিয়ে থাকি- কখন দিদির কাছে যাব। আর ফোঁটা নেব।” এরপরে তিনি স্বীকার করে নেন বিজেপিতে যাওয়া তার ভুল ছিল। বলেন, “প্রত্যেকের জীবনেই কখনও না কখনও অঘটন ঘটে। সেরকম আমার জীবনে কয়েকটা মাস দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তাঁর জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি ক্ষমাও চেয়েছি। বারবার বলেছি, সেটা আমার ভুল ছিল। আর মানুষ যদি ভুলটাকে উপলব্ধি করে সঠিক পথে চলতে পারে, সেটাই আসল মানুষের পরিচয়।”
এর আগেও ভাইফোঁটায় কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে ফোঁটা নিতে দেখা গিয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে (Shobhan Chatterjee)। গিয়েছিলেন বৈশাখীও। এবারও দুজনে যান মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। ফোঁটা নিয়ে বেরিয়ে শোভন জানান, “দিদির আশীর্বাদটাই আমার কাছে বড় বিষয়। এই আশীর্বাদকে পাথেয় করেই পথচলা। এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করি।” সক্রিয় রাজনীতির ময়দানে কবে দেখা যাবে তাঁকে? উত্তরে প্রাক্তন মেয়র জানান, “যেদিন সক্রিয় হব, সেদিন সাংবাদিকদের বুমের সামনে জানাব।”

তবে বৈশাখীর কথায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দূরত্ব নেই। তিনি বলেন, “অনেকেই বলেন যে দূরত্ব নাকি মানুষের আবেগকে কমিয়ে দেয়। কিন্তু, শোভন ও দিদির যে সুন্দর সম্পর্ক, এটা যখন দেখি তখন মনে হয় দূরত্ব কখনই তা করতে পারে না।” শোভনের ফেরা নিয়ে বৈশাখীর তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত, “দিদির যখন মনে হবে, সাধারণ মানুষের জন্য ওঁকে সক্রিয় করা দরকার, তখন ওঁকে সক্রিয় করবেন। তবে আর বোধহয় বেশিদিনের অপেক্ষা নয়।”

এদিন একেবারে কাজ করা ধুতি-পাঞ্জাবিতে সেজে কালীঘাটের মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে ফোঁটা নিতে এসেছিলেন কলকাতার বর্তমান মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিন রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি।
