বাংলাদেশের সংবিধানে হাসিনার আমলের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দ বাতিলে ইউনুস সরকার তৎপর

২০১১ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতি ফিরিয়ে আনাসহ আরও যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেটিও আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং এই সংশোধনীটিও শেষ পর্যন্ত অবৈধ ঘোষণা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে

সংবিধান সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে বাতিলশব্দটিও এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। কেননা সংবিধানে এখন পর্যন্ত যে ১ বার সংশোধনী আনা হয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের সংবিধানে আর ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দের প্রয়োজন নেই। বৃহস্পতিবার মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ হাই কোর্টে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী বাতিলের জন্য সওয়াল করার সময় এই বিষয়ে এমনই জানিয়েছে।২০১১ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতি ফিরিয়ে আনাসহ আরও যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেটিও আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং এই সংশোধনীটিও শেষ পর্যন্ত অবৈধ ঘোষণা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশিস রায়চৌধুরীর বেঞ্চে সওয়ালের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে তুলে ধরেছেন ‘মৌলিক অধিকারের’ প্রশ্ন। কারণ, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় ওই সংশোধনীর মাধ্যমেই ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সংসদের নির্বাচন আয়োজন’ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছিল।

নতুন করে সংবিধান লেখার সাংবিধানিক এক্তিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আবার পরবর্তী জাতীয় সংসদও নতুন করে সংবিধান লিখতে পারবে না। বরং দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের সম্মতি থাকলে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামানের মন্তব্য, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটা বাদ দেওয়া হোক।তার যুক্তি, এই দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। আগে আল্লার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা যে ভাবে আগে ছিল, সে ভাবেই ফেরানেো হোক।সংবিধানে এ যাবৎ যে ১৭ বার সংশোধনী আনা হয়েছে, তার মধ্যে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, ত্রয়োদশ এবং সবশেষ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

প্রসঙ্গত, হাসিনার জমানায় ২০১১ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়েছিল। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের জমানায় ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা’র উল্লেখ থাকলেও পরবর্তী সময় জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল হুসেন মহম্মদ এরশাদের আমলে বাদ দেওয়া হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে ওই চারটি বিষয় ‘মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসাবে পুনর্বহাল করা হয়েছিল।

3.
4.
5.
6.
7.
8.
9.
10.