Sunday, November 9, 2025

পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের কৃতিত্ব, মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে জোড়া খুনের কিনারা

Date:

Share post:

পুলিশ যাওয়ার আগে পর্যন্ত বর্ধমানের মিঠাপুকুরের পূর্ত দফতরের আবাসনের সামন্ত পরিবারের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারেননি অন্য আবাসিকরা। এমনকী স্থানীয়দের দাবি, ওই পরিবারের চারজন সদস্যই স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় যাতায়াত করেছেন। দোকান-বাজার করেছেন। প্রত্যেকেরই একটাই প্রশ্ন, বৃদ্ধ দম্পতিকে ‘খুন করার’ পরে ওই পরিবার কীভাবে ঠান্ডা মাথায় থেকেছেন? যদিও সামন্ত পরিবারের কর্তা, পূর্ত দফতরের বর্ধমান ডিভিশনের চতুর্থ শ্রেণি কর্মী প্রতাপ সামন্তর দাবি, ওই বৃদ্ধ দম্পতি খুনের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। বরং তিনিও অন্যদের মতো ধৃতদের শান্ত আচরণে অবাকই হচ্ছেন।

মঙ্গলবার ভাতারের রবীন্দ্রপল্লি থেকে বৃদ্ধ দম্পতি, অভিজিৎ যশ (৭২) ও ছবিরানি যশ (৬৫)-র পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশের দাবি, শ্বাসরোধ করে শনিবার সকালে ওই দম্পতিকে খুন করা হয়েছে। ওই খুনে জড়িত থাকার সন্দেহে প্রতাপের স্ত্রী মহুয়া সামন্ত ওরফে কেয়া, তার দুই ছেলে অনিকেত ও অরিত্রকে পুলিশ মঙ্গলবার রাতেই গ্রেফতার করেছে। বর্ধমান আদালতে যাওয়ার পথে মহুয়ার দাবি, এটা একটা অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। সে জন্যেই স্বাভাবিক ছিলাম। আমার স্বামীও কিছু জানত না। আবাসিকদের দাবি, বাজারে মহুয়ার কয়েক লক্ষ টাকার দেনা ছিল। ভাতারের নর্জা মোড়ে হোটেল খুলেছিলেন মহুয়া, সেখানেও তার দেনা ছিল। পাওনাদাররা প্রতিদিন বাড়িতে ‘হানা’ দিত।

জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে বছর দশেক আগে বর্ধমান পূর্ত দফতরে বদলি হয়ে আসেন প্রতাপ। সে সময় থেকেই মিঠাপুকুরের পূর্ত দফতরের একটি আবাসনের এক তলায় থাকতেন। সেখানকার আবাসিকদের দাবি, শনিবার সকালে মা ও দুই ছেলেকে তারা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের দিকে যেতে দেখেছিলেন। আবার সন্ধের সময় আবাসনের মাঠেও তাদের দেখা যায়। তাদের দাবি, অনিকেত মালদার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিভিল বিভাগের আর ছোট ছেলে অরিত্র হুগলির আদি সপ্তগ্রামে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ছাত্র। দু’জনেই হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন। সে জন্যে তারা ভেবেছিলেন, ছেলেদের পড়ার জন্যেই তারা কোথাও গিয়েছিলেন।

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত প্রামাণিকের দাবি, তার সঙ্গেও ওই মহিলার রাস্তায় দেখা হয়েছিল। কুশল বিনিময়ও হয়। কিন্তু তাকে দেখে অন্য কিছু মনে হয়নি। এলাকার একাংশের দাবি, অনিকেতকে রাস্তায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। মিঠাপুকুর মোড় থেকে চপও কিনে নিয়ে এসেছেন। মহুয়া ও অরিত্রকে রিকশা করে ঘুরতে দেখা গিয়েছে, সোনার দোকানেও তারা গিয়েছিলেন। আবার গোলাপবাগ মোড়ে নতুন একটি বহুজাতিক সংস্থার দোকানেও দেখা গিয়েছে।

মনোবিদ সপ্তর্ষি অধিকারী বলেন, ওঁরা আসলে মানসিক-বিকারগ্রস্ত ছিলেন। ছোট ছোট ঘটনার মাধ্যমে তাদের চরিত্র ধরা যায়, কিন্তু আমরা সেই সব ঘটনা ধর্তব্যের মধ্যে আনি না। বড় কোনও ঘটনার পরে বোঝা যায়। সে কারণেই বড় ঘটনা ঘটিয়ে দেওয়ার পরেও ওদের মধ্যে তাপউত্তাপ থাকে না। এ ক্ষেত্রেও সেই ঘটনাই ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।

 

spot_img

Related articles

বেঁচে থাকলে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত! পুরুলিয়ার সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ দেবাংশুর

ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বেঁচে নেই। নইলে বিজেপি রবীন্দ্রনাথকে রোহিঙ্গা ও নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত। শনিবার পুরুলিয়া শহরের...

টাকা পেয়েও কাজে দেরি! ‘বাংলার বাড়ি’ নিয়ে কড়া প্রশাসন, রিপোর্ট চাইল নবান্ন

প্রথম দফায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার পরও বহু উপভোক্তা এখনও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের কাজ শুরু করেননি।...

ঝুলনের চোখে বাংলার সেরা ক্রিকেটার রিচা, মহিলা ক্রিকেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সৌরভ

বাংলার বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র ক্রিকেট তারকা রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন...

সৌরভ ছাড়া অন্য কারও ICC সভাপতি থাকার কথা নয়: বললেন ‘ঠোঁটকাটা’ মমতা

ছিল বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শনিবার ইডেনে সেই অনুষ্ঠানে বোমা ফাটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের...