
ও আমার
ছোট্ট বন্ধুরা শোনো
আমার একটা কথা শোনো
তোমরা যেন বুড়ো হয়ো না ।
বয়েস বাড়ে বাড়ুক
তবু মনের বয়েস
বাড়তে দিও না ।

শরীরের বয়স তো বাড়বেই । এ তো অমোঘ , অপ্রতিরোধ্য , অনিবার্য । প্রকৃতির নিয়ম । কিন্তু মনের বয়স বাড়তে দেবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার । বাড়তে দিলেই সব শেষ । কে না জানে মনটাকে তাজা রাখতে পারলে শরীরের বয়স একটা সংখ্যামাত্র । মানবসভ্যতার ইতিহাস বলছে , অধিকাংশ মানুষের মনগুলো বুড়ো হয় আগে , তাই বার্ধক্য দেহকে গ্রাস করে দ্রুত । মন ভেঙে গেলে বার্ধক্যজনিত বিষন্নতা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় । শারীরিক বাধা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র মনের জোরে বিশ্বজয়ী হয়েছেন অনেক কৃতি মানুষ । আবার বহু সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র মনের আনন্দে শতায়ু হয়েছেন । শারীরিক সুস্থতার অনেকটাই মনের ওপর নির্ভরশীল । তাই বোধহয় সর্বাবস্থায় সদানন্দ থাকার উপদেশ দিয়ে গেছেন পরম পুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ । বয়স যে সত্যিই একটা সংখ্যা ছাড়া কিছু নয় , তার ভুরিভুরি দৃষ্টান্ত রয়েছে এ মহাবিশ্বে । বিখ্যাত লেখক লিও তলস্তয় সাইকেল চালানো শিখেছিলেন ৬৭ বছর বয়সে । স্বনামধন্য পাবলো পিকাসো বিয়ে করেছিলেন ৭৬ বছর বয়সে !
এই আমার কথাই ধরো
দেখতে আমি বুড়ো
মাথায় পাকা চুলের বোঝা
তবু নইকো বুড়ো আমি
মনটা আমার তাজা
তাই তোমাদের বলে রাখি ভাই
মনের বয়েস বাড়তে দিও না।

দু্ঃখ ও ব্যথাগুলোকে আটলান্টিক মহাসাগরে ছুঁড়ে ফেলতে পারলেই মনের বয়স ধরে রাখা যায় । কবি প্রশ্ন রেখে গেছেন , ‘ কোন বয়সে থমকে গেলে সু্শ্রী দেখায় ‘ ! এখানে এটাই বলার যে , সুশ্রী না দেখালেও কোনো ক্ষতি নেই , কিন্তু মনের সৌন্দর্য যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় । মন ভালো তো সব ভালো । ডোপামিন , যাকে বলে আনন্দ হরমোন , বয়সকে বেঁধে রাখার ক্ষমতা ধরে । মনের জোরেই তো ‘ পঙ্গুং লঙ্ঘতি গিরিম্ । মনের জোর না থাকলে ৯০ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার পেতেন না লিওনিদ হুরউইজ । ইনিই সবচেয়ে বেশি বয়সে নোবেল পাওয়া মানুষ ।

প্রতি বছর জন্মদিনে
একটি বছর বয়েস বাড়ে
নতুন আশায় বুক বেঁধে ভাই
মনটা রেখো সবুজ করে ।

মোট কথা , হাল ছাড়া চলবে না কোনো অবস্থাতেই । বয়স হয়েছে , অতএব এবার থামতে হবে , রণে ভঙ্গ দেওয়াই ভালো , এসব অবান্তর ভাবনাগুলোকে আমল দেওয়া চলবে না মোটেও । মনে রাখতে হবে , মন নেতিবাচক হয়ে উঠলে তবেই জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে পড়ে মানুষ । সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্ট জয় করেন ইউকিরো মুইরা , ৮৫ বছর বয়সে , ভাবা যায় !

তোমরা বুড়ো হয়েও
খোশমেজাজে থেকো
মনটাকে ভাই সবাই
চাঙ্গা করে রেখো
আনন্দে প্রাণ ভরে নিও ভাই
মনের বয়েস বাড়তে দিও না।

একবার না পারিলে হাল ছেড়ে কাশীবাসী হওয়ার দরকার নেই । কত কি দেখার , কত কি জানার রয়েছে বাকি । নয়ন মেলে জগতের বাহার দেখতে চাইলে মন খুলে বাঁচতে হবে সবার আগে । ৮৫ বছর বয়সে অস্কার জয়ী হন ইমানুয়েল রিভা । ৮৮ বছর বয়সে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ডরিস লেসিং ।মনে রাখতে হবে , জীবনটা কোনো রেস নয় , একটা জার্নি । এর পায়ে পায়ে , পরতে পরতে বিস্ময় । এখানে সফলতার মার্কশিট বলে কিছু নেই । তা যদি হতো , তাহলে আমাদের পৃথিবী ভ্যান গঘ , বিল গেটস কিংবা মার্ক জুকারবার্গ প্রমুখ কাউকেই পেতো না ।

আরও পড়ুন- ফিরে দেখা: চব্বিশের বিনোদনের ফ্ল্যাশব্যাক সফর

_

_

_
