ট্রাম্পের চুক্তি প্রত্যাখ্যান! জেলেনস্কির ‘সাহস’ এক ছাতায় আনল মার্কিন-বিক্ষুব্ধদের

এমানুয়েল ম্যাঁক্রো (Emmanuel Macron), পর্তুগালের (Portugal), স্পেনের (Spain) রাষ্ট্রপতি থেকে আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে ইউক্রেনের (Ukrain)

হোয়াইট হাউসে বসে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (Donald Trump) প্রত্যাখ্যানের নজির সাম্প্রতিক অতীতে কতজন দেশনেতা রেখে আসতে পেরেছেন তা খুঁজতে দূরবীন দরকার হয় না। যেখানে দ্বিতীয়বার মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদে ট্রাম্পের শপথের পরে একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতাদের হোয়াইট হাউসে গিয়ে মাথা নত করতেই দেখা গিয়েছে। সেখানে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ইউক্রেন রাষ্ট্রপতি ভলোদাইমির জেলেনস্কিই (Volodyসবী াতালেকবব) একমাত্র ব্যতিক্রম। দেশের স্বার্থ রাশিয়ার যুদ্ধ-বিরতির প্রতিশ্রুতির বদলে আমেরিকার হাতে তিনি তুলে দিয়ে আসেননি। তাঁর সাহসিকতার ভিডিও গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পরই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তাবড় দেশগুলি। কার্যত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে জেলেনস্কির পক্ষে দাঁড়ানো নিয়ে ইউরোপের যে দেশগুলির মধ্যে বিন্দুমাত্রও দ্বিধা ছিল, তা যেন কেটে গেল জেলেনস্কির পদক্ষেপে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে ঘুরিয়ে শর্ত দিয়েছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। গোটা বিশ্বে ইউএসএইড বন্ধ করে দেওয়া ট্রাম্প প্রশাসন যে ইউক্রেনে খয়রাতির পথে যাবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিল। ফলে ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজ চুক্তি করে তার বদলে রাশিয়াকে ধমকে যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পথে হেঁটেছিলেন ট্রাম্প ও তাঁর উপরাষ্ট্রপতি জে ডি ভান্স। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ওবামা বা বাইডেনকে শ্রদ্ধা না করলেও ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পকে শ্রদ্ধা করেন। কার্যত এই উক্তির পরেই ব্যাঙ্গাত্মক মুখভঙ্গি করে জেলেনস্কি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে তিনি বিশ্বাস করেন না। মিডিয়ার সামনে প্রকাশ্যে আমেরিকার যুদ্ধ-বিরতির প্রতিশ্রুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ভয় পাননি। বাধ্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মাথা গরম করে অশ্রাব্য বক্তব্য পেশ করতে।

এরপরই একের পর এক ইউরোপের দেশগুলি পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে জেলেনস্কির। ফরাসী রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাঁক্রো (Emmanuel Macron), পর্তুগালের (Portugal), স্পেনের (Spain) রাষ্ট্রপতি থেকে আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে ইউক্রেনের (Ukraine)। সেই সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে আসা দেশগুলি প্রত্যেকেই আমেরিকার বৈঠকের ফলাফলের পরে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কার্যত, অর্থনৈতিক কারণে সম্প্রতি ইউরোপের একাধিক দেশ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থ সাহায্য আর দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিল। এই বৈঠকের পরে সেই সব দেশও ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রশ্ন উঠেছিল ইউক্রেনকে যুদ্ধে সাহায্য করা নিয়ে। তবে যেখানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (European Union) জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছে, সেখানে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। শনিবারই জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনকে (Ukraine) ধার দিতে সম্মত হয় ব্রিটেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা আরও মজবুত করার কাজে সেই অর্থ খরচ হবে বলেও জেলেনস্কি জানান। অন্যদিকে ইউক্রেনের হাতে থাকা রাশিয়ার সম্পত্তি বিক্রি করে সেই ধার শোধ করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

আমেরিকার ক্ষমতায় আসার পরই একের পর এক ইইউ (EU) বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে বিশ্বের একাধিক দেশের উপর শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর চোখ রাঙানিতে ভয় পেয়ে অনেক দেশ নিজেদের অবস্থান থেকে সরেও এসেছে। কিন্তু ব্যতিক্রমী জেলেনস্কিকে দেখে আমেরিকার কাছে মাথা নোয়ানো দেশগুলিও যেন মাথা তোলার সাহস পেয়েছে। ইউরোপের একাধিক দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের পাশাপাশি ইউক্রেনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কানাডার (Canada) প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।