‘তিমিদের গান’, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

তিমি মাছ গান গায় ? কেমন সে গান ? খুব কি সুরেলা ?মানুষের মতো গান গাইতে পারে তিমিরা ? সে গান কি তিমির- বিলাসী , নাকি তিমির বিনাশী ! তারা কি একা একা গান গায় , নাকি কোরাস-এ ? সুর তো থাকেই , কিন্তু বাণী ? মানে , গানের কথা ? কী বার্তা দিতে চায় তিমিরা তাদের গানে গানে ? তিমির হননের বার্তা বুঝি !
আসলে তিমি মাছেরা নিজেদের অনুভূতি বোঝাতে বিভিন্ন ধরনের শব্দ ব্যবহার করে । সঙ্কেত দেয় । পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য সেইসব শব্দ বা সঙ্কেত ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ । জলের গভীরে তাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলির ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকার কারণেই শব্দসঙ্কেত এতো জরুরি হয়ে পড়ে ।

তিমি শিকারী ক্যাপ্টেন wm ১৮৮১ সালে জাপান সাগরে ব্রিগেডিয়ার এলিজায় থাকাকালীন এইচ কেলি প্রথম ব্যক্তি , যিনি তিমি মাছের গান গাওয়া ব্যাপারটা চিনতে পারেন । তিমি ভোকালাইজেশন , অর্থাৎ তিমিদের দ্বারা ব্যবহৃত একটি প্রক্রিয়া , যা যোগাযোগ এবং তাদের পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করে এমন বেশ কয়েকটি ভোকাল ধ্বনি তৈরি করে ।

তিমিদের কণ্ঠস্বরের মধ্যে ক্লিক , শিস , ঘর্ষণ , চিৎকার ,হাহাকার এবং স্পন্দিত ডাক অন্তর্ভূক্ত । গবেষণায় দেখা গেছে তিমিদের কণ্ঠস্বরের পিচ পরিবর্তিত হয় নানা প্রাকৃতিক কারণে । যদিও জীবিত গান গাওয়া তিমির অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর পর্যবেক্ষণ মূলত অসম্ভব হলেও গবেষকেরা নিশ্চিত যে , তিমিরা তাদের গলা ও বুকের পেশি সঙ্কুচিত করে শব্দ তৈরি করে , যা তাদের ফুসফুস থেকে বাতাসকে ইউফোল্ডের মধ্য দিয়ে জোর করে পাঠায় , যার ফলে এটি কম্পিত হয় । শব্দতরঙ্গ তৈরি করে ।

আর্কটিক অঞ্চলে তিমিদের গান শোনা যায় । হাম্পব্যাক তিমিরা দীর্ঘসময় ধরে গান গায় । তাদের গানের মাধ্যমে তারা তাদের সঙ্গীদের আকৃষ্ট করে এবং অন্যান্য তিমিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। গবেষণায় জানা যায় , তিমিদের গান ভীষণ মধুর হয়ে ওঠে তাদের উদরপূর্তি অর্থাৎ খাওয়াদাওয়ার পর । পেটভরে সুস্বাদু খাবার খাওয়ার পর মন ভালো থাকে সব প্রাণীরই । তিমিরাও এর বাইরে নয় । সংবাদ মাধ্যম ‘ দ্য কনভারসেশন ‘ সম্প্রতি এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে । ছয় বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর পূর্বাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের উপকুলে এই গবেষণা চালানো হয়েছে । তাতে বলা হয়েছে , তিমিদের বাসস্থানের বদল হলে তার আভাস পাওয়া যায় তাদের গানে ।

প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর পূর্বাঞ্চলে তিমিরা তাদের মনোমতো খাবার পায় বিস্তর। সেখান থেকে তারা বংশবিস্তারের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় দীর্ঘপথ । এই দীর্ঘপথে তারা প্রায় কিছুই খায় না । তাই যাত্রার আগে তারা পেটপুরে খেয়ে নেয় । এই খাবার থেকে পাওয়া শক্তিই বংশবিস্তারে সাহায্য করে । দূরে গিয়ে তারা সন্তানের জন্ম দেয় , লালন পালন করে। আবার তারা গ্রীষ্মে অথবা বসন্তে ফিরে আসে নিজস্ব পুরোনো ঠিকানায় ।

তিমিদের রয়েছে নানা প্রজাতি । গবেষণায় তিন ধরনের তিমিদের গানের তথ্য পাওয়া গেছে । সেগুলো হলো , নীল তিমি , ফিন তিমি এবং হাম্পব্যাক তিমি । ভরা পেটে তিমিদের দল প্রাণখুলে গান গায় , এটা দেখা গেছে গবেষণায় । খাবারের সঙ্কট থাকলে বা তীব্র তাপদাহে তাদের গান স্তিমিত হয়ে থাকে । অর্থাৎ পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাব সরাসরি তাদের গানের সঙ্গে জড়িত ।
অ্যাংকোভি মাছ তিমিদের খুব পছন্দ । দেখা গেছে , এই পছন্দের মাছেদের এলাকায় থাকলে খুব গান গায় তারা ।সকল তিমিরই একটি স্বরযন্ত্র থাকে । তবে শুধুমাত্র বেলিন তিমি স্বরযন্ত্রকে কণ্ঠস্বর অঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করে । আবার এর বিপরীতে , দাঁতওয়ালা তিমি তাদের নাকের পথ দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করে যোগাযোগ স্থাপন করে । সুন্দর গান যেমন গায় তিমিরা , তেমনই ভয়ঙ্কর গানও গায় । পিচের ওঠানামা এবং স্বরগ্রামের পরিবর্তন এদের গানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় । বেলিন তিমির গান সময় ও পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে । ডুবে না গিয়ে জলের নিচে গান গাওয়া এই বেলিন তিমিদের বিশেষত্ব ।

১৯৬০-এর দশকে ডুবোজাহাজের গতিবিধি শনাক্ত করার জন্য জলের নিচে মাইক্রোফোন ব্যবহার করে হাম্পব্যাক তিমিদের গান রেকর্ড করা হতো ।

আরও পড়ুন- পূর্ব মেদিনীপুরে ১২টি আসন জয়ের চ্যালেঞ্জ অভিষেকের! দিলেন কড়া বার্তা

_

 

_

 

_

 

_