দলের অসময়ে, নেত্রীর অসম্মানেও মৌনব্রত অবলম্বন করছেন ছাত্র-যুব নেতা-নেত্রীরা। যুদ্ধের সময় কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় গর্জে উঠছেন না, কেন আন্দোলনে নামছেন না? দলের নেতা-নেত্রীদের সেই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে এবার সরব হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের আইটি সেলের চেয়ারম্যান দেবাংশু ভট্টাচার্য। ফেসবুক পোস্টে তাঁর সাফ কথা, দল আপনাকে কঠিন সময়ে দেখেছে, এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দলের প্রয়োজনের সময় আপনারা ময়দানে থাকেন না। তাঁর প্রশ্ন, আপনারা কেন যুদ্ধের সময় চুপ থাকেন? আপনারা কেন লড়াইয়ের সময় পড়ে পড়ে ঘুমোন? অসময়ে কোথায় হারিয়ে যান? এলাকায় একটা মিছিল বার করেন না কেন? সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোষ্ট করেন না কেন?
দেবাংশু বলেন, জনপ্রতিনিধি এবং পদাধিকারীদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে নেত্রীর অসম্মানের সময় অন্তত মুখ খুলুন। এই নেত্রী এবং দলের অনুমোদনেই আপনি, আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি। আজ কেউ নির্বাচিত সদস্য, কেউ বা বড় পদের অধিকারী। এই নেত্রীর জন্যেই আজ আমাকে, আপনাকে লোক চিনেছে, জিতিয়েছে।
তাঁর কথায়, অনুষ্ঠানের সময় তো মঞ্চে ইয়া বড় বড় ফুলের বুকে আর লম্বা লম্বা উত্তরীয় গলায় ঝোলাতে দুবার ভাবেন না! পদের দাবি জানানোর সময় তো গলার জোরে গগন ভেদ করার জোগাড় হয়.. কিন্তু যুদ্ধের সময়? মৌনব্রত? সব ইস্যুতে দল কিংবা মন্ত্রীরা বলে দেবে, তারপর নামতে হবে? প্রতিবার উপর থেকে আসা কর্মসূচির অপেক্ষা করতে হবে? নেত্রীকে অসম্মান করলে গায়ে জ্বালা ধরে না? তখনও নির্দেশ আসার অপেক্ষা করতে হয়? নিজে থেকে একটা মিছিল কিংবা একটা পথসভা করলে কি দল আপনাকে তাড়িয়ে দেবে? পার্টি অফিসগুলোতে যে শতশত চামচাদের নিয়ে বসে থাকেন, যাদেরকে দিয়ে শুধুমাত্র নিজের সঙ্গে সেলফি কিংবা আপনার ড্রেন উদ্বোধনের ছবি পোষ্ট করান, এসব ইস্যুতে তাদের দিয়ে একটা করে ফেসবুক, টুইটারে পোষ্ট তো করাতে পারেন অন্তত! পারেন না?
দেবাংশু ফেসবুক পোস্টে আরও লেখেন, আমরা কজনই লড়ব শুধু? আমরা কজনই মুখ খুলব প্রতিবার? আমরাই গালাগাল খাব? আমাদেরও তো পরিবার আছে, বাড়িতে বুড়ো মা-বাবা আছে। আমরাও তো গা বাঁচিয়ে চলতে পারি! কই, পালিয়ে যাই না তো! আপনারা পালান কেন? সিনিয়র মন্ত্রীরা হাজার একটা কাজের মাঝে ব্যস্ত থাকেন। তারা তাদের সুযোগ-সুবিধা মত বলেন বা করেন মাঝে মাঝে। কিন্তু আপনারা? গা বাঁচিয়েই যদি চলবেন তবে পঞ্চায়েতে, পুরসভায়, বিধানসভায়, লোকসভায় দাঁড়িয়েছিলেন কেন?
দেবাংশুর স্পষ্ট কথা, আমায় অনেক ভরসা করে নেত্রী আর অভিষেকদা এই জায়গা দিয়েছেন। প্রথমে কনিষ্ঠতম মুখপাত্র, তারপর রাজ্যের কনিষ্ঠতম যুবর সাধারণ সম্পাদক, তারপর আইটি ইনচার্জ এবং ফাইনালি কনিষ্ঠতম লোকসভার প্রার্থী। এই মানুষগুলো আমায় রাস্তার ধার থেকে কুড়িয়ে তুলে এনে ফুলদানিতে জায়গা দিয়েছেন। যুদ্ধের সময় নীরব থাকা কিংবা গা বাঁচিয়ে চলা আমার কাছে তাদের ভরসার সাথে বেইমানি করার শামিল। আমি পারি না। ২১-এ পারিনি, ২৪-এ পারিনি, অভিষেকদাকে বারবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির হেনস্থার সময় পারিনি, আরজি করের সময়ে পারিনি, যাদবপুরের সময়ে পারিনি, অক্সফোর্ডের সময়েও পারিনি। ধড়ে প্রাণ আর দেহে রক্ত থাকতে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার বদলে গদির পালঙ্কে পাশ ফিরে শুয়ে সময়ের সাথে ‘অসময়’ কেটে যাওয়ার অপেক্ষা করতে পারবও না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ধন্যবাদ জানাই আমাদের আইটি সেলের প্রত্যেক সদস্য-সহ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রত্যেক কর্মীকে, যারা এই প্রত্যেকটা যুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন।
আপনাদের কাছে অনুরোধ, ঢাল, তরোয়াল না ধরুন, এবার থেকে অন্তত একটু মুখ খোলা প্র্যাকটিস করুন। রাস্তায়, মাঠে, মিডিয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেখানেই হোক… প্লিজ। তারপর না হয় আপনারাই আবার কাউন্সিলর, কর্মাধ্যক্ষ, সভাপতি, বিধায়ক, সাংসদ হবেন…।

–

–

–


–


–

–

–
