পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায় সঠিক কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে, এই ঘটনায় বাজি কারখানার মালিকদের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার (Supratim Sarkar, ADG South Bengal)। মঙ্গলবার, সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, কীভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটে তা দেখতে তদন্ত করবে ফরেনসিক (Forensic) দল। বলেন, “কী ভাবে বিস্ফোরণ হল, কী ভাবে আগুন লাগল, সেটা যাঁরা বলতে পারতেন, তাঁরা কেউ বেঁচে নেই। তাই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করা হচ্ছে।“ সুপ্রতিম সরকারের কথায়, এই দুর্ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট পরিবারের। কারণ, পুলিশের পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি করা কঠিন। একই সঙ্গে এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য পুলিশের তরফে বাজি কারখানার মালিক ও সমবায়গুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও জানান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ)।

সোমবার রাতে বাসন্তীপুজোর জন্য একটি ঘরে বাজি তৈরি করা হচ্ছিল বলে খবর। রাত সাড়ে নটা নাগাদ হঠাৎই বিস্ফোরণ হয়। অভিযোগ, ঢোলাহাট থানা এলাকার চন্দ্রকান্ত বণিকের বাড়িতে বেআইনিভাবে বাজি তৈরি হচ্ছিল। আচমকাই বাজির স্তূপে আগুন ধরে যায়। বাড়িতে একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার মজুত ছিল। পুরো দুর্ঘটনার জেরে সারাবাড়িতে আগুন ধরে যায়। রাতেই শিশু-সহ ৭ জনের মৃত্যু হয়। এদিন ভোররাতে আরও একজনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পরেই গা ঢাকা দেন কারখানার দুই মালিক চন্দ্রকান্ত বণিক ও তুষার বণিক। এদিন সকালে চন্দ্রকান্তকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এখনও বেপাত্তা তুষার। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে নবান্ন (Nabbana)।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের জ্ঞাতেই এই কারখানা চলত। এমনকী, পঞ্চায়েতের দেওয়া বাজি মজুত এবং তৈরি করার ট্রেড লাইসেন্সে ছিল বণিক পরিবারের। এই দুই অভিযোগই তদন্ত হবে বলে জানান সুপ্রতিম। তাঁর কথায়, বণিক পরিবার বছর দশেক ধরে বাজি ব্যবসা করছে। ধৃত চন্দ্রকান্ত বাড়িতে বাজি তৈরির মশলা রাখার জন্য বছর তিনেক আগে গ্রেফতার হন।

সুপ্রতিম সরকারের (Supratim Sarkar, ADG South Bengal) মতে, “এটা একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। যার মাসুল দিতে হয়েছে বাড়িরই আট সদস্যকে। যার মধ্যে রয়েছে শিশু এবং বৃদ্ধ।“ তাঁর কথায়, “আমি বা আপনি যদি বাড়িতে পেট্রল রাখি, তার পর সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখি, সেখানেই রান্না করি, সেই খবর প্রতিদিন পুলিশের কাছে থাকা সম্ভব নয়। এটা তো সচেতনতার অভাব, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়।“


এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) জানান, “নিজেদের মধ্যে তো একটা বোধ থাকতে হবে। আমি দাহ্য পদার্থ রাখব, সেখানে শিশুদের নিয়ে থাকব, সেখানেই গ্যাস সিলিন্ডার রেখে রান্না করব— এই ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করাটা পুলিশের পক্ষে একটু কঠিন। তবু আমরা চেষ্টা করি। সামগ্রিক ভাবে আমরা সকলকেই সচেতন থাকার কথা বলি। জোর করে সচেতন করা যায় না। আইন দিয়েও হয় না। তার জন্য আমরা শুধু আবেদন করতে পারি।“


সুপ্রতিমের সংযোজন, “বাজি ব্যবসার সঙ্গে প্রচুর মানুষের পেশা জড়িয়ে। কিন্তু কোথাও সচেতনতার অভাব আমরা লক্ষ্য করছি। সাম্প্রতিক অতীতে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে।“
আরও খবর: ভারতীয় জাদুঘরে বোমাতঙ্ক! তল্লাশি CISF-নিউমার্কেট থানার পুলিশ

পাথরপ্রতিমার ঘটনার প্রেক্ষিতে বাজি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সঙ্গে পুলিশ বৈঠকে বসবে বলে জানান ADG (দক্ষিণবঙ্গ)। বাজি মজুত লোকালয়ে না করে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গার পরামর্শ দেওয়া হবে।

–

–
–
