কলকাতায় বলিউডের ‘কাশ্মীর কি কলি’, সুমন ঘোষের (Suman Ghosh) পরিচালনায় ‘পুরাতন’ (Puratan) ছবির প্রচারে এসে কখনও ডুবলেন স্মৃতির নস্টালজিয়ায়, আবার কখনও বর্ষীয়ান অভিনেত্রী নিজের মাঝে লুকিয়ে থাকা অচেনা শর্মিলাকে (Sharmila Tagore) তুলে ধরলেন সবার সামনে। অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং সম্পর্কে সংশয়ের আবহে মা মেয়ের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে শর্মিলা ঠাকুর- ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত নতুন বাংলা ছবি ‘পুরাতন’। এই ছবি ১৪ বছর পর বাংলা সিনেমায় (Bengali movie) প্রত্যাবর্তন ঘটালো সত্যজিতের ‘অপর্ণা’র। আশি বছর বয়সেও ঝলমলে অভিনেত্রী, ছবিমুক্তির কারণে কলকাতার ঝটিতি সফরে এসে সাংবাদিকদের কাছে শোনালেন তাঁর ভালো লাগা খারাপ লাগার গল্প। ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়া থেকে থমকে যাওয়া, নতুন করে লড়াই করতে শেখার মধ্যে দিয়ে জীবনের আনন্দ খুঁজে পাওয়ার কথা বললেন ‘আরাধনা’ নায়িকা।

শর্মিলা ঠাকুর বাংলা সিনেমায় ফিরছেন, এ খবর শোনা থেকেই একটা আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) আগেই জানিয়েছেন মানিকবাবুর ‘দেবী’র সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সত্যি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। শুক্রবার সিনেমার প্রচারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা এবং পরিচালক সুমন ঘোষের সঙ্গে ফ্রেমবন্দি শর্মিলা। সিনেমার দৃশ্যায়নে রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে পুরনো রেডিও কিংবা চুয়াত্তর সালের ব্যাংকের পাসবই থেকে পুরীর লাঠি স্মৃতিভ্রষ্টা বৃদ্ধার পরিসরকে সাবলীল ভাবে তুলে ধরেছে। ‘পুরাতন’ ছবিতে শর্মিলার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করলেও ঋতুপর্ণা এ ছবির প্রযোজকও বটে। নিজের প্রিয় শহরে পতৌদি পত্নী যখন নস্টালজিয়ায় ডুবেছেন, তখন মুগ্ধ চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে ‘প্রাক্তন’ অভিনেত্রী। উত্তমের নায়িকা জানালেন, জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হিসেবের থেকেও বড় হচ্ছে প্রত্যেকটা মুহূর্তকে উপভোগ করা এবং সেখান থেকে আগামীর জন্য অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করে যাওয়া। তিনি জানালেন, শুধু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই নয়, বাড়ির প্রতিটি আসবাবপত্রের সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন। সইফ আলি খানের ছোটবেলার অসুস্থতার একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে জানান জীবনে মায়ের অভিজ্ঞতার গুরুত্বের কথা। শর্মিলা বলেন, জীবনে কখনও শেখার আগ্রহ হারালে চলবে না। স্মৃতির স্মরণী বেয়ে বলিউডের এক সময়ের সাহসী বাঙালি অভিনেত্রীর কাছে কলকাতার আবদার, এবার কি তাহলে প্রসেনজিৎ -ঋতুপর্ণার সঙ্গে শর্মিলার একটি বাংলা ছবি হবে? হালকা হেসে টোল পড়া গালে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী জানালেন, “ততদিন কি আমি থাকবো হয়তো ছবির ফ্রেমে বাঁধা পড়বো।” যদিও এ কথা থামিয়ে দিলেন পাশে বসে থাকা প্রযোজক অভিনেত্রী এবং শর্মিলার অন স্ক্রিন কন্যা। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টে যায়, কিন্তু কিছু অভিজ্ঞতা চিরকালীন হয়ে থেকে যায়। সে কথা উল্লেখ করে শর্মিলা জানান, সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ছবি করার পর থেকেই তাঁর জীবন বদলাতে শুরু করে। মুম্বইয়ে অনেকটা লড়াই করতে হয়েছে কিন্তু তিনি কখনই হাল ছাড়ার পক্ষপাতি ছিলেন না।

শুক্রের সান্ধ্য লগ্নে শর্মিলার সঙ্গে আলাপচারিতা আর গল্প আড্ডায় কলকাতার সময় যেন থমকে যেতে চাইছিল। ‘নায়ক’ অভিনেত্রী জানান এবারে ব্যস্ততার কারণে কলেজ ট্রিট থেকে কবিতার বইয়ের খোঁজ নেওয়া হয়নি কিন্তু শহরের মিষ্টি ছাড়া মুম্বই ফিরবেন না তিনি। ইতিমধ্যেই ‘পুরাতন’ মুক্তি পেয়েছে, বহুল প্রশংসিতও হয়েছে। শর্মিলা ঠাকুর আশাবাদী ওটিটিতে ছবি দেখার প্রবণতা বাড়লেও, বড়পর্দার ছবি সিনেমা হয়ে গিয়েই সাদরে গ্রহণ করবেন দর্শক।

–



–


–

–

–

–
–

–

–