বাংলায় কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যর্থ সিপিআইএম (CPIM) এখন শুধুই চাকরি খাওয়ার রাজনীতিতে ব্যস্ত। গোটা দলের মধ্যে বিশেষ করে এক শ্রেণির বাম আইনজীবী নেতা নিজেদের পকেট ভরতে ব্যবহার করছেন রাজ্যের শিক্ষক সমাজকে। যখনই চাকরির সুযোগ তৈরি হয়, তখনই মামলা করে বছরের পর বছর একদিকে নিয়োগ আটকে রাখছেন সিপিআইএম রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Bhattacharya) ও তাঁর অনুগামীরা। এবার তারই প্রতিবাদে বিকাশ ভট্টাচার্যর চেম্বারের বাইরে বিক্ষোভে চাকরিপ্রার্থীরা।

সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্রের পরও উচ্চ-প্রাথমিকে ২০১৬-র প্যানেলে কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার শিক্ষক (SLST) নিয়োগে বাগড়া দেওয়ায় অভিযুক্ত বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Bhattacharya)। আড়াই বছর ধরে ৬১ দফায় শুনানির পরও বিকাশবাবুর লাগাতার বাগড়ায় মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় শুক্রবার কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই চাকরিপ্রার্থীরা। হাই কোর্ট (Calcutta High Court) লাগোয়া বিকাশবাবুর চেম্বারের সামনে জমায়েত হয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তারা। পরে সেই চেম্বার বন্ধ থাকার কথা জানতে পেরে মিছিল করে চাকরিপ্রার্থীরা বিকাশবাবুর সহযোগী আইনজীবী ফিরদৌস শামিম ও সুদীপ্ত দাশগুপ্তর চেম্বারের সামনে জড়ো হন।


কিরণশঙ্কর রায় রোডে ওই দুই আইনজীবীর চেম্বারের সামনে রাস্তায় বসে পড়ে অবস্থানের পাশাপাশি বিকাশবাবু-সহ (Bikash Bhattacharya) দুই আইনজীবীকে ‘চাকরিখেকো’ বলে ফুঁসে ওঠেন তাঁরা। রাত ৮টা নাগাদ ফিরদৌস, সুদীপ্তরা চেম্বারে ঢোকার সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এই সময় সিপিএমের গুণ্ডারা বিক্ষোভকারীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। সিপিএমের গুণ্ডামির পর বিক্ষোভ উঠে যায়। এর আগে বিক্ষোভকারীরা বিকাশবাবুদের উদ্দেশে জুতো দেখিয়ে ক্ষোভ জানাতে থাকেন। তাঁদের ক্ষোভের নিশানা থেকে বাদ পড়েননি বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুও। বিক্ষোভ ঘিরে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে উত্তপ্ত হাই কোর্ট চত্বর।

২০১৬-র উচ্চ মাধ্যমিকে কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ করতে ‘সুপার নিউমেরারি পোস্ট’ (super numerary post) বা অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে রাজ্য। রাজ্যের এই অতিরিক্ত শূন্যপদের সিদ্ধান্ত নিয়েই মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। ২০২৩-এর এপ্রিলে এই শূন্যপদে নিয়োগের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় হাই কোর্ট। পাশাপাশি, মন্ত্রিসভার ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। পরে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট মন্ত্রিসভার ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মতো অতিরিক্ত শূন্যপদে নিয়োগে হস্তক্ষেপ করেনি শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, এতে হস্তক্ষেপ করলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো (federal structure) ধ্বংস হয়ে যাবে।


এদিন হাই কোর্টের বিচারাধীন সেই মামলারই শুনানি ছিল হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নির্দেশ তুলে ধরে রাজ্যের দাবি, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে ‘সুপার নিউমেরারি পোস্ট’ (super numerary post) বৈধ। ফলে কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষায় নিয়োগে কোনও বাধা নেই। শুক্রবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য রাজ্যের থেকে লিখিত আকারে চান বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য হয় ৬ মে। সুপ্রিম শুনানির পরেও মামলা বিনা কারণে দীর্ঘায়িত হওয়ায় শুক্রবার ক্ষোভে ফেটে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা।

–

–

–

–

–

–
