Sunday, June 1, 2025

‘যামিনী রায়ের শিল্পধর্ম’, উৎপল সিনহার কলম

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

” বাঁকুড়ার মাটিকে পেণাম করি দিনে-দুপুরে … ”
” বলি বেলাতোড়ের
যামিনী রায় ,
বাঁকুড়ার রামকিঙ্কর বেজ …
তারা জগতটাকে
দেখাইন দিল আঁকাজোকায়
নাই আর কেউ … ”
( কথা ও সুর :
সুভাষ চক্রবর্তী )

শিল্পধর্ম পালনে অনন্ত নরকে যেতেও রাজি ছিলেন আমৃত্যু আপসহীন যামিনী রায় । ‘ যামিনী রায়ের ছবি ‘ , কথাটা শুনলেই এক আকাশ ছবি , যেন ছবির মেলা বসে যায় শিল্পরসিকদের মনে ।

যশোরের প্রতাপাদিত্য রায়ের বংশজ অসামান্য এই শিল্পীর পূর্বপুরুষেরা ভাগ্যের ফেরে এসে পড়েছিলেন বাঁকুড়ার বেলেতোড়ে । স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন যাঁর লেখা প্রবন্ধ পাঠ ক’রে , বিষ্ণু দে যাঁকে তুলনা করেন পাবলো পিকাসোর সঙ্গে , সেই যামিনী রায়ের ছবি প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো তাঁর শিল্পীমনের সারল্য মিশ্রিত দৃঢ় প্রত্যয়ে ।

শিল্পীর বয়স যখন ৬৫ , তখন তাঁর জীবনে ঘটে যায় এক আশ্চর্য ঘটনা , যা তাঁকে এক নতুন দৃষ্টি দেয় ।
তাঁর আঁকার ঘরটি ছিল চমৎকার । আর সব বাড়ির চেয়ে আলাদা । দেওয়াল ঘেঁসে সার সার সাজানো অজস্র ছবি । কী তার রঙ , এমন সচরাচর দেখা যায় না।
আর তাঁর এই ছবিঠাসা ঘরে দেশ-বিদেশের কত যে শিল্পবোদ্ধা আসেন প্রতিদিন , তার হিসেব কে রাখে !
একটি ছোট্ট মেয়ে কিন্তু রোজ এসব লক্ষ্য করে । সে একদিন শিল্পীকে প্রশ্ন করে , ” আচ্ছা শোনো , তোমাদের ওই ঠাকুরঘরে সবাই কেন জুতো পায়ে আসে ? তুমি বারণ করতে পারো না ? ” শুনে চমকে ওঠেন বর্ষীয়ান শিল্পী ! বলে কি মেয়ে ? ঠাকুরঘর ? হ্যাঁ , তাইতো , ঠাকুরঘরই তো বটে ! ঠিকই তো বলছে এই মেয়ে । কিন্তু এভাবে তো কখনও ভেবে দেখিনি আমি !
ছোট্ট মেয়েটির মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে দেন তিনি। শিশুর নিষ্পাপ মন কত বড় একটা কথা বলে গেল যা কখনও কেউ বলে নি শিল্পীকে । শিল্পী নিজেও কখনও এভাবে ভাবেন নি । শিল্পধর্ম পালনের ঘর , সৃষ্টির আধার , সৃজনক্ষেত্র , সে তো অবশ্যই ঠাকুরঘর ।

আমাদের এই বঙ্গভূমি বহু বিশ্ববরেণ্য শিল্পীর জন্ম দিয়েছে , কিন্তু সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়ার কথা ভাবে নি বাঙালি । তবে যামিনী রায়ের নাম শোনেনি এমন বাঙালি খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না । এমনই তাঁর ছবির আকর্ষণ ।

যে কোনো মধ্যবিত্ত বাঙালির ড্রয়িংরুমে , এমনকি শয়নকক্ষেও নিজের জায়গা করে নিয়েছেন এই ক্ষণজন্মা চিত্রশিল্পী । তিনি আছেন বাঙালির দেওয়ালে , সস্তার নড়বড়ে বাঁধাইয়ে , ডেস্কে , ক্যালেন্ডারে , নতুন বছরের শুভেচ্ছার ছবিতে , বিয়ের কার্ডে , খেলায়-মেলায় , বিভিন্ন প্রদর্শনীতে । বাঙালির গৃহসজ্জায় এখনও অপরিহার্য যামিনী রায় ।

জাতশিল্পী , স্পষ্টবক্তা এবং দেশপ্রেমিক যামিনী রায় মানুষের আচরণ এবং কথাবার্তার মধ্যে দিয়েই , খুব অল্প পরিচয়েই মানুষের মন বুঝে নিতে পারতেন এবং সেই অনুযায়ী মন্তব্য করতেন। আগামী সময় , আগামী সমাজ নিয়ে সবসময় ভাবিত থাকতেন ।

সমাজ ও দেশকাল নিয়ে তাঁর ভাবনার অন্ত ছিল না । তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিল অসামান্য । ঋষিকল্প সনাতন কৃচ্ছতাকে জীবনে মিশিয়ে নিয়েই তাঁর ছবি আঁকার সাধনা । আর ছিল প্রখর আত্মমর্যাদা । অবিস্মরণীয় যামিনী রায় আমাদের সাধের বঙ্গভূমির অন্যতম সেরা অলংকার এবং একই সঙ্গে অহংকার ।

আরও পড়ুন – আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নই, ট্রোলিং নিয়ে জবাব সৌরভের

_

 

_

 

_

 

_

 

_

 

_

spot_img

Related articles

আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নই, ট্রোলিং নিয়ে জবাব সৌরভের

পুলিশ আধিকারিককে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করে সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। সেই সূত্রেই এবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল শুরু...

মেডিক্যাল কলেজে সিলেক্টেড স্টুডেন্ট কাউন্সিল

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গঠিত হতে চলেছে সিলেক্টেড স্টুডেন্ট কাউন্সিল। শনিবার সকাল থেকেই দফায়...

পেট ফুঁড়ে ২১০ সেমি লম্বা চুলের বল! বিশ্ব রেকর্ড জয়পুরের চিকিৎসকদের 

পেট ব্যথা, বমি—প্রথমে যেন চেনা উপসর্গ। কিন্তু অস্ত্রোপচারের টেবিলে উঠে এল চাঞ্চল্যকর ছবি। পাকস্থলী চিরে বেরোল ২১০ সেন্টিমিটার...

আয়ুর্বেদ কোম্পানীর নাম জাল করে রমরমা কারবার! বারাসতে গ্রেফতার ১

নামী কোম্পানীর নাম ভাঁড়িয়ে জাল ওষুধের রমরমা করাবার উত্তর ২৪ পরগণার বিভিন্ন এলাকায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এবার...