একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চনা। বিজেপি শাসিত রাজ্যে ক্রমাগত তলানিতে কৃষকদের অবস্থা। আত্মহত্যার সব রেকর্ড পার সেখানকার কৃষক আত্মহত্যায়। অথচ বাংলায় কৃষির উৎপাদনের ছবি স্পষ্ট করে দিচ্ছে বাংলার কৃষকদের বর্তমান অবস্থান। এবার কেন্দ্রের কৃষি দফতরের (Agricultural Ministry of India) পরিসংখ্যানে ধান উৎপাদনের সর্বকালের রেকর্ড গড়ল বাংলা।

২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে ধান উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড বাংলার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে মোট ২৫৬.৫৩ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে, যা এর আগে কোনও অর্থবর্ষে দেখা যায়নি। এই পরিসংখ্যানই দেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ফের দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান (highest recorded) দখল করল ধান উৎপাদনে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খরিফ মরশুমে রাজ্যে ১৮১.৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালে ‘ডানা’ ঘূর্ণিঝড় ও কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেও এই পরিমাণ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে, বোরো মরশুমে উৎপাদন হয়েছে ৭৫.১৮ লক্ষ মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে এই বছরে ধান উৎপাদনের পরিমাণ পৌঁছেছে ২৫৬.৫৩ লক্ষ মেট্রিক টনে, যা ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে হওয়া ২৫৩.৬৬ লক্ষ মেট্রিক টনের আগের রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২০০.৮৪ লক্ষ মেট্রিক টন। সেখান থেকে ধান উৎপাদন বেড়েছে ৫৬ লক্ষ মেট্রিক টন। রাজ্যের কৃষি দফতর জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিভিন্ন কৃষকমুখী প্রকল্প ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগের জেরেই এই সাফল্য এসেছে। কৃষকবন্ধু, বাংলা শস্যবিমা, খাজনা মকুব, কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি, ধান সংগ্রহে ন্যায্য মূল্য এবং সুফল বাংলার মতো একাধিক প্রকল্পে কৃষকেরা উৎসাহিত হয়েছেন।

রাজ্যের এই সাফল্যকে তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জানান, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি উৎপাদনে একটি ঐতিহাসিক মাইল ফলক অর্জন করেছে। ২০২৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত, আমাদের কৃষকরা ২৫৬.৫৩ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করেছিলেন, যা যে কোনো বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই দেশের শীর্ষস্থানীয় ধান উৎপাদনকারী রাজ্য হিসেবে বাংলার অবস্থানকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।


সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন কতখানি বাধা ছিল এই পথে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় দানা (Cyclone Dana) এবং বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বন্যার মতো প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, কৃষক বন্ধু, বাংলা শস্য বীমা, কৃষিতে উপযুক্ত যন্ত্রপাতির ব্যবহার, খাজনা মকুব, সুফল বাংলা এবং নিশ্চিত ক্রয়ের মতো জনদরদি নীতির প্রণয়নের মাধ্যমেই আমাদের কৃষকদের অদম্য মনোবল এই সাফল্যকে সম্ভব করেছে।


সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, ২০১১ সাল থেকে, বাংলায় কৃষি উৎপাদনশীলতায় ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। ভুট্টা, ডাল, তৈলবীজ এবং সুগন্ধি ধানের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি আমাদের কৃষক, ভাগচাষি, আংশিক কৃষক, কৃষি শ্রমিক এবং কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত সকল ভাই ও বোনদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা আমাদের জাতির মেরুদণ্ড এবং তাঁদের অবদান অতুলনীয় এবং গভীরভাবে গৃহিত।
কৃষিমন্ত্রী শোভনদের চট্টোপাধ্যায় (Sovandeb Chattopadhyay) জানালেন, গোটা ভারতবর্ষে যেখানে কৃষক আত্মহত্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা আনন্দের সঙ্গে ফসল উৎপাদন করছেন। তার কারণ, ২০১১ সালের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের জন্য লাগাতার নানান প্রকল্প এবং ঝুঁকি কমাবার জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর ফলে কৃষকদের আয় যেমন বেড়েছে একইসঙ্গে বিমা-সংক্রান্ত প্রকল্প থাকায় কৃষকদের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে হয়নি। সবটাই রাজ্য সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কৃষক দরদি মনোভাব এবং পদক্ষেপের জন্যই আজ বাংলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের সেরা। ধান উৎপাদনেও রেকর্ড গড়ে ফেলল। কৃষকেরা এখন খোলা মনে মাঠে কাজ করতে পারেন। কারণ তাঁরা জানেন, তাঁদের উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করা এবং তাঁদের আয় বাড়ানোর দায়িত্ব রাজ্য সরকার নিয়েছে।

শুধু ধান নয়, অন্যান্য প্রধান ফসলেও সাম্প্রতিক বছরে উৎপাদনের হার বহুগুণ বেড়েছে। ভুট্টা উৎপাদন ৩.৫ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ লক্ষ মেট্রিক টনে। তৈলবীজের উৎপাদন ৭ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। ডালের উৎপাদন ১.৪২ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। সুগন্ধী চাল উৎপাদন ৬ গুণ বেড়ে পৌঁছেছে ৩.৭২ লক্ষ মেট্রিক টনে। কৃষকদের আর্থিক স্থিতি ও খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে এই সাফল্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি, সহায়ক প্রকল্প এবং নীতিগত স্থিরতার জোরে রাজ্য আগামী দিনে আরও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এগোচ্ছে।
I am delighted to share that West Bengal has achieved a historic milestone in agricultural production. In the year 2024 to 2025, our farmers produced 256.53 lakh metric tonnes of paddy, the highest ever recorded in any year. This reaffirms Bengal’s position as the leading paddy…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 3, 2025
–
–

–

–

–
