বিজেপি পরিচালিত রাজ্যগুলিতে পুলিশের অত্যাচারে আতঙ্কিত হয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে কোচবিহারের(Coochbehar) পরিযায়ী শ্রমিকদের৷ শুধুমাত্র বাংলা ভাষা বলায় তাঁদের জীবনে নেমে এলো কালো মেঘের ছায়া। আতঙ্কে হরিয়ানা ছাড়লেন তুফানগঞ্জের (Tufan ganj) প্রায় দেড়শো জন পরিযায়ী শ্রমিক। নিজেরাই বাসভাড়া করে বুধবার সকালে তুফানগঞ্জে ফেরেন পরিযায়ী শ্রমিকরা (Migrant Worker)। অধিকাংশ শ্রমিক সপরিবারে বছর দশেক ধরে কাজ করতেন হরিয়ানায়। তাঁদের অভিযোগ, বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি সন্দেহে ধরে নিয়ে যাওয়া যেত পুলিশ। থানা থেকে ছাড়া পেতেও মোটা টাকা দিতে হতো পুলিশকে। প্রাণ বাঁচাতে কাজ ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কঠিন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছেন অনেকে ৷
তুফানগঞ্জ (Tufan Ganj) থানার অন্তর্গত নাককাটি গাছ, বালাভূত, দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত দুশো পরিবার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হরিয়ানার গুরুগ্রামে থাকছেন। সেখানে টিনের ঝুপড়ি বানিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের হিসেবে কাজ করছেন পরিবারের সদস্যরা। মহিলারা কেউ গৃহ পরিচারিকা, কেউ রান্নার কাজ করেন। পুরুষরা কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ অন্য কাজে বা অন্য পেশায়। বাংলা ও বাঙালি নিয়ে সরগরম রাজ্য। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বারবার বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্তার অভিযোগে তোলপাড়।
অভিযোগ, যখন- তখন হানা দিয়ে পুলিশ তাঁদের উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী সন্দেহে। তারপর চলছে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। পুলিশি ধরপাকড় ও অত্যাচারের আতঙ্কে ঘরে ফিরছেন তুফানগঞ্জের শ্রমিকরা। তিন দিন আগে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে বাসভাড়া করে শ্রমিকরা নিজের গ্রামে ফিরলেন। তাঁদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। কাজ হারানোর যন্ত্রণা। হতাশার অন্ধকার। কিন্তু ঘরে ফিরে এখন করবেন কি? বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশি হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে, ঘটিবাটি, আসবাব ছেড়ে শুধু এক কাপড়ে তড়িঘড়ি যে যেমন পারছেন দলে দলে ফিরে আসছেন। যেন অঘোষিত, ইমারজেন্সি। পরিযায়ী শ্রমিক মফিজুল হক বলেন, আমরা গুরুগ্রামে একটি বস্তিতে থাকতাম।
সেখানে আমার ৩০ টি ঝুপড়ি ছিল। বাঙ্গালীদের সেই ঘর ভাড়া দিতাম। আমার স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করতো। তা দিয়ে মাসে ৪০ -৫০ হাজার উপার্জন হতো। দিন দিন পুলিশি অত্যাচার বাড়ায় প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ফিরে এসেছি। সুমন শেখ বলেন, বিয়ের পর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গুরুগ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে গাড়িমোছার কাজ করতাম। স্ত্রী রান্নার কাজ করত। আমার পরিচিত অনেককে গুরুগ্রামে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে আপনাদের নথি ঠিক নয়। তাই বাধ্য হয়ে ফিরে বাড়ি ফিরে এলাম। রাজ্য সরকারের কাছে কাজের আবেদন জানিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা।”আর বাইরে যাব না, ভিক্ষে করতে হলে ভিক্ষে করে খাবো”কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন শীতলকুচির নগর লাল বাজারের পরিযায়ী শ্রমিক মমিন মিঞা। জানা যায় প্রায় চার বছর ধরে ভিন উত্তরপ্রদেশের কোন এক জায়গায় পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন মমিন এবং তার স্ত্রী! মমিন জানায় তাদের ভিটেমাটিটুকু ছাড়া কোন নেই! স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন এক মুঠো পেট চালানোর তাগিদে! কিন্তু এমন ঘটনা হবে তিনি ভাবেন নি। আতঙ্কে জড়োসড়ো! তার অভিযোগ উত্তরপ্রদেশের পুলিশ আটক করে এবং নানা জিজ্ঞাসাবাদ করে সেখান থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল৷ তার প্রশ্ন বাংলা ভাষা বলাই কি তার অপরাধ! তাকে বেধড়ক মারধর করে, তাকে বাংলাদেশী সনাক্ত করার চেষ্টা করে! কিন্তু সে জানায় সে ভারতীয়! বাংলা বলায় কি দোষ? এদিন মমিনের বাড়িতে আসার খবর পেতেই তার বাড়িতে হাজির হয় শীতলকুচি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তপন কুমার গুহ, এছাড়াও ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যর অভিভাবক ফজলু মিয়া, স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি নূর বক্ত মিয়া, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অনিমেষ রায়, উপপ্রধান গোলাম রব্বানী আহমেদ, পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সাজ্জাদুর রহমান সহ অন্যান্যরা। এদিন ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তপন কুমার গুহ বলেন বাংলা বলায় না কি অপরাধ? সেজন্য তাকে মারধর করেছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না! বিজেপি রাজনৈতিক চক্রান্ত করছে? তিনি বলেন বাংলাতে তো অনেক বাইরের শ্রমিক কাজ করতে আসে! আমরা কি তাদের সাথে এ ধরনের আচরণ করি? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) মানবিক!
–
–
–
–
–
–
–
–
–
–