
একজিকিউটিভ ডিরেক্টর
বাংলা সহায়তা কেন্দ্র, রাত্তিরের সাথী থেকে আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান- রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলির (TMC Government Projects) প্রশংসায় ডেইলিহান্টের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর রাভানান এন। তুলে ধরলেন একাধিক সরকারি পরিষেবা, আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্ব, নিরাপত্তা ও ডিজিটাল ব্যবস্থা-সহ একাধিক বিষয়।

ডিজিটাল বাংলা, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে বদলে যাচ্ছে রাজ্যের জীবনযাত্রা
গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গে ডিজিটাল বিপ্লব নীরবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। সরকারের নীতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের বাস্তব জীবনে এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব সুস্পষ্ট। শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত, প্রযুক্তি-নির্ভর পরিষেবা এখন শাসনব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও পরিকাঠামোকে নতুন রূপ দিচ্ছে।

সরকারি পরিষেবা এখন হাতের মুঠোয়
রাজ্যে বর্তমানে ৩,৫০০-এরও বেশি ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’ বা বিএসকে (BSK) চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে নাগরিকরা সরকারি অফিসে না গিয়েও বিভিন্ন শংসাপত্রের জন্য আবেদন, সরকারি প্রকল্পের নাম নথিভুক্তকরণ বা জমির তথ্য পেতে পারছেন। এছাড়া, ‘দিদিকে বলো’র মতো উদ্যোগ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ স্থাপন করেছে। প্রথম দুই বছরেই এখানে ১৫ লক্ষেরও বেশি বার্তা জমা পড়েছে।

নিরাপত্তা ও ডিজিটাল ব্যবস্থা
রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা থাকলেও, ডিজিটাল পরিকাঠামো এখন প্রতিরোধ এবং জবাবদিহিতার একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। মহিলাদের সুরক্ষার জন্য ‘রাত্তিরের সাথী’-র মতো অ্যাপ, সিসিটিভি নজরদারি, এবং ডিজিটাল এফআইআর-এর মতো পরিষেবাগুলো সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও কার্যকর করেছে।

আরও পড়ুন- যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত: রাজ্যের সব স্ক্রিনে প্রতিদিন একটা করে বাংলা ছবি বাধ্যতামূলক

কর্মসংস্থান ও তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন
প্রযুক্তি-নির্ভর কর্মসংস্থানও পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউ টাউনের ‘সিলিকন ভ্যালি হাব’-এ ১,০০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ এসেছে, যার মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে ১ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইউটিউবার, স্থানীয় স্টার্টআপ, এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা তরুণ প্রজন্মের কর্মজীবনের পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ডিজিটাল পরিকাঠামো
‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’, ও ‘কৃষক বন্ধু’র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর (TMC Government Projects) সুবিধা এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে আবেদনকারীরা সরাসরি মোবাইলের মাধ্যমে নিজেদের আবেদনপত্রের অবস্থা জানতে পারছেন, যা দুর্নীতি কমিয়ে স্বচ্ছতা বাড়াতে এবং দ্রুত অর্থ প্রদান নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রসার
মহামারির পর থেকে অনলাইনে ক্লাস, ই-পরীক্ষা, ডিজিটাল উপস্থিতি এবং স্কলারশিপ পোর্টালগুলো রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্পের ডিজিটাল প্রয়োগে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ডিজিটাল উদ্যোগগুলো রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের ভর্তির হার বাড়াতে সাহায্য করেছে।

অভূতপূর্ব নাগরিক পরিষেবা
২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হওয়া ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ নামে ৮,০০০ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প ডিজিটাল শাসনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা সরাসরি জানানো এবং তা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।

ডিজিটাল যুগেও সাংস্কৃতিক পরিচয় সুরক্ষিত
বাংলায় ভাষা ও সংস্কৃতি মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মেলবন্ধন ঘটেছে। ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, এবং আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বাংলা ভাষার বিস্তার স্থানীয় সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। জাতীয় বিতর্কের মাঝে ভাষাভিত্তিক পরিচয় রক্ষার ক্ষেত্রেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্ব
ডিজিটাল রূপান্তর সম্পূর্ণ হতে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতি অপরিহার্য। এই ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা সংবাদ পরিবেশনের বৃদ্ধি রাজ্য প্রশাসন এবং জনসাধারণের মধ্যে তথ্যের ব্যবধান পূরণে সাহায্য করেছে। এই সময়ে নির্ভরযোগ্য আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যারা সঠিক তথ্য এবং বিশ্লেষণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। ওয়ান ইন্ডিয়ার সিইও রাভানন .”এন জোর দিয়ে বলেন যে শুধুমাত্র দ্রুত খবর প্রচারের মাধ্যমে আঞ্চলিক বাজারে বিশ্বাস গড়ে ওঠে না বরং এটি গড়ে ওঠে ধারাবাহিকতা, স্পষ্টতা এবং সাংস্কৃতিক নৈকট্যের মাধ্যমে”। তিনি বলেন,” শুধুমাত্র অ্যালগরিদমের চাহিদা পূরণের চেয়ে ও আমাদের দায়িত্ব হল সঠিক খবর কে অগ্রাধিকার দেওয়া, ।”
ভবিষ্যতের পথ
২০২৬ সালের নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই বাংলার ডিজিটাল প্রশাসন এবং আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমগুলো রাজনীতি ও জনসেবার নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছে। শুধুমাত্র ডিজিটাল শংসাপত্র বা ড্যাশবোর্ড দিয়ে শুরু হওয়া এই যাত্রা এখন এক নাগরিক-কেন্দ্রিক ডিজিটাল সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, যা বহুমুখী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নীরবভাবে একটি ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে রূপান্তরিত হচ্ছে ।