Sunday, August 24, 2025

স্বপ্নভঙ্গ নয়, মুক্তির লড়াই: জাতীয় স্তরের রেফারি হলেন গোপীবল্লভপুরের মনি খিলাড়ি

Date:

এ গল্প কোনো স্বপ্নভঙ্গের নয়, বরং শৃঙ্খল ভাঙার গল্প। কনকনে শীতের রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজের বিয়ে ভেঙে মুক্তির পথে পা বাড়িয়েছিল ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর দু’নম্বর ব্লকের বেলিয়াবেড়া থানার বালিপাল গ্রামের মনি খিলাড়ি(Mani Khilari)। আজ সেই আদিবাসী কন্যা কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য জেদের জোরে দেশের জাতীয় স্তরে মহিলা রেফারি(Woman Refree) হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অভাবের সংসারে বড় হওয়া মনির (Mani Khilari) বাবা রাধানাথ খিলাড়ি দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। সামান্য জমির উপর নির্ভর করেও মেয়েকে কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছিলেন। তপসিয়া হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে মুনি ধীরে ধীরে এগিয়ে যান খেলাধুলার জগতে। জঙ্গলমহল ফুটবল কাপে খেলার মধ্য দিয়ে নজরে আসেন তিনি।

২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের উদ্যোগে গোপীবল্লভপুরে শুরু হয় মহিলা রেফারি অ্যাকাডেমি। সেখানে একশো জনের মধ্যে জায়গা করে নেন মনি। শুরু হয় কঠোর প্রশিক্ষণ। এদিকে সুবর্ণরেখা কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তি হলেও ফুটবলের টানে পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে দেন তিনি। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল, হঠাৎই করোনা মহামারীর কারণে অ্যাকাডেমি বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনে গ্রামে ফিরে আসতেই পরিবার থেকে শুরু হয় বিয়ের চাপ। প্রথমে নতি স্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত সাহস দেখিয়ে বিয়ের আসর ভেঙে পালান মনি (Mani Khilari)।

কোচ শুভঙ্কর স্যারের সহায়তায় নতুন করে শুরু হয় তাঁর লড়াই। বর্তমানে ২৬ বছর বয়সী মনি ইতিমধ্যেই অমৃতসর, ভুবনেশ্বর, চেন্নাই, গোয়া সহ বিভিন্ন মাঠে জাতীয় স্তরের খেলা পরিচালনা করেছেন। রেফারিংয়ের পাশাপাশি ফের শুরু করেছেন পড়াশোনা। বর্তমানে তিনি শিক্ষায় স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তবে মনি মনে করেন, প্রত্যন্ত গ্রামে মেয়েদের স্বপ্ন এখনো মূল্যায়িত হয় না। তাদের একমুখী জীবনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাকরির আশ্বাস দিয়েছেন। সেটা হলে আমরা ছোট ছোট মেয়েদের খেলাধুলার ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা করতে পারবো। কারণ সারা বছর ম্যাচ থাকে না। যেটুকু অর্থ মেলে তা যাতায়াত খরচেই শেষ হয়ে যায়।” আজ মনিকে দেখে অনেক কিশোরী মাঠে নামতে আগ্রহী হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মুনি মানসিক শক্তি যোগাচ্ছেন। তাঁর বার্তা, “থেমে থেকো না, এগিয়ে চলো। নিজের স্বপ্নকে মুঠোয় ধরো।” অচলায়তনের শৃঙ্খল ভেঙে স্বপ্নকে জয় করার যে সাহসী দৃষ্টান্ত মুনি খিলাড়ি দেখালেন, তা জঙ্গলমহলের মেয়েদের কাছে এক নতুন অনুপ্রেরণা।

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...
Exit mobile version