Friday, August 29, 2025

মাত্র চার দিনে মহারাষ্ট্র পুলিশের এত অত্যাচার যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক গোলাম মন্ডলকে। কিছুটা সুস্থ হলেও শেষ রক্ষা হলো না। সোমবার মারা গেলেন উত্তর ২৪ পরগনার পরিযায়ী শ্রমিক (migrant labour) গোলাম মন্ডল। শুধুমাত্র বাংলা (Bengali) বলার অপরাধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাংলার শ্রমিকদের উপর মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) বিজেপি প্রশাসন কতটা অত্যাচার চালিয়েছে, তা মৃত্যুর আগে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সাংবাদিক বৈঠকে এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার গোলাম।

মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে (Mumbai) মিরা রোড গার্ডেন এলাকায় কাজ করতেন পরিযায়ী শ্রমিক গোলাম মন্ডল। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া এলাকার আর পাঁচজন শ্রমিকের মতোই অনেক বছর ধরে সেখানকার শ্রমিক ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনদিনও শুধুমাত্র বাংলা বলার অপরাধে এমন পরিণতি হবে তা ভাবতে পারেননি গোলাম। চলতি বছর ঈদের (Eid) পরদিন যে এলাকায় গোলামের বসতি ছিল, সেখান থেকে চারশ জন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে তুলে নিয়ে যায় মহারাষ্ট্র পুলিশ। দিনরাত রোদ-বৃষ্টি-জলে মাঠের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে তাঁকে বসিয়ে রাখে। বসিয়ে রাখে আরও ৪০০ বাংলার শ্রমিককে।

রাজ্যের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে মহারাষ্ট্র থেকে কোনও মতে প্রাণ নিয়ে বাংলায় ফিরে আসার পর সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছিলেন গোলাম মন্ডল। দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের পক্ষ থেকে যে সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন তিন দিন তিন রাত শুধুমাত্র ভাত খেতে দিয়ে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট দল করে বসিয়ে রেখেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ। চতুর্থ দিন জানানো হয়েছিল পরের দিন ছাড়া হবে। অথচ এই শ্রমিকদের সকলেরই দেশের নাগরিকত্বের বৈধ কাগজপত্র ছিল।

চাঞ্চল্যকরভাবে মহারাষ্ট্র পুলিশকে (Maharashtra police) আধার কার্ড (Aadhaar card) দেখানোয় তারা দাবি করেছিল, মহারাষ্ট্রে এই পরিচয়পত্র ৫০ টাকা দিলে পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে অকথ্য গালিগালাজ তো ছিলই। মহারাষ্ট্র পুলিশ তাদের জানিয়েছিল, তোমরা দিদির এলাকার লোক। দিদির এলাকায় ডালভাত খাও। এখানে থাকলে আজ ছাড়ছি, পরে আবার ধরে আনব, জানিয়েছিলেন গোলাম মন্ডল।

আরও পড়ুন: পুণ্যের টানে ৬১জন একই ট্রাক্টরে! ট্রাকের ধাক্কায় যোগীরাজ্যে মৃত ৮

চার দিনের পুলিশি অত্যাচারে বাংলায় ফিরেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল গোলামকে। ৭-৮ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর বাড়ি ফিরেও চলছিল ওষুধ। চিকিৎসক তাঁকে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে মনের ব্যথা ব্যক্ত করেছিলেন গোলাম। তবে শেষ পর্যন্ত কত বছর আর তাঁকে ওষুধ খেতে হল না। সেই অসুস্থতা আর কাটলো না। সোমবার উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়ার বাড়িতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তার।

গোলাম মণ্ডলের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের (Desh Banchao Ganomancho)। সদস্য ও সাংসদ দোলা সেন (Dola Sen) জানান, পুলিশি অত্যাচারেই অসুস্থ ছিল। আর সেই অত্যাচার শুধুমাত্র বাংলা বলার কারণে। এর আগে গোলাম মণ্ডলের অন্য কোনও অসুস্থতা ছিল না। এভাবেই বিজেপির প্রশাসনের বাংলা বিরোধী নীতিতে আরও এক বাংলার শ্রমিকের মৃত্যু হল।

Related articles

রজতজয়ন্তীতে ডব্লিউবিএনইউজেএসকে উচ্চ প্রশংসা, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রধান বিচারপতির

কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় (ডব্লিউবিএনইউজেএস)-এর উৎকর্ষতা এখন বেঙ্গালুরুর থেকেও এগিয়ে—রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের...

এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা পিছবে না, আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট 

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও লাভ হলো না কিছু প্রার্থীর। দেশের...

যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ! রবিবার টালিগঞ্জ থেকে ক্ষুদিরাম পর্যন্ত বন্ধ মেট্রো 

কলকাতার ব্লু লাইনের যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ। আগামী রবিবার মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন পর্যন্ত বন্ধ...

এনএইচএম কর্মীদের বড় উপহার, উৎসবের মুখে বোনাস ঘোষণা রাজ্যের 

উৎসবের দোরগোড়ায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কাজে নিযুক্ত রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবক ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।...
Exit mobile version