আলো ঝলমলে প্যান্ডেল, রোশনাই, ভিড়—শহর যখন মেতে ওঠে উৎসবের আবহে, ঠিক তখনই অন্য প্রান্তে দেখা যায় উদ্বেগের ছবি। হাসপাতাল চত্বর খাঁ খাঁ, অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে, অসুস্থ মা কিংবা সদ্যোজাতকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন পরিবারের লোকজন। প্রতি বছরই এই সময় বাড়ে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর আশঙ্কা। তাই এ বছর আগে থেকেই কড়া ব্যবস্থা নিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম গত সপ্তাহে দফতরের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়েছেন—“উৎসব হোক আনন্দের, একটিও প্রাণ যেন অবহেলায় না ঝরে।” বৈঠকে খতিয়ান তুলে ধরা হয়, যেখানে দেখা গিয়েছে গত বছর আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে মা ও শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছিল উদ্বেগজনকভাবে।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজ্যে মাতৃমৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছিল ৭০। প্রায় এক লক্ষ প্রসবের মধ্যে মারা গিয়েছিলেন ৯০০ জন মা। জাতীয় সূচকের তুলনায় অনেকটাই বেশি। সেই চাপ সামলাতে বিশেষ নজরদারি, চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং প্রসূতিদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করে সরকার। ফলে এ বছর কিছুটা উন্নতি হলেও উৎসবের মরশুমে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
তাই এবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—পুজোর দিনগুলিতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে সিনিয়র চিকিৎসক ও কর্মীদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ডিউটি রোস্টারে ছুটি থাকবে কড়া নিয়ন্ত্রণে। প্রসূতিদের ভর্তি হওয়ার আগেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। নার্স থেকে জুনিয়র ডাক্তার—সবার দায়িত্ব সুসংহতভাবে বণ্টনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত নজরদারি চালাতে ইতিমধ্যেই লিখিত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে জেলাশাসক ও সিএমওএইচদের কাছে। দফতরের বার্তা একটাই—‘উৎসব হোক আনন্দের, নয় আতঙ্কের।’
রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “উৎসবের ভিড় সামলানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সচল রাখতে হবে। একটিও মা কিংবা সদ্যোজাতকে যাতে অবহেলায় হারাতে না হয়, সেটাই এ বছরের বড় চ্যালেঞ্জ।” অর্থাৎ, ঢাক-ঢোল আর আলোড়নের মাঝেই হাসপাতালের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি—মা ও শিশুর সুরক্ষায় কোনও খামতি হবে না।
আরও পড়ুন – বিধানসভায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, মুখ পুড়ল বিরোধী দলনেতার
_
_
_
_