সরকারি হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা নিশ্চিত করতেই কড়া পদক্ষেপ স্বাস্থ্য দফতরের (Health Department)। এতদিন নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ছাড়াই বহু সরকারি চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার চালাতেন। পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই বিষয়টি চললেও, সম্প্রতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের (R G Kar Medical College And Hospital) ঘটনার পরে পরিস্থিতি বদলায়। রোগী মহলে অসন্তোষ বাড়তে থাকায় রাজ্য সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসে এবার কড়া অবস্থান নিয়েছে রাজ্য সরকার।

স্বাস্থ্য দফতরের (Health Department) নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দুই পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ৭৩ জন সরকারি চিকিৎসকের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। খারিজ হওয়া তালিকায় রয়েছেন সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, ইএনটি, শিশু, প্যাথোলজি, অ্যানাস্থেসিওলজি, চক্ষু, অর্থোপেডিকস ও ত্বক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। মূলত এই তালিকায় আছেন বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদীয়া, দুই বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, বীরভূম, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর ও দার্জিলিং জেলার চিকিৎসকরা।

রাজ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, এনওসি ছাড়া সরকারি চিকিৎসকরা কোনওভাবেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। নিয়ম ভাঙা হলে ভবিষ্যতে সরকার আর নরম হবে না। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে এনওসি চাওয়ার প্রক্রিয়া নতুন কিছু নয়। ১৯৯৩ সালের ৩ মার্চ প্রকাশিত ‘ক্যালকাটা গেজেট এক্সট্রা অর্ডিনারি নোটিফিকেশন’-এ বলা হয়েছিল, চাকরিতে যোগদান, প্রমোশন বা বদলির সময় প্রাইভেট প্র্যাকটিসের জন্য অনুমতি নিতে হবে। সেই পুরনো নির্দেশ দেখিয়েই এবার ৭৩ জন চিকিৎসকের আবেদন নাকচ করেছে সরকার।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেখা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের পর সিনিয়র চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি বেড়েছে। বিকেল চারটের পরে প্রায়শই সিনিয়র চিকিৎসকদের বদলে সমস্ত দায়িত্ব বহন করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা (Doctor)। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্যালাইন-কাণ্ড ও আর জি করের ঘটনার পরে এই অভিযোগ আরও স্পষ্ট হয়েছে। এমনকী স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় বহু জুনিয়র চিকিৎসকের ব্যক্তিগত আয় বেড়ে যাওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ হয়।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট- সরকারি দায়িত্ব পালনের বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের এনওসি নিতেই হবে। আপাতত যাঁদের আবেদন বাতিল হয়েছে তাঁদের প্রমোশন বা বদলির সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের মতে, সরকারি হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ।
