পুজোর ছবি মুক্তি নিয়ে টলিউডের আকাশে আশঙ্কার কালো মেঘ। জিজ্ঞাস্য একটাই, চারটি ছবিই কি সমান প্রেক্ষাগৃহ পাবে? সিনেমা মুক্তির দশ দিন আগেও এ প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। কারণ ধোঁয়াশায় রয়েছেন প্রযোজকরাই। শুটিং পাড়ায় ফিসফাস এইসবের নেপথ্যে নাকি ‘রঘু ডাকাত’-এর (Raghu Dakat) ‘হাত’ রয়েছে। সরাসরি কেউ দেব (Dev) বিরোধী মন্তব্য না করলেও, মেগাস্টারের ছবি যে সিনেমা হল দখলের লড়াইয়ে নিজের প্রভাব খাটিয়ে যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে তা অস্বীকার করছেন না কেউই।

বাঙালির শারদোৎসব মানেই প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখা আর সিনেমা হলে প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখা। প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় বাংলায় একই দিনে একাধিক সিনেমা মুক্তি পায়। প্রতিযোগিতার ইতিহাসও বেশ শক্তপোক্ত। কিন্তু দর্শক যদি সব ছবি সমান ভাবে দেখার সুযোগ না পায় তাহলে কে এগিয়ে কে পিছিয়ে সেই পরীক্ষা হবে কী করে? বাংলা সিনেমার স্বার্থে রাজ্য সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ করে বাংলার বুকে টলিউড সিনেমাকে সবার আগে সর্বাধিক প্রাইম টাইম শো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তারপরেও টলিউডের জট কাটছে না। কেন? শোনা যাচ্ছে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ‘রক্তবীজ টু’ (Raktabeej 2), শুভ্রজিৎ মিত্র পরিচালিত ‘দেবী চৌধুরানী’ (Devi Choudhurani) এবং অনেক দত্তের ছবি ‘যত কাণ্ড কলকাতাতে’ প্রেক্ষাগৃহ কিংবা প্রাইম টাইম শো পাওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে ‘SVF’ এবং দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্স প্রযোজিত ‘রঘু ডাকাত’। নিজের সিনেমা বেশি শো ‘দখল’ করে বসে আছেন! এই বিষয়ে ‘রক্তবীজ টু’ পরিচালক পত্নী জিনিয়া সেন (Zinia Sen) বলেন, “এ রকম গুঞ্জন আমার কানেও এসেছে। রাজ্য সরকার বাংলা ছবির স্বার্থে সমস্ত ছবির প্রাইম টাইম শো-এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। দুই প্রভাবশালী প্রযোজক এবারেও বেশি সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ এবং ছবি প্রদর্শনের সময় আদায় করার চেষ্টা করছেন।গুঞ্জন সত্যি হলে প্রভাব পড়বে ‘রক্তবীজ ২’- সহ বাকি তিনটি ছবির উপর। কেন বার বার কেউ বা কারা সুযোগের অপব্যবহার করবেন? ‘বহুরূপী’ যে পরিমাণ ব্যবসা করেছে গত পুজোয়, তার পর এই রকম আশঙ্কা হবে কেন?”

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘দেবী চৌধুরানী’ সিনেমার প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসানের বক্তব্য, “এরকম কিছু ঘটলে আমরাও লড়াই ফিরিয়ে দেব।”তবে সকলের স্বার্থে সবাই মিলে বসে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও আশাবাদী তিনি। প্রেক্ষাগৃহের অধিকর্তা নবীন চৌখানি, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, পরিবেশক শতদীপ সাহারা বলছেন গোটা বিষয়টাই রটনা এখনও পর্যন্ত নাকি সিনেমা হল বা শো-এর সংখ্যা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু যদি গুঞ্জন সত্যি হয় সেক্ষেত্রে মাল্টিপ্লেক্সের প্রভাব না করলেও সিঙ্গেলস স্ক্রিন যে যথেষ্ট সমস্যায় পড়বে এবং মানুষ সিনেমা দেখার সুযোগ হারাবেন এই বিষয়টিকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।

দেব (Dev )এসবে উত্তর। এমনিতেই ইন্ডাস্ট্রিতে এস জি এফ এর একচ্ছত্র দাপটের কথা কারোর অজানা নয় এবার তার সঙ্গে জুড়েছেন সাংসদ অভিনেতা। একটি ছবির কারণে বাকিদের সিনেমা হল পাওয়ার সমস্যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট করেছেন অভিনেতা-রাজনীতিবিদ কুণাল ঘোষও (Kunal Ghosh)। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘টলিউডে চুক্তিভঙ্গের ইঙ্গিত। বাংলার সিনেমার স্বার্থে ঠিক হয়েছিল পুজোয় আসা সবকটি ছবি প্রথমে সমান সুযোগ পাবে। তারপর দর্শকের সাড়া অনুযায়ী বা ব্যবসা অনুযায়ী হল মালিকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু, যা খবর, ‘প্রভাবশালী’ একটি ছবি বাড়তি শো পাচ্ছে একাধিক হলে শুরু থেকেই। ‘রক্তবীজ 2’র মত প্রথম পর্ব সুপারহিট হওয়া ছবিকেও কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গোড়া থেকে। এটা কাম্য নয়। শুরুটা সবাই সমান সুযোগ পাক। তারপর দর্শকের বিচার। সেটা না হলে এত বৈঠকের মানে কী? যাঁরা বৈঠক করেছিলেন, তাঁরা এখন কী করছেন? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে নজর দিন। হল মালিকরাও বিষয়টায় নিরপেক্ষতা রাখুন। চারটি সিনেমা, রক্তবীজ টু, রঘু ডাকাত, দেবী চৌধুরানী, যত কান্ড কলকাতাতেই সমান সুযোগ পাক আত্মপ্রকাশে, তারপর দর্শকের বিচারে দৌড় চলুক। একটা ছবি নেপথ্য প্রভাবে শুরুর দিন থেকে বাড়তি ছবি পাবে, এসব হলে তার প্রতিবাদও হবে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পোস্ট। বাংলা ছবির একজন দর্শক হিসেবে। সেন্সর বোর্ড ও ইমপার প্রাক্তন সদস্যও বটে। টেলিফিল্ম পরিচালনা ও পূর্ণ ছবি প্রযোজনার অভিজ্ঞতাও আছে।’

বাংলার বুকে সব কটা বাংলা ছবি রমরমিয়ে চলুক এই আশা বাংলা সিনেপ্রেমীদের। দর্শক সব ছবি সবাই সমানভাবে দেখার সুযোগ পেলে প্রতিযোগিতাও জোরদার হবে যা সার্বিকভাবে বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য লক্ষ্মীলাভের পর প্রশস্ত করবে। কিন্তু তার আগেই যদি ‘প্রভাবশালী’ হওয়ার ক্রেডিট নিয়ে টলিউডের বিধান লেখার প্ল্যানিং চলে তাতে আখেরে ক্ষতি হবে বাংলা সিনেমার, প্রতারিত হবেন বাঙালি দর্শকরাই।

–

–

–

–

–
–
–