বাংলায় SIR-এর আগেই বিজেপি ও কমিশনের যৌথ বিরাট কেলেঙ্কারি ফাঁস করল তৃণমূল (TMC)। বৃস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattachariya) ও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghsoh)। তাঁদের অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার লিস্টের হার্ড কপি আর কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা বর্তমান তালিকার মধ্যে বিস্তর ফারাক।” উত্তর ২৪পরগনার অশোক নগর একটি বুথে ৯০০জনের নাম বাদ দিয়ে ভোটার শূন্য দেখানো হয়েছে। কোথাও বাদ গিয়েছে ৪০০ নাম। ভোটার তালিকার (Voter List) নথি হাতে নিয়ে প্রমাণ দেখালেন চন্দ্রিমা-কুণাল।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে কমিশনকে নিশানা করেন কুণাল বলেন, “SIR -এর নামে এরা চুপি চুপি কারচুপি করছে। সাইলেন্ট রিগিং চলছে।” এর পরেই নথি হাতে একের পর এক প্রমাণ দাখিল করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির অভিযোগ উত্তর ২৪পরগনার অশোক নগর বিধানসভা এলাকায় গুমায়। কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে গুমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে, হাবড়া-২ ব্লকে ১৫৯ নম্বর বুথে কোনও ভোটারই নেই। অথচ ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে সেখানে প্রায় ৯০০ ভোটারের নাম ছিল। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির মদতে পরিকল্পিতভাবে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। কুণালের অভিযোগ, “বিজেপির অফিসে বসেই এই বাদ দেওয়া হয়েছে, কমিশন শুধু সেটাই আপলোড করেছে। তা না হলে এসআইআরের আগেই বিজেপি নেতারা কীভাবে বলে দিচ্ছেন, এত নাম বাদ যাবে?” একইভাবে কোচবিহারে কোনও বুথে ৪০০ জনের নাম বাদ গিয়েছে। ”২০০২ সালের ভোটার লিস্টে ৭১৭ জনের নাম ছিল, এখন আছে মাত্র ১৪০ জন। এতজন তো একসঙ্গে মারা যেতে পারে না! এসআইআরের আগেই নাম কীভাবে উধাও হচ্ছে?” প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল মুখপাত্র।

সাংবাদিক বৈঠকে একের পর এক তথ্য তুলে ধরেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

- কোচবিহারের নাটাবাড়ি এসির বুথ নং ২ (কালজানি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়), যা এখন কোচবিহার উত্তর এসির খাপাইডাঙ্গা গ্রামের বুথ নং ৩০৩ এর আওতাধীন, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ৭১৭ জন নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। অনলাইন ভোটার তালিকায় মাত্র ১৪০ জন দেখানো হয়েছে।
- মাথাভাঙ্গা এসির পাচাগড় গ্রামের বুথ নং ১৬০ (মাথাভাঙ্গা কলেজ, কক্ষ নং ২) -তে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ৮৪৬জন ভোটার ছিলেন। এখন, ২/২৪৪ বুথ নং ৪১৬-এ নাম শেষ হয়েছে। ৪১৭ থেকে ৮৪১ পর্যন্ত এন্ট্রিগুলি কোনও চিহ্ন ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।
- উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের হাবড়া-২ ব্লকের গুমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে, ১৫৯ নম্বর বুথের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ভোটারদের কোনও রেকর্ড নেই।
- ২০০২ সালের ৬১ নম্বর বুথের ভোটার তালিকায় ৩৪৩ থেকে ৪১৪ নম্বর ক্রমিক নম্বর পর্যন্ত এন্ট্রি নেই।
- আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরিতে, বিএলও-এর বাবা, মা ও ভাইয়ের নামও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এর পরে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সাফ জানান, “একজন বৈধ ভোটারের নামও বাদ দিতে দেব না। ইতিমধ্যেই কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। প্রতিটি বুথে, প্রতিটি বাড়িতে নজর রাখুন—পুরনো লিস্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্লক ধরে ধরে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।”

চন্দ্রিমার কথায়, “ভোটার তালিকায় যেভাবে কারচুপি হচ্ছে তাতে বিজেপির মধ্যেও ঝামেলা শুরু হয়েছে বলে খবর। কারণ, এসব করতে গিয়ে কিছু নিজেদের লোকের নামও বাদ দিয়ে ফেলেছে ওরা। আর এখন ফেঁসে গিয়ে বলছে, কমিশনের ওয়েবসাইট নাকি ক্র্যাশ করেছে। আমরা পুরো ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”

–

–

–

–
–
–
–
–


