দিল্লি থেকে মুম্বই আসার জন্য ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেননি তিনি, আজ সেই মানুষটাকে দেখতে কয়েকশো কোটি টাকার টিকিট কাটেন দেশ তথা বিশ্বের অনুরাগীরা। তারকা পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড কিংবা কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল না বটে, কিন্তু বড়পর্দায় অভিনয় করার ইচ্ছে ছিল। লক্ষ্যে অবিচল থেকে মায়ের মৃত্যুর পর মাত্র পনেরশো টাকায় স্বপ্নের মায়া নগরীতে এসেছিলেন তিনি। তারপর … তৈরি হয়েছে ইতিহাস। আজ শাহরুখ খান (Shahrukh Khan) মানে শুধু একটা আবেগ নয় একটা প্রজন্ম, একটা সময়ের স্বপ্ন। ক্যালেন্ডারের পাতায় ২ নভেম্বর দিনটা শুধু বিনোদন জগৎ নয়, গোটা দেশের কাছেই স্পেশাল। শাহরুখ ৬০ বছরে পা দিলেন, ‘ডিডিএলজে’ কিংবা ‘মহব্বতে’র চার্মিং, রোমান্টিক ‘রাজ’ সময়ের সঙ্গে চলতে চলতে আজ থেকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হয়ে গেলেন! যদিও জনপ্রিয়তায় তাতে এতটুকু ভাটা পড়েনি। শাহরুখ ফ্যানেরা জানেন তাদের প্রিয় রাহুলের বাণী, “পেয়ার এক হি বার হোতা হ্যায়..”। তাই এ হৃদয় আজও দফতর পাল্টাচ্ছে না, ক্যানভাসে সেই চেনা দু হাত প্রসারিত করা বলিউডের রোমান্টিক আইকনের ছবি আজও আছে একই রকম। ৬০ বছর বয়সেও গালে টোল পড়া হাসি আর বিনয়ী মেজাজে তিনিই বলতে পারেন, “ম্যায় হুঁ না”!
‘কিং অফ বলিউড’ কথাটা শুনতে যতটা রাজকীয় লাগে ঠিক ততটাই ছাপোষা জীবন ছিল শাহরুখের। তাঁর মা বিশ্বাস করতেন, ‘ছেলে আমার দিলীপ কুমার হবে।’ মায়ের স্বপ্নকে কখনই হারিয়ে যেতে দেননি তিনি। সিনে পাড়ার দরজায় দরজায় ঘুরে যখন বারবার “তোমাকে খারাপ দেখতে” কথাটা শুনতে শুনতে হার স্বীকার করে নেওয়ার কথা, তখন তিনি নিজেকে বুঝিয়েছিলেন, “হার কর জিতনেওয়ালে কো বাজিগর ক্যাহেতে হ্যায়”। শাহরুখ খান কোনও রূপকথা নয়, কঠোর পরিশ্রম- অধ্যাবসায় আর অদম্য ইচ্ছে শক্তির জোরে সৃষ্টি হওয়া এক অধ্যায়ের নাম। যার সূচনা ন’য়ের দশকে, ব্যাপ্তি আজও একইভাবে। তিনি বিশ্বাস করেন, চাহিদার থেকেও বড় স্বপ্ন দেখা জরুরি তা নাহলে নিজের নামকে নেমপ্লেট করা যায় না, হওয়া যায় না টাইটেল কার্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় উচ্চারিত শব্দ।
ছোটপর্দা থেকে উঠে এসে সিনেমায় সেকেন্ড হিরোর অফার, সুযোগ কাজে লাগিয়েছিলেন। তাই ব্লকবাস্টারের দুনিয়ায় নিজের নামকে স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করতে তাঁকে কেউই আটকাতে পারেননি। একটা গোটা প্রজন্মকে তিনি বিশ্বাস করিয়েছেন ভালবাসায়।তাইতো যন্ত্রণাক্লিষ্ট ছেলেটা প্রেমে প্রত্যাখ্যান পাওয়ার পরও ভালবাসার উপর বিশ্বাস হারায়নি। যে মেয়েটা রোজ রাতে বদলায় হাতে হাতে, সেও একটু অবকাশ পেলে স্বপ্ন দেখে শাহরুখের মতোই এক সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষ আসবে তাঁর জীবনে।
ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে হাতে উঠেছে জাতীয় পুরস্কার। দেশ-বিদেশের একাধিক সম্মাননা তাঁর পা-কে কখনই মাটি থেকে শূন্যে ওড়াইনি। রোমান্টিক আইকন হিসেবে যতই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছেন ততই বিনয়ী অবতারে মহিলাদের স্নেহ-শ্রদ্ধা-সম্মান দেখিয়েছেন। অভিনেতা হিসেবে নিজের কাজের ব্যাপারে যতটা খুঁতখুঁতে, প্রযোজক হিসেবে সিনেমার স্বার্থে ততটাই দরাজ হস্ত তাঁর। আসলে শাহরুখ যে স্বপ্নের সঙ্গে আপোষ করেন না। তাই কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) ক্রিকেটারদের সব সুযোগ সুবিধে দেওয়ার জন্য বাজেটের পরোয়া যেমন করেন না, ঠিক তেমনই ছেলে মেয়েকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে বাবা হিসেবে সর্বদা ভরসার হাত রেখেছেন মাথার উপর। বিতর্ক-গঞ্জনা নিরবে সয়ে গেছেন সবটা, সপাটে জবাব দিয়েছেন কামব্যাকে। প্রচারের আড়ালে সমাজ কল্যাণে নিজের কাজ করে চলেছেন আর লাইট -ক্যামেরা-অ্যাকশনের মাধ্যমে বিশ্বায়নের জগতে সারা পৃথিবীতে ভারতীয় সিনেমার সংস্কৃতির বাহক হয়ে উঠেছেন। দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবারের লড়াকু ছেলেটা নয়ের দশকে রুপোলি পর্দায় ব্যর্থ প্রেমিক বা অ্যাংরি ইয়াংম্যান হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি করেননি, বরং তিনিই পর্দায় ভারতীয় পুরুষদের শিখিয়েছেন, নারীকে সম্মান করাই আসল পৌরুষত্ব। তাইতো মহিলাদের চোখে শাহরুখ শুধু স্বপ্নের নায়ক নন তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষও বটে। তাইতো শাহরুখ বৃদ্ধ হয়েও ‘জওয়ান’।
হ্যালো মিস্টার খান, আপনি যতই সিনিয়র সিটিজেন হয়ে যান না কেন, অনুরাগী- ভক্তদের মুখে একটাই কথা ‘বালাই ষাট’!
–
–
–
–
–
–
–
