জয়িতা মৌলিক
গাড়ির স্টিয়ারিং-এ মহিলা। মহানগরীর রাজপথে একেবারেই বিরল নয়। তবে, সেই গাড়ি যদি হয় WB05-8198 নম্বরের অ্যাপ ক্যাব? থমকাতে হবেই। কারণ, এই দৃশ্য কলকাতায় বেশ বিরল। চালক দীপ্তা ঘোষ (Dipta Ghosh)। পেশায় অ্যাপ ক্যাব চালক (App Cab Driver)। জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনী দীপ্তা কেন এলেন এই পেশায়? বিশ্ববাংলা সংবাদের মুখোমুখি হয়ে জানালেন কলকাতার মহিলা ক্যাব চালকের।
জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক করে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু অতিমারীকালে মারা যান দীপ্তার বাবা। সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে বাড়ির বড় মেয়ের কাঁধে। বোন তখন লেখাপড়া করছেন। যা বেতন পান, তাতে সংসার চালানোতে সমস্যা হচ্ছিল। চাকরি করে বাড়িতে সময় দিতেও সমস্যা হয়। এই পরিস্থিতিতে দীপ্তার মা পরামর্শ দেন অ্যাপ ক্যাব চালানো। কারণ, অল্প বয়স থেকেই গাড়ি (Car) চালাতে ভালবাসেন মেয়ে। নিঃসন্দেহে বাঙালি মায়ের ব্যতিক্রমী পরামর্শ। মায়ের এই উৎসাহেই পেশাদার চালক হিসেবে স্টিয়ারিং-এ হাত রাখেন দীপ্তা।
সমস্যা হয়নি?
দীপ্তার স্পষ্ট জবাব, হয়েছে। এখনও হয়। তবে, যাঁরা খারাপ কথা বলেন, গাড়ি দিয়ে চেপে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁরা সহ-চালক বা অন্য গাড়ির ড্রাইভার। তবে, তাঁর যাত্রীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ তাঁকে সম্মান করেন। এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তাঁরা।
কলকাতার রাজপথে রাতে ভয় করে?
উত্তর দিতে একমুহূর্ত সময় নেননি কলকাতার মহিলা ক্যাব চালক (App Cab Driver)। সাফ জানালেন, কলকাতার রাস্তায় নিরাপত্তা নিয়ে কোনও সমস্যা কখনও হয়নি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী
ক্যাব চালকের কাজটাই করতে চান। এই কাজ করতে দীপ্তা ভালবাসেন। চিরকালই অ্যাডভাঞ্চার পছন্দ তার। ইঞ্জিনিয়ার হলেও, ছোট থেকে চেয়েছিলেন পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে। এক জায়গায় বসে ১০-৫টার কাজ তাঁর না পসন্দ। সেই কারণেই এই চারচাকায় চক্কর তাঁর ভালো লাগছে।
জীবনসঙ্গীর হাতে কবে হাত রাখবেন দীপ্তা?
প্রশ্ন শুনে সলাজ হাসি ডাকাবুকো তরুণীর। জানালেন, বিশেষ কেউ এখনও না কি জীবনে আসেনি। তবে, বিয়েতে আপত্তি নেই। কিন্তু পেশা ছাড়বেন না মহিলা অ্যাপ ক্যাব চালক।
দীপ্তা চান আরও মহিলারা এগিয়ে আসুন এই পেশায়। শুধু পেশাদার গাড়ির চালক হিসেবে নয়, চালক হিসেবেই স্টিয়ারিং-এ হাত রাখুক মেয়েরা। যেভাবে মহিলারা সংসারের চালিকাশক্তি, সেই ভাবেই গাড়ির চালকের আসনেও বসুন আজকের নারীরা- বার্তা দীপ্তার।
–
–
–