বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও মনীষীদের ক্রমাগত অপমান-অসম্মানের বিরোধিতায় উত্তাল হল কলকাতা পুরসভা। ডবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বাংলার বরেণ্য মনীষীদের অপমান করছেন, তার প্রতিবাদে এবার ঝড় উঠল পুরসভার মাসিক অধিবেশনেও। তৃণমূল কাউন্সিলরেরা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতেই ইচ্ছাকৃতভাবে অধিবেশনে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেন গুটিকয় বিরোধী কাউন্সিলর। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল জনপ্রতিনিধিরাও। শেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামতে হয় চেয়ারপার্সন মালা রায়কে।
সাম্প্রতিককালে বাংলার মনীষীদের অসম্মানের নিন্দা করে বুধবার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে বিশেষ প্রস্তাব আনেন ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী। প্রস্তাবনায় তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃতদের অসম্মান এবং অবমাননা করা হচ্ছে। তাই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার বিপ্লবীদের কী অবদান ছিল কিংবা বাংলায় নবজাগরণে বঙ্গমনীষীদের গুরুত্ব কতখানি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে গদ্দারদের কী ভূমিকা ছিল; এসব নিয়ে এক বিশেষ ‘পুরশ্রী’ সংখ্যা প্রকাশের আবেদন জানান তিনি।
এরপরই বক্তব্য রাখতে গিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করেন এক বিজেপি কাউন্সিলর। প্রবল বাদানুবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন। পাল্টা জবাবে বিরোধীদের ধুয়ে দেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। তাঁর কথায়, বাংলার নবজাগরণের পথিকৃতদের নিয়ে ‘পুরশ্রী’র বিশেষ সংখ্যা অবশ্যই প্রকাশিত হবে। একইসঙ্গে যারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে বেইমানি করে ব্রিটিশদের দালালি করেছেন, তাদের নিয়েও পুরশ্রী’র একটি সংখ্যা প্রকাশের দাবি করেন দেবাশিস কুমার।
বঙ্গ-মনীষীদের অপমান নিয়ে তীব্র আক্রমণে বিজেপিকে কোনঠাসা করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। মহানাগরিকের কথায়, শুধু পুরশ্রী নয়, আমরা দ্য গ্রেট ক্যালকাটা গেজেটও পুনরায় চালু করছি। বাংলার অপমান নিয়ে আগেও কলকাতায় প্রতিবাদ হয়েছে, এখন পুরসভাতেও প্রতিবাদ হবে। কারণ, কলকাতা পুরসভা ব্রিটিশ আমল আগে থেকেই প্রতিবাদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের আঁতুড়ঘর। তাই বাংলার স্বার্থে, বাঙালির স্বার্থে পুরসভা থেকে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠবেই। আমাদের কাজ শুধু ড্রেন পরিষ্কার, আলো দেওয়া কিংবা রাস্তা সারাই নয়! এদিনের ঘটনা নিয়ে চেয়ারপার্সন মালা রায় বলেন, পুরসভার অধিবেশনে সবসময় পুর-সংক্রান্ত বিষয়েই আলোচনা হবে। কলকাতা পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের থেকে সেটাই কাম্য। এখানে কোনওরকম ব্যক্তিগত আক্রমণ কিংবা অধিবেশনের শালীনতা ভঙ্গ করা গ্রহণযোগ্য নয়।
আরও পড়ুন- যাতায়াতের আগে জেনে নিন: ডিসেম্বর-মার্চে ২৪টি ট্রেন বাতিল! প্রকাশ রেলের পূর্ণ তালিকা
_
_
_
_
_
_
