ভোটার অথৈ জলে বিভ্রান্ত BLO , রাজ্য থেকে দেশ সর্বত্রই মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ছেলেখেলা অব্যাহত। কয়েকটা চেনা দৃশ্যে গোটা ঘটনাটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে সবার সামনে।
দৃশ্য ১: ২০০২ সালে দিব্যি ভোট দিয়েছেন নিজের কেন্দ্রে কিন্তু এবার সার প্রক্রিয়ায় তাঁর নাম চিরুনি তল্লাশি করেও পাওয়া গেল না। ভ্রু কুঁচকে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন মহিলা ঢাকুরিয়া এলাকার একটি ভোটরক্ষা শিবির কেন্দ্রের পাশে। হাতে রয়েছে ফাইল ভর্তি নাগরিকত্বের প্রমাণ। উঁকি দিচ্ছে পাসপোর্টও কিন্তু তাতে লাভ কি?
দৃশ্য ২: অশীতিপর মহিলা লাঠিতে ভর দিয়ে শিবিরে এসে কেঁদে ফেললেন; এই বয়সে এসব আর পেরে উঠছেন না। জানালেন প্রবাসী সন্তানরা প্রতিদিন অশান্ত হয়ে উঠছে কিভাবে জমা দেবে ফর্ম? সাইট খুলছে না বেশিরভাগ সময়ে। খুললেও ফর্ম ভর্তি করার পর হঠাৎ লিঙ্ক নেই। ফ্লাইট ভাড়া হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে প্রতিদিন।
এই দৃশ্য এই মুহূর্তে খুব চেনা গোটা দেশ জুড়েই। এদিকে আবার ২০০২-এর লিঙ্কেজ ম্যাপিং করাতে গেলে অ্যাপে দেখাচ্ছে ‘নো রেকর্ডস ফাউন্ড’। স্বাভাবিকভাবেই এর পরে ভোটার ও বিএলও দু’জনেই অন্ধকারে, কারোর কাছেই সঠিক উত্তর নেই। এরপরে ওই ফর্মটি কী ভাবে ডিজিটাইজ় হবে এই নিয়ে মাথায় হাত। আবার এনিউমারেশন ফর্ম ফিলআপ করে বিএলও-র হাতে জমা দিয়েছেন ভোটার। শুধু তাই নয়, তিনিও নিজের লিঙ্কেজ দেখিয়েছেন ফর্মে। কিন্তু তাঁর ফর্ম এখনও সংশ্লিষ্ট বিএলও অ্যাপে আপলোড করে উঠতে পারেননি ‘টেকনিক্যাল এরর’-এর ফলে। এনিউমারেশন ফর্ম ভরার সময় ২০০২-এর ভোটার তালিকার হার্ড কপি এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) ওয়েবসাইটে থাকা সফট কপির সঙ্গে মিল নেই বহু ভোটারের। ২০০২-এর লিঙ্কেজ দেখাতে গিয়ে চরম সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আবার লিঙ্কেজ সিইও ওয়েবসাইটে থাকা সফট কপি থেকে দেখানোর পরেও এই বিভ্রাট। বুঝতে পারছেন না ভোটার ও বিএলও দু’জনের কেউই। আপাতত বিপুল সংখ্যক বিএলও তাঁর সুপারভাইজ়ার বা সংশ্লিষ্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারের (ইআরও) তরফ থেকে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষা করছেন। আর ভোটার? তারা তো প্রথম থেকেই অথৈ জলে। সিইও-র ওয়েবসাইটে থাকা ২০০২-এর লিস্টে তাঁর নাম থাকলেও কেন এখনও তাঁর এনিউমারেশন ফর্ম জমা হল না, আবার তাঁকে ২০০২-এর নথি যাচাইয়ের জন্য ইআরও নোটিস পাঠাবেন কি না সেই নিয়েই আতঙ্কে সকলেই।
বহু রাজ্যের বহু ভোটারের ক্ষেত্রেই ডেটা ডিজিটাইজেশনের সময়ে ২০০২-এর ম্যাপিংয়ে এমন সমস্যা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিএলও-রা এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। অনেকের আবার অনলাইনে নিজের ফর্ম ফিলআপ করতে গিয়ে ২০০২-এর লিঙ্কেজ দেখাতে সমস্যা হয়েছে। স্ক্রিনে দেখাচ্ছে ‘নো রেকর্ডস ফাউন্ড’। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সেই ডেটাও সিইও অফিসের সাইট থেকেই নেওয়া। যদিও কমিশনের ব্যাখ্যা অ্যাপে এই প্রযুক্তিগত ত্রুটি যদি শোধরানো না-যায়, তবে ইআরও-এর হিয়ারিংয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় লিঙ্কেজ দেখালেই চলবে। কিন্তু এই সমাধান যে একেবারেই নাগরিকদের স্বস্তি দিচ্ছেনা সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই।
–
–
–
–