রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতার রবীন্দ্রসদনে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির উদ্যোগে শুরু হলো ২৫তম নাট্যমেলা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী—ইন্দ্রনীল সেন, অরূপ বিশ্বাস এবং ব্রাত্য বসু। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নাট্য আকাদেমির সভাপতি দেবশঙ্কর হালদার, অভিনেত্রী ও প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, নাট্যব্যক্তিত্ব কৌস্তুব তরফদার এবং শান্তনু চক্রবর্তী। মঞ্চে ছিলেন নাট্য জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও। মঞ্চে তাঁদের বক্তব্যে উঠে এসেছে রাজ্যের নাট্যচর্চার বিস্তার, শিল্পীদের পরিশ্রম এবং নাট্যমেলাকে আরও বৃহৎ পরিসরে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দুটি নাম—তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক কৌস্তভ তরফদার এবং নাট্য আকাদেমির সচিব শান্তনু চক্রবর্তী। নাট্যমেলা আয়োজনের নেপথ্যের পরিকল্পনা, শ্রম ও নিষ্ঠার জন্য তাঁদের প্রশংসা করেন অতিথিরা।
মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেবশঙ্কর হালদারের মতো মানুষকে নাট্য আকাদেমির চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট করার জন্য যিনি থিয়েটারের বিষয়টি ভালোভাবে বোঝেন। থিয়েটারের বিকেন্দ্রীকরণের কথাও বলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, আমি একজন দর্শক। আমায় মঞ্চে জায়গা করে দেওয়ার জন্য নাট্য আকাদেমিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাট্য আকাদেমির সভাপতি দেবশঙ্কর হালদার বলেন, নাট্যমেলা যেন এক তরুণ সত্তা—যার মধ্যে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস যেমন রয়েছে, তেমনই অভিজ্ঞতার পরিমিত বোধও যোগ হয়েছে। তাঁর কথায়, “তোমার মধ্যে যে তারুণ্য আছে তা প্রকাশ ঘটাও। তবে সেই উত্তেজনার সঙ্গে অভিজ্ঞতা মিশিয়ে চারপাশকে সুন্দর করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”
প্রসঙ্গত, এ বছর রাজ্যের মোট দশটি স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাট্যমেলা। নাট্য আকাদেমি জানিয়েছে, মোট ১৬৩টি নাটক মঞ্চস্থ হবে দশ দিনের এই উৎসবে। বিভিন্ন জেলার দলগুলি তাঁদের সৃজনশীল কাজ নিয়ে হাজির হবে মঞ্চে। ৭ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই নাট্যমেলার আসর। শহরের একাধিক নাট্যমঞ্চ—রবীন্দ্রসদন, শিশির মঞ্চ, তৃপ্তি মিত্র সভাগৃহ, ঘিরিশ মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চ—সব জায়গাতেই গমগম করবে নাট্যচর্চার উচ্ছ্বাস। পাশাপাশি একতারা মুক্তমঞ্চে থাকবে লোক-নাট্যরূপের প্রদর্শনী। তৃপ্তি মিত্রর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কানেস্ত শিল্প প্রদর্শনীতে দেখা যাবে ‘অপরাজিতা’—তাঁর অভিনয়জীবনের এক অনবদ্য উপস্থাপনা। এছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন লোকসাংস্কৃতিক ধারার—বেহুলা-লখিন্দর, আলকাপ, পুতুলনাচ, ডাং, রং-পাঁচালি, ভাঁড়যাত্রা—এক একটুখানি ঝলকও উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা।
নাট্যদলগুলোর উন্নয়ন ও উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি প্রতি বছর ৪০০টি দলকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করে থাকে। এদিনের মঞ্চেও বক্তারা উল্লেখ করেন, এই আর্থিক সহায়তা বাংলায় নাট্যচর্চাকে আরও শক্তপোক্ত করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২৫তম বর্ষে পদার্পণ করা এই নাট্যমেলা ক্রমেই রাজ্যের সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডারে এক অনন্য পর্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে।
আরও পড়ুন- প্রয়াত চলচ্চিত্রের যুগান্তরের সাক্ষী কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়, শোকের ছায়া টলিউডে
_
_
_
_
_
_
