Tuesday, December 9, 2025

গীতাপাঠের মাঠে ‘বাংলাদেশী’ বলে বাঙালিকে মার! গো-বলয়ের রাজনীতিতে সরব তৃণমূল

Date:

গোবলয় থেকে সাধু সন্তদের এনে মঞ্চ ভরালো বিজেপি। নাম হল গীতাপাঠ। মাঠ ভরালো রাম-হনুমানের ধ্বজা। এহেন বহিরাগত সংস্কৃতির আরাধনা যখন রবিবাসরীয় ব্রিগেডে (Brigade Parade Ground), ঠিক তখনই মাঠের পাশে মার খেলেন বাংলার ফেরিওয়ালারা। রবিবারের শীতের সকালে কিছু খাবার ফেরি করে সংসার চালানোর চেষ্টা করা মানুষদের আমিষ খাবার (non-veg food) বিক্রি করার ‘অপরাধে’ বেধড়ক মারধর করল কিছু তিলকধারী ফেট্টিবাঁধা বিজেপির সমর্থক-কর্মী। ঘটনায় পুলিশের দ্বারস্থ হন ফেরিওয়ালারা (vendor)। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বেছে বেছে বাঙালিদের উপর এই অত্যাচারে বিজেপির স্বরূপ তুলে ধরল বাংলার শাসকদল তৃণমূল (TMC)। ক্ষমতায় না এসেই যে দল বাঙালির সংস্কার-রুচির (Bengali culture) উপর যে আঘাত এনেছে, তার বিরুদ্ধে সময় থাকতে থাকতে প্রতিবাদের ডাক তৃণমূল নেতৃত্বের।

রবিবার বিজেপির প্রচ্ছন্ন কার্যক্রমকে ধর্মের রঙ দিয়ে গীতপাঠের (Gitapath) আসর বানিয়ে বাংলায় ভোটের আগে নিজেদের জমি বানানোর চেষ্টায় বঙ্গ বিজেপির (BJP) নেতারা। আর সেখানেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে মার খেলেন গ্রামবাংলার দরিদ্র মানুষ। অপরাধ? অন্যদিনের মতো সেদিনও তাঁরা ময়দানের ধারে নিজেদের ব্যবসার পসরা সাজিয়ে নিয়ে বসেছিলেন। আর সেই পসরায় ছিল আমিষ খাবার। সামান্য চিকেন প্যাটিস (chicken patties)। যা ময়দানের ধারে প্রতিদিন বিক্রি করে তাঁরা নিজেদের সংসার চালান। রবিবার সাধারণত বিক্রি একটু বেশিই হয়। কিন্তু গীতপাঠের আসর বসায় যে তাঁদের রুটিরুজি খোয়াতে হবে, তা হয়তো তাঁরা ভাবেননি। শুধু তাই-ই নয়। উগ্র হিন্দুদের হাতে মার খেয়ে, নিজেদের ব্যবসার প্যাটিস মাটিতে ফেলে নষ্ট করে বাড়ি ফিরতে হবে, তা বোধহয় তাঁরা স্বপ্নেও ভাবেননি।

ইডেন গার্ডেন থেকে ময়দান পর্যন্ত খেলার মাঠের ধার ধরে বহু ফেরিওয়ালা বিভিন্ন ধরনের খবার বিক্রি করেন। শেখ রিয়াজুল, শেখ সালাউদ্দিন, মুনতাজুদ্দিন মণ্ডলও সেখানে প্যাটিস বিক্রি করেন। রবিবার মাঠের ধারে তাঁদের দেখেই চড়াও হয় কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী। তাঁদের নাম জানার পরই তাঁদের ‘বাংলাদেশী’ (Bangladeshi) বলে দাবি করে হামলাকারীরা। তারপরই মারধর। ও শেষে প্যাটিসের বাক্স খুলে প্রত্যেকের প্রায় হাজার দুয়েক টাকার খাবার মাটিতে ফেলে দিয়ে নষ্ট করে তারা। পরে পরিস্থিতি সামলাতে ময়দান থানার পুলিশ (Maidan police station) শেখ সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করে। যদিও এর মধ্যে কিছু মানুষ উগ্র হামলাকারীদের থামাতে শান্ত থাকার আবেদনও করেন। কিন্তু তাতে কান দেয়নি হামলাকারীরা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সরব শাসকদল তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল মুখপাত্র কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী (Arup Chakraborty) দাবি করেন, বাঙালির উপর চড়াও হচ্ছে বিজেপির আরএসএস-এর (RSS) উগ্র হিন্দুত্ব বীররা। কার উপর চড়াও হল। একজন দরিদ্র সাধারণ প্যাটিস বিক্রেতাকে (patties vendor)। রাজ্যে ক্ষমতায় নেই। ক্ষমতায় আসা তো দূর অস্ত। পরের বার বিরোধী দল থাকবে কি না তারও নেই ঠিক। তাতেই তারা আক্রমণ করছে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসকে।

আরও পড়ুন : বিএলওদের সুরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্র- কমিশনের, SIR মামলার শুনানিতে জানালো সুপ্রিম কোর্ট

সেই সঙ্গে এই বিজেপির এই ভাবে গো-বলয়ের রাজনীতিকে বাংলায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা রুখতে বাঙালিকেই জোট বাঁধতে হবে, আহ্বান তৃণমূল নেতৃত্বের। অরূপ চক্রবর্তীর আবেদন, আগামী দিন বিজেপি ঠিক করে দেবে বাংলার মানুষ কী খাবেন আর না খাবেন। বাংলার বুকে যদি এই অসভ্যতামি হয় বাংলার মানুষ বরদাস্ত করবে না। সাড়ে দশকোটি বাঙালির কাছে আবেদন রইল – সোচ্চারে প্রতিবাদে থাকার। ওরা আমাদের সংস্কৃতিকে আঘাত হানতে চাইছে। এই আঘাত বাঙালি জাতি সত্ত্বার উপর আঘাত। একইভাবে বাঙালির প্রতি আবেদন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি সুদীপ রাহার (Sudip Raha), এই বিজেপিকে রুখতে জোট বাঁধতে হবে বাঙালিকে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই বিজেপিকে ২০২৬-এর নির্বাচনে শূন্য করে দিতে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে হবে।

Related articles

ফিরছে পুরনো ম্যাজিক, দেড় দশক পর বড়পর্দায় ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর সিক্যুয়েল!

কাস্টিংয়ে কোন পরিবর্তন নেই, বন্ধুত্বটাও এত বছর রয়ে গেছে নিখাদ, প্রেমের সমীকরণ বদলেছে কি? প্রায় পনেরো বছর পর...

কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই: কোচবিহার থেকে দলের কর্মীরদের বার্তা দলনেত্রীর

ভোটার তালিকায় এসআইআর প্রক্রিয়ায় সমস্যায় পড়া মানুষদের সাহায্যের জন্য দলের নেতৃত্বদের একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো...

অচলাবস্থার জেরে শাস্তির মুখে ইন্ডিগো, কেড়ে নেওয়া হতে পারে শতাধিক বিমান!

একটা গোটা সপ্তাহ জুড়ে একের পর এক উড়ান বাতিলের জেরে চূড়ান্ত যাত্রী হয়রানি আর লোকসানের পর অবশেষে ইন্ডিগো...

টি২০ সিরিজ শুরুর আগেই জগন্নাথ ধামে গম্ভীর, সঙ্গে ছিলেন কারা?

বরাবরই তিনি  ভক্তিবাদী, ঈশ্বরের প্রতি অগাধ আস্থা। কলকাতায় এলেই যান কালীঘাট মন্দিরে। গুয়াহাটি গেলে কামাখ্যা দর্শন করেন। এবার...
Exit mobile version