অপরাধী আর নিরপরাধ। প্রমাণ করতেই বহু মানুষের জীবনের অমূল্য বহু সময় কেটে যায় গারদের ওপারে। এপারে বসে অপেক্ষা করে পরিবার। শাস্তির মেয়াদ পার করে, এমনকি অপরাধমুক্ত প্রমাণিত হওয়ার তাঁদের নিজেদের পরিবার তাঁদের ফিরিয়ে নিতে চায় না। কারণ তাঁদের গায়ে লেগে যায় ‘জেলখাটা’ তকমা। সমাজই সেটা দিয়ে দেয়। কিন্তু দেশের নাগরিক হিসাবে তাঁদেরও সমান মর্যাদায় বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারের কাহিনী তুলে ধরেই তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘আই অ্যাম আ সিটিজেন টু: দ্য আনটোল্ড ফাইট ফর আ ফেয়ার সেকেন্ড চান্স’ (I am a Citizen too)।
শুক্রবার কলকাতা যাদুঘরের (Calcutta Museum) প্রেক্ষাগৃহে হয়ে গেল জেলবন্দিদের (jail inmates) জীবনের এই চরম বাস্তব নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রের। কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) আইনজীবী সম্পূর্ণা ঘোষ জেলবন্দিদের সঙ্গে দীর্ঘ পরিচিতর সূত্র ধরেই তাঁদের জীবনের এই দিকটি তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন। কোনও ব্যক্তির অতীত যে তাঁর ভবিষ্যৎকে পরিচিতি দেয় না, এই তথ্যচিত্রে সেই দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।
এই তথ্যচিত্র প্রসঙ্গে পরিচালক তথা আইনজীবী (lawyer) সম্পূর্ণা ঘোষের অভিব্যক্তি, অপরাধ, ভুল সবাই করে। কোনটা ইচ্ছাকৃত, কোনটা নয়, সেটা একজন মানুষের বাকি জীবনকে নির্ধারণ করবে কেন? জেল থেকে বেরিয়ে এলে সমাজ যেন তাঁদের উন্মুক্ত বাহুতে গ্রহণ করে। আরও একটা সুযোগ তাঁদের প্রাপ্য। অপরাধ প্রবণতা ও দুর্ঘটনায় অপরাধী হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একটি ছাঁকনি ব্যবহার করে যাঁরা সুযোগের যোগ্য, তাঁদেরকে সমাজের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান সম্পূর্ণা।
এই বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে (special screening) উপস্থিত ছিলেন একঝাঁক বিশিষ্ট ব্যক্তি। জেলবন্দিদের নিয়ে যে নতুনভাবে কিছু ভাবা যায় তা প্রথম এই রাজ্য তুলে ধরেছিলেন নৃত্য শিল্পী অলকানন্দা রায় (Alakananda Roy)। লাগাতার আজও তিনি সেই কাজ করে চলেছেন। ফলে এরকম অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি ছিল কাম্য। সেই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার (Presidency Jail) ও দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের (Dumdum Central Jail) বন্দিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
আরও পড়ুন : টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের উদ্যোগে শুরু অলিম্পিকা নাইট, অতিথি প্রণয়
যে জলবন্দিদের জীবনকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ, তাঁদের প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ জানান, কে অপরাধী আর কে নয়, তা প্রমাণ করতেই নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। এরপর যখন অপরাধী নয় বলে প্রমাণিত হয়ে কোনও মানুষ দীর্ঘদিন জেলে কাটানোর পরে বাইরে আসেন, তখন সমাজ তাঁদের খোলা মনে গ্রহণ করে না। কারণ তাঁদের সঙ্গে সেই ‘জেলখাটা’ তকমা লেগে যায়। সে দোষ করেছে কী করেনি, তা সমাজ ভাবে না। ওই তকমা লাগাতে সমাজ খুব পছন্দ করে। অথচ সেই সমাজেই যে কত কত খারাপ কাজ করা মানুষ ঘুরে বেড়ায়।
–
–
–
–
