বড়দিনে বড়পর্দায় মুক্তি পেল ‘প্রজাপতি ২’ (Prajapati 2)। ছবি নির্মাতারা প্রথম থেকেই বলে এসেছেন এই ছবি বাবা- সন্তানের গল্প বলবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। কখনও তা হয়ে উঠেছে মিঠুন চক্রবর্তী ও দেবের (Mithun Chakraborty and Dev) গল্প, কখনও আবার সাংসদ অভিনেতার সঙ্গে শিশুশিল্পী অনুমেঘার মিষ্টি সমীকরণ। কিন্তু অভিজিৎ সেন (Abhijit Sen) পরিচালিত সিনেমার নামকরণের মূল অর্থ প্রাসঙ্গিকতা হারালো ছবির মাঝপথেই।


চিত্রনাট্য থেকে সংলাপ বেশিরভাগটাই তৈরি হয়েছে মূল দুই অভিনেতাকে কেন্দ্র করে। ফলে পার্শ্বচরিত্রে অপরাজিতা আঢ্য, শকুন্তলা বড়ুয়া, অনির্বাণ চক্রবর্তীদের (Anirban Chakraborty) সেভাবে বিশেষ কোনও পরিসর দেওয়া হয়নি। খরাজ মুখোপাধ্যায় (Kharaj Mukherjee) আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তাঁর সিগনেচার স্টাইলে কমিক টাইমিংয়ের সঙ্গে ইমোশনকে মিশিয়ে দিতে। কাঞ্চন মল্লিক খুব একটা আহামরি নন। কিন্তু অপরাজিতার (Aparajita Adhya) মতো বলিষ্ঠ অভিনেত্রীকে কেন সেভাবে অভিনয়ের যথেষ্ট জায়গায় দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডু এই ছবিতে ডেবিউ করলেন। কিন্তু সিনেমা দেখার পর তাঁর নিজেরও মনে হবে আদৌ কি তিনি কিছু করার সুযোগ পেয়েছেন? ‘প্রজাপতি’ সিনেমার সহজ ফর্মুলাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালির আবেগ ব্যবহার করে ‘প্রজাপতি ২’ নামের ইমোশনের ফিউশন রান্না করতে গেছিল বেঙ্গল টকিজ ও দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্স। কিন্তু ‘বাবারা সন্তানদের জন্য সবকিছু করতে পারে’ এই চেনা ট্যাগলাইন ছাড়া সিনেমার বিশেষ কোনো প্রাপ্তি প্রায় নেই বললেই চলে।


বাঙালি মননে ‘প্রজাপতি’ বলতে ঠিক যে ধরনের ভাবনার সৃষ্টি হয় সেরকম এক ধারণাকে উপলক্ষ্য করে সিনেমার শুরু হলেও আসলে যে এটা শুধুমাত্র বিয়ে কেন্দ্রিক গল্প নয়, তা দ্বিতীয়ার্ধে সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। বাবা-সন্তানের সমীকরণ- আবেগ-টানাপোড়েন এবং সর্বোপরি ভালবাসার টান, এ ছবির উপজীব্য বিষয়। মা-হারা ছোট মেয়েকে নিয়ে প্রবাসী বাবার জীবন যাপনের মুহূর্তের সঙ্গেই ধরা পড়েছে শহর কলকাতায় পড়ে থাকা মধ্যবিত্ত বৃদ্ধের ছেলের জন্য বাড়তে থাকা চিন্তার ছবি। চক্রবর্তী বাড়ির বর্ষীয়ান কর্তা বিদেশে থাকা ছেলেকে যতটা ভালবাসেন, মেয়েকে নিয়েও তাঁর সেই একই আবেগ কাজ করে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেল। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কেন পরিচালক এমন ভাবনাকে প্রশ্রয় দিলেন তার উত্তর জানা নেই। প্রথম স্ত্রীর (ইধিকা) মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে জয় চক্রবর্তী (দেব) বাকি জীবন কাটাতে চান, কিন্তু কলকাতায় তাঁর বাবা মার দুশ্চিন্তা কমে না। ছেলে তবু দ্বিতীয়বার বিয়েতে নারাজ। অগত্যা বাবা (মিঠুন চক্রবর্তী) হাজির হন বিদেশে, ছেলের কাছে। নাতনির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন বৌমা আনতে বদ্ধপরিকর তিনি। হাসি-মজার মাঝে আচমকাই বদলে যায় পরিস্থিতি। শাকিবুলের (অনির্বাণ চক্রবর্তী) কলকাঠিতে চাকরি হারায় জয়। তারপর.. বাবা-ছেলে একসঙ্গে শুরু করেন স্বপ্ন ছোঁয়ার লড়াই। যদিও তার জন্য খুব একটা বেশি স্ক্রিনটাইম নেই। তবে লন্ডনের গল্প যে কলকাতাতে সমাপ্ত হবে তা বেশ বোঝা যায়। এই ছবিতে নামের সঙ্গে মিলিয়ে কাঙ্খিত ক্লাইম্যাক্সের পথে না হেঁটে পরিবারের শিকড়কে আঁকড়ে ধরার কথা বলতে চেয়েছেন অভিজিৎ। কিন্তু দেব এবং মিঠুন চক্রবর্তীকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অপরাজিতা বা অনির্বাণ চক্রবর্তীর মতো অভিনেতাদের সেভাবে জায়গা দেওয়া হয়নি।

ইমোশানাল ডায়লগে বাংলা বাঙালি কৃষ্টি সংস্কৃতির কথা বলা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা অপ্রয়োজনীয়। দেবের মনোলগ এখনও বেশ একঘেয়ে। হঠাৎ করে সামান্য একটা কারণে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতাকে নিয়ে এসে ‘টনিক’ বা ‘প্রধান’ নস্টালজিয়া উসকে দিতে চেয়েছিলেন নির্মাতারা। কিন্তু সিনেমার জন্য সেটা কখনই অত্যাবশ্যকীয় ছিল না। সুপারস্টার অভিনেতার (যাঁকে আজকাল মেগাস্টার বলেও সম্বোধন করা হয়) নাচের পারফরমেন্সে আগের থেকে অবনতি ঘটেছে। বড়পর্দায় যা চোখে লাগে। ছবি চলন আগেভাগেই অনুমান করা যায়। ক্লাইম্যাক্স একটা টুইস্ট রয়েছে ঠিকই কিন্তু সেখানেও আবার সেই আবেগের সুড়সুড়ি দিয়ে মন জেতার চেষ্টা। একটা বা দুটো গান ছাড়া বাকিগুলোর স্থায়িত্ব বেশি দিনের নয়।
চকচকে ফ্রেমে ফাঁপা কনটেন্ট, হতাশ করল কার্তিক-অনন্যার নতুন বলিউড ছবি


বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলা ছবিতে একটা নতুন ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে, যেখানে পারিবারিক গল্প মানেই হারিয়ে যাওয়া বাঙালিয়ানা কিংবা জেন জি প্রজন্মের সুপারফাস্ট যুগে পরিবারের সদস্যদের আত্মিক বন্ধন তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। গল্পের রান্না ও রেসিপি দুটোই পুরনো কিন্তু পর্দায় গৌড় চক্রবর্তী ও জয় চক্রবর্তী যত ভালোই রাঁধুনি পাওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, গল্প ও চিত্রনাট্যের বিন্যাসে শুধুমাত্র আবেগের ফোড়ন দিয়ে এ সিনেমা বেশিদিন হলে টিকে থাকতে পারবে না।

–

–

–

–

–
–


