আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপরেই নতুন বছর। ২০২৬। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। কিন্তু এমনও এক দেশ রয়েছে যেখানে এখনও ২০১৮ সাল চলছে। কী অদ্ভুত! টাইম মেশিনে আমরা কি প্রায় ৮ বছর পিছিয়ে গেলাম! যে দেশে এখনও ২০১৮ সাল চলছে সেটি হল ইথিওপিয়া। ইথিওপিয়া হল আফ্রিকার দ্বিতীয় জনবহুল দেশ।

ইথিওপিয়া তাদের নিজস্ব ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার (Ge’ez Calendar) ব্যবহার করে। যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে প্রায় ৭-৮ বছর পিছিয়ে। এই ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হল- গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১২ মাসে এক বছর হলেও Ge’ez ক্যালেন্ডারে ১৩ মাসে এক বছর। এক বছরে থাকে ১৩টি মাস! ১২টি মাস ৩০ দিন করে আর অতিরিক্ত মাসটি হল পাগুমে, যাতে থাকে ৫ দিন আর লিপ ইয়ারে ৬ দিন। দেশটির এই ব্যতিক্রমী সময় গণনার কারণে দেশটিকে অনেক সময় বলা হয় “দ্যা কান্ট্রি দ্যাট লিভস ইন দ্য পাস্ট”।

কী এই Ge’ez ক্যালেন্ডার?
এই ক্যালেন্ডার যিশু খ্রিস্টের জন্ম সালকে ভিন্নভাবে গণনা করে, যার ফলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর পিছিয়ে। ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারে ১২টি ৩০ দিনের মাস এবং একটি অতিরিক্ত ৫ বা ৬ দিনের মাস থাকে, যা মোট ১৩ মাস হয়। ইথিওপিয়ানরা নতুন বছর উদযাপন করে সেপ্টেম্বর মাসে। প্রতি ৪ বছরে Pagume মাসে একদিন বেশি যুক্ত হয়। অর্থাত্ লিপ ইয়ারে Pagume মাস হয় ৬ দিনের। ইথিওপিয়ানয়ে সময় গণনা শুরু হয় সকাল ৬টা থেকে। সুতরাং যখন তাদের ওখানে ১টা মানে আমাদের এখানে তখন সকাল ৬টা। এই ক্যালেন্ডার মূলত ‘Coptic’ ক্যালেন্ডারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। বিভিন্ন ধর্মীয় উত্সব যেমন ‘Timkat’, ‘Fasika’ ও ‘Genna’ এই ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পালিত হয়।
সরকারি কাজ থেকে শুরু করে স্কুল,কলেজ- সব জায়গায় এই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর পাশাপাশি চালু আছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ব্যবহারও। এই ক্যালেন্ডার শুধুমাত্র সময় মাপার একটি পদ্ধতি নয়, এটি হল ইথিওপিয়াদের জাতীয় পরিচয়ের একটি অংশ। এটি তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক।

এই দেশে আসা পর্যটকদের কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে এখানকার আফার অঞ্চলকে সবচেয়ে প্রাচীন বলা হয়। বিশ্বাস করা হয়, মানুষ এখানে প্রথম বসবাস শুরু করেছিল। খননকালে ৩.২ মিলিয়ন বছরের পুরনো একটি হোমিনিড কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল সেখানে।

ইথিওপিয়া খুবই রক্ষণশীল খ্রিষ্টান দেশ। বাকি বিশ্বে কী হচ্ছে না হচ্ছে, এ দেশের অধিকাংশ লোকই তার তোয়াক্কা করে না।

–

–

–



