Saturday, December 27, 2025

রাজনীতি নয়, অর্থই অনর্থের মূল

Date:

Share post:

জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের কিনারা হল। আর তার সঙ্গে আপাতত রাজনৈতিক টানাপোড়েনের তত্ত্বেও জল পড়ল। স্কুলশিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি ও ৬ বছরের ছেলে অঙ্গনকে খুনের পর থেকেই এর মধ্যে রাজনীতির রং লাগে। প্রথমে আরএসএস দাবি করে, বন্ধুপ্রকাশ তাদের দলের সংগঠক। পরে সেই অবস্থান থেকে তারা কিছুটা সরে এলেও, মাঠে নামে গেরুয়া শিবির। বারবার নিহত শিক্ষককে তাদের দলের কর্মী বলে দাবি করে এই ঘটনায় পরোক্ষভাবে শাসকদলকে নিশানা করে বিজেপি। এমনকী, এ নিয়ে মহানগরে মিছিল ও গান্ধিমূর্তির সামনে বিক্ষোভ সভায় করা হয়। শুধু গেরুয়া শিবিরই নয়, ঘোলা জলে মাছ ধরে নেমে পড়ে কংগ্রেস, সিপিআইএমও। অধীররঞ্জন চৌধুরী থেকে সুজন চক্রবর্তী—সকলেই খুনের ঘটনায় রাজ্য সরকারে ব্যর্থতা ও তৃণমূলের ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সামনে আনেন। এমনকী, চিত্র পরিচালক তথা অভিনেত্রী অপর্ণা সেনও এর মধ্যে রাজনীতির গন্ধ পান।

কিন্তু ঘটনার সাতদিন পর উৎপল বেহেরা নামে বছর কুড়ির এক তরুণের গ্রেফতারির পরেই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। রক্তমাখা বিমার কাগজ, মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশনের সূত্র ধরে মুর্শিদাবাদেরই সাগরদিঘি থেকে উৎপলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার সংবাদিক বৈঠকে জানান, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত। ২৪ হাজার বীমা নিয়ে টাকা নিয়ে গোলমালের জেরেই এই হত্যালীলা। শুধু তাই নয়, এতে জড়িয়ে ছিল অপমানও।

উৎপল বেহেরা মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও, তাঁর রোজগার তেমন ছিল না। বেশি রোজগারের আশাতেই বাবা নামে বন্ধুপ্রকাশ পালের কাছে বীমার পলিসি করান তিনি। অভিযোগ, প্রথমবার কিস্তির টাকার রসিদ তাঁকে দিলেও দ্বিতীয় কিস্তির রসিদ উৎপলকে দেননি বন্ধুপ্রকাশ। টাকা বা রসিদ চাইলে উলটে তাঁকে অপমান করেছেন ওই শিক্ষক। এই থেকে আক্রোশ বশত বিজয়া দশমীর দিন এই হত্যাকাণ্ড। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উৎপলকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এই ঘটনায় রাজনীতি কোথায়? ঘটনার পর থেকে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল দলকে হেয় করার চেষ্টা করছে রাজ্যের বিরোধীদলগুলি। মৃত ব্যক্তিকে নিজের দলের কর্মী-সমর্থক বলে দাবি করে শাসকদলকে কাঠগড়ায় তুলতে চেয়ে বিজেপি। রাজনৈতিক অভিসন্ধির তত্ত্ব সামনে এনেছিল বাম-কংগ্রেসও। এবার তারা কী বলবে? কোনও ঘটনা ঘটলেই রাজনৈতিক রং চড়ানোর এই প্রবণতা কি বন্ধ হবে না? এখন এই প্রশ্নই সব মহলে।

যে পাল পরিবার, তাদের প্রিয়জনদের হারাল, তারা পুলিশ, প্রশাসনের উপর আস্থা রাখল। বারবার, জানাল যে বন্ধুপ্রকাশ পালের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। তাও কীসের ভিত্তিতে নিহত শিক্ষককে নিজেদের দলের কর্মী, সংগঠন বলে দাবি করল গেরুয়া শিবির? খুনের কিনারা হওয়ার পরে অবশ্য তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন-নোবেল এবং ‘ফাটা বাঁশে আটকানো’ বিজেপি

 

spot_img

Related articles

খালেদা-পুত্র তারেকের হাতেই কি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের চাবি? কোন পথে সমর্থন

কী হবে বাংলাদেশের (Bangladesh) ভবিষ্যৎ? খালেদা-পুত্র তারেক রহমানই (Tarek Rahman) কি আগামী প্রধানমন্ত্রী? এখন এই জল্পনাই এশিয়ার রাজনৈতিক...

সেনাবাহিনীকে জল-লস্যি খাইয়ে জাতীয় পুরস্কার! ভাবতেই পারেনি শ্রবণ

চারিদিকে যখন তখন পাকিস্তানের ড্রোন, মিসাইলের ভয়। আর সবাই যখন ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করেছিলেন, তখন ছোট্ট শ্রবণ...

সিরিজ জয়ের দিনেই হরমনপ্রীতের রেকর্ড, ধাক্কা কাটিয়ে রানে ফিরতে ব্যর্থ স্মৃতি

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তৃতীয় টি২০  ম্যাচে ৮ উইকেটে জিতল ভারতীয় মহিলা দল। সেই সঙ্গে সিরিজও জিতে নিল ভারত। তবে...

বাংলাদেশ হাই কমিশন ভয় পেয়েছে শুভেন্দুকে! শহরে ফের হাঙ্গামায় দিল্লির রাস্তা দেখালো তৃণমূল

বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশকে ইস্যু করে ধর্মীয় বিভাজনে তৎপর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাই যে কোনওভাবে বাংলাদেশের...