Sunday, December 14, 2025

“নতুন কিছু পাওয়ার নেই, জীবনটা তো জেলেই কাটবে”, রশিদের গলায় অভিমানের সুর!

Date:

Share post:

দিনটি ছিল ১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে ভোররাতে হঠাৎই কেঁপে ওঠে বৌবাজার। উড়ে যায় আস্ত একটি বাড়ি। মৃত্যু হয় ৬৯ জনের। আহত আরও অনেক বেশি। নিমেষে ধ্বংসস্তূপ। যার অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বড় রাস্তার ট্রাম লাইনে। বাতাসে ছিল বারুদের গন্ধ। মৃত্যু-হাহাকার-কান্না। একেবারে লালবাজারের নাকের ডগায় এমন বিস্ফোরণে চমকে ওঠে গোটা শহর। গোটা দেশ।

এই বিস্ফোরণ কাণ্ডের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে,মুহূর্তে অপেক্ষা না করে প্রশাসনিক মহলে জোরদার তদন্ত শুরু হয়। মূল অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করে রশিদ খানকে। একইসঙ্গে নাম জড়িয়ে যায় একাধিক সিপিএম নেতার। এরপর বিচারে টাডা আদালত যাবজ্জীবনের রায় দেয় রশিদের। গ্রেফতারের পর থেকেই জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে রশিদ। বৌবাজার বিস্ফোরণের সেই ভয়াবহ-অভিশপ্ত স্মৃতি আজও অনেকের মনে টাটকা। দেখতে দেখতে ২৮ বছর ধরে জেলবন্দি। বাকি জীবনটাও কাটাতে হবে জেলে। তবে করোনা আবহে রশিদ খান আপাতত প্যারোলে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাড়ির রয়েছে স্ত্রী এবং ছেলেদের সঙ্গেই।

বৌবাজার বিস্ফোরণের কাণ্ডের মূল পাণ্ডা হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত সেই রশিদ খানের মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা। তার বাড়িতে গিয়েছিলেন এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদের দুই প্রতিনিধি।

দরজায় টোকা মারতেই ভিতর থেকে মহিলা কন্ঠ “কৌন?” কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অবশ্য বছর ষাটেকের এক মহিলা দরজার ওপার থেকে প্রশ্ন করলেন, “কী ব্যাপার, কাকে চাই?” সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি শুনে ভিতরে ডাকলেন। ভাঙাচোরা অগোছালো ঘরের এক প্রান্তে বসেছিলেন সেই রশিদ খান। সামনের টেবিলে ওষুধের বাক্স। আগের ছবির সঙ্গে কোনওভাবে মেলানো যাচ্ছিল না বার্ধক্যে ভগ্নপ্রায় শরীর। চোয়াল বসে গিয়েছে। মুখটা একেবারে অচেনা। সেটাই স্বাভাবিক। বয়স এখন ৭২। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, বেশ অসুস্থ।

তবে আমাদের প্রতিনিধিদের আপ্যায়ন জানাতে কোনও কসুর করেননি। বার বার একটাই কথা রশিদের মুখে, “আদালত সাজা দেওয়ার আগেই মিডিয়া ট্রায়ালে আমি মানুষের কাছে দোষী হয়ে গিয়েছিলাম। অথচ, এমন শাস্তি আমার প্রাপ্য ছিল না। তোমার এসেছো। বসো। খাওয়া-দাওয়া করো। আমি খুব বেশি কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। শরীরটা খারাপ। ওষুধগুলো খেয়ে একটু ঘুমবো।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “আসলে কী জান তো, আমার তো আর কিছু পাওয়ার নেই। জীবনটা তো জেলেই কেটে যাবে। তাই পুরনো কথা আর নতুন করে তুলতে চাই না।”

রশিদের গলায় এবার অভিমানের সুর। বললেন, “সেদিন আমার কথা কেউ শোনেনি। এই তখন থেকে জেলে। এখনও জেলে। তবে একটা কথা বলি, জেলে আমাকে সবাই ভালবাসে। আমার ব্যবহারের জন্য ওখানে আমাকে সবাই পছন্দ করে।”

কথার মাঝেই একটা ওষুধ খেয়ে বললেন, “বয়স হয়েছে ৭২। সুগার, প্রস্টেট, নার্ভের সমস্যা রয়েছে। এভাবে আর ক’দিনই বা বাঁচবো আমি।”

সত্যি, খুব অচেনা এই রশিদ খান। কোমরে জোড়া পিস্তল গুঁজে বাম আমলে মধ্য কলকাতার জুয়া-সাট্টা সাম্রাজ্যের বেতাজ বাদশা আজ বড়ই অসহায়। প্রায় তিনদশক জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। এই বয়সে এসে নিজের ছায়াকেও যেন তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না!!!

spot_img

Related articles

স্বাস্থ্য সচেতনতায় জোর, শীতের সকালে হাঁটলেন লিয়েন্ডার

শীতের সকালে ওয়াকাথনে অংশ নিলেন লিয়েন্ডার পেজ( Leander Paes)। ওয়াকাথনের আয়োজন করে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল। এই নিয়ে...

হনুক্কা উৎসবের মধ্যেই সিডনির বন্ডি বিচে গুলিবর্ষণ, মৃত অন্তত ১০

ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হনুক্কার মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনির জনপ্রিয় বন্ডি সমুদ্র সৈকতে হামলা(Sydney Bondi Beach Shooting)। কমপক্ষে ১০ জনের...

ক্রীড়ামন্ত্রীকে টানা ৪ ঘণ্টা স্টেডিয়ামে বসিয়ে রেখেও আসেননি শতদ্রু

অভিজিৎ ঘোষ মেসিকে কেন্দ্র করে যুবভারতীর ঘটনায় অনেকে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে (Sports Minister Arup Biswas) টার্গেট করছেন। কয়েকটি মিডিয়া...

টলিপাড়ায় প্রথম সমকামী বিয়ে! দুই অভিনেত্রীর বিবাহবাসরে হাজির স্টুডিও পাড়ার কলাকুশলীরাও 

একে অন্যকে অনেকদিন ধরেই পছন্দ করতেন, কিন্তু টলিউডের (Tollywood) জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রীর মধ্যে যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে সে...