Thursday, December 18, 2025

বিজেপির অসম মডেলের পর্দাফাঁস ডি-নোটিশে, বাংলাতেও একই ফন্দি?

Date:

Share post:

অসম মডেলেই কি বাংলাতেও বাঙালিদের ‘নিজভূমে পরবাসী’ করার ভাবনা বিজেপির?
অসমে বিজেপি সরকারের ভূমিকায় চরম বিপন্নতার মুখে পড়েছেন সেরাজ্যের ভূমিপুত্র বাঙালিরা। বিধানসভা ভোট মিটতেই যেভাবে বেছে বেছে বাঙালিদের ডি-নোটিশ পাঠানো হচ্ছে তাতে প্রশ্ন, অসমের কায়দাতেই কি বাংলার জন্যও কোনও গোপন ছক রয়েছে বিজেপির? বিজেপির তথাকথিত বাঙালিপ্রীতির পর্দাফাঁস হয়েছে অসমে, এবার কি বাংলাতেও বাঙালি বিতাড়নের ফন্দি? নাগরিকত্বের মিথ্যে গাজর ঝুলিয়ে ভোট আদায়ের পর কি এখানকার বাঙালিদের জন্যও অসম মডেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? দীর্ঘদিন ধরে বাংলায় বসবাসকারী যে মতুয়ারা আদতে এরাজ্যেরই নাগরিক, ভোটাধিকার প্রাপ্ত, তাঁদেরই আবার নাগরিকত্বের টোপ দিচ্ছেন অমিত শাহ সহ বিজেপির সর্বস্তরের নেতারা! প্রশ্ন উঠছে, যদি নতুন করে তাঁদের আবার নাগরিকত্বই দিতে হয় তাহলে তাঁদের ভোটেই কীভাবে জিতলেন বর্তমান বিজেপি সাংসদ? এই যুক্তিতে তথাকথিত অনাগরিকদের ভোটে জেতা সাংসদ পদটাও তো তাহলে অবৈধ হয়ে যায়! ফলে বিজেপির নাগরিকত্ব তাসের মধ্যে গোপন অভিসন্ধিই স্পষ্ট হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, অসমের কায়দায় এখানেও বহু বাঙালিকে ডি-নোটিশ ধরানোর গোপন ছক সামনে রেখেই কি এগোচ্ছে বিজেপি?

আরও পড়ুন-কৃষ্ণনগর উত্তর: কেন মুকুলকে ভোট দেবেন না নাগরিকরা? মুখ ঘুরিয়ে আদি বিজেপিও

প্রশ্নটা তুলে দিচ্ছে প্রতিবেশি রাজ্য অসমই, যেখানে এখন বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’ চলছে আর বিধানসভার ভোট মেটার পর ডি-নোটিশ ধরিয়ে ভিটেমাটি ছাড়ার ভয় দেখানো হচ্ছে সেখানকার বাঙালিদের। অসমের বাঙালিরা অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি হয়ে এখন বলছেন, ভোটের সময় মেকি বাঙালিপ্রীতি দেখিয়ে ভোট মিটতেই বিজেপি সরকারের আসল দাঁতনখ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। বিধানসভা ভোটের প্রচারে অসমের (Assam) সরকারের বাঙালিদের (Bengali ) নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিজেপি (bjp) নেতারা, অথচ ভোটপর্ব সাঙ্গ হতেই এখন ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে ডি-নোটিশ (D-notice)! এই নোটিশ পেয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন বিজেপি শাসিত অসমের বাঙালিরা। বাংলার ভোটে যে বিজেপি নেতারা ইদানিং ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ডাক দিয়ে বাঙালিপ্রীতির ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন, তাঁরাও কিন্তু নীরব অসমের বাঙালিদের দুরবস্থা দেখে। বাঙালিদের ডি-নোটিশ দেওয়ার প্রতিবাদ করছেন না তাঁরা। আর ডি-নোটিশ পাওয়া অসমের মানুষজন নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিজেপির ভোটের প্রতিশ্রুতির ‘আসল’ অর্থ খুঁজছেন।

প্রসঙ্গত, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (CAA) মাধ্যমে শরণার্থী বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বার বার অসমের নির্বাচনী প্রচার সভা থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু ভোট মিটতেই সেইসব কথা বেমালুম চাপা পড়ে গিয়েছে। উল্টে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালিদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ডি-নোটিশ। শুধু তাই নয়, বাড়ির সামনের ল্যাম্পপোস্টেও টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে বার্তা। সূত্রের খবর, এই ডি-নোটিশ প্রাপকদের বড় অংশই হিন্দু বাঙালি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা জানিয়েছেন, ভোটের সময় তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বারবার বক্তৃতায় বলেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় থেকে রাজ্য স্তরের সব নেতা। অথচ ভোট মেটার পরে পূর্ব প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গিয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, সময় নষ্ট না করে তড়িঘড়ি নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘরের দরজায়। ভোট চলাকালীনও কিছু অঞ্চলে সেই নোটিশ পাঠানো হয়েছিল বলে খবর। ভোট মেটার পর ব্যাপক হারে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে বার্তা। নোটিশ নিয়ে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অসমের সাধারণ মানুষ, বিশেষত বাঙালিরা ঘরছাড়া হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাছেন। বহু মানুষকে ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে, যা আদতে জেলেরই নামান্তর। এবারের ভোটে প্রতিশ্রতি দেওয়া হয়েছিল ভোট মিটলেই নাগরিকত্ব বিল কার্যকর করা হবে। কিন্তু বাস্তবে মানুষ দেখছে উল্টো ঘটনা। ফের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় কাটাচ্ছেন পাশের রাজ্য অসমের বাঙালিরা।

Advt

spot_img

Related articles

মানহানির অভিযোগে প্রাক্তন স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ কুমার শানু

সংগীতজগতে দীর্ঘ চার দশকের সাফল্যের কাহিনি থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কে ফের শিরোনামে কিংবদন্তি গায়ক কুমার শানু। প্রাক্তন স্ত্রী...

বড়দিন ও বর্ষবরণে আইনশৃঙ্খলা আঁটসাঁট, পুলিশের ছুটিতে নিষেধাজ্ঞা রাজ্য জুড়ে 

বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গেল বড়দিনের উৎসব। কলকাতার অ্যালেন পার্ক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের...

বাজেয়াপ্ত যুবভারতীর সিসিটিভি ফুটেজ, নজরে শতদ্রু ঘনিষ্ঠরা

যুবভারতীতে মেসি(Messi) ইভেন্ট চরম বিশৃঙ্খলায় তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকার গঠিত সিট(SIT)। যুবভারতীর (Yubha bharati) যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ...

সিইও দফতরের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী, শুক্রবার থেকেই মোতায়েন

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর নিরাপত্তায় এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী (central security force) মোতায়েন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে...