Sunday, November 9, 2025

প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ.. একটি যুগের অবসান

Date:

Share post:

বাংলা সাহিত্যের ভুবনে নক্ষত্র পতন। প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ। ৮৯ বছর বয়সে। মারণ ভাইরাস করোনা কেড়ে নিল বাংলা কাব্য জগতের  এই মহীরূহের প্রাণ।

বিগত কয়েক মাস ধরেই  ‌বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন শঙ্খ ঘোষ।  গত ১২  এপ্রিল থেকে সর্দি-কাশি হয়। তারপর জ্বর আসে। কিছুতেই জ্বর ছাড়ছে না দেখে কোভিড টেস্ট করানো হয়। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।  কোমর্বিডিটি থাকায় চিকিৎসকরা হাসপাতালে ভর্তি করানোর কথা বলেন। কিন্তু প্রবীণ কবি হাসপাতালে যেতে রাজি হননি। তাই বাড়িতেই আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছিল। তাঁর স্ত্রী প্রতিমাদেবীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাড়িতে রেখেই তাঁরও চিকিৎসা চলছে।  মঙ্গলবার রাত থেকেই কবির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বুধবার সকালে ভেন্টিলেশনে  দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ভেন্টিলেটর খুলে দেন চিকিৎসকরা। অবসান হল একটি যুগের। চিরশয্যায় শায়িত হলেন কবি শঙ্খ ঘোষ।

কবির মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘শঙ্খদার মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করছি। কোভিডে মারা গিয়েছেন শঙ্খদা। তা সত্ত্বেও যাতে রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা যায়, মুখ্যসচিবকে তেমন নির্দেশ দিয়েছি। তবে শঙ্খদা গান স্যালুট পছন্দ করতেন না। সেটা বাদ রাখছি।’’ ট্যুইট করে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

শঙ্খ ঘোষের জন্ম ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের  চাঁদপুরে । বাবা মণীন্দ্রকুমার ঘোষ, মা অমলা ঘোষ। আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ।  লেখাপড়ার শুরু পাবনায়। ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দীর্ঘ চার দশক ধরে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে শ্রদ্ধা এবং সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনা করেছেন।

কবি শঙ্খ ঘোষের আত্মপ্রকাশ  সেই কৈশোরেই। অসংখ্য মণি-মাণিক্য-চুনী-পান্না তাঁর কলমের ছোঁয়ায় জন্ম নিয়েছে। ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’  শঙ্খ বাবুর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনবিদিত।

বহুবার বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭৭ সালে বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান । ১৯৮৯ সালে  ‘ধূম লেগেছে হৃৎকমলে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পান রবীন্দ্র পুরস্কার  । ১৯৯৯ সালে কন্নড়  থেকে বাংলায় ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি অনুবাদ করে দ্বিতীয়বার সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান তিনি। এরপর ১৯৯৯ সালে দেশিকোত্তম,  ২০১১ সালে পান পদ্মভূষণ এবং ২০১৬ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত হন শঙ্খ ঘোষ। এ ছাড়াও রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মানও পেয়েছেন তিনি।

২০২১ সালের ২১ এপ্রিল। সবই হয়ে গেল অতীত। জীবনভর যত সম্মান, যত যশ, যত খ্যাতি, যত পাণ্ডিত্য, যত কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন, সবই আজ  ইতিহাস। এই মহান কীর্তিমানের জন্য গর্বিত বাঙালি। গর্বিত বাংলার সাহিত্য জগত। গর্বিত ভারতভূমি।

Advt

 

 

 

 

 

 

spot_img

Related articles

এপিকের সঙ্গে মোবাইল লিঙ্ক না থাকলে অনলাইনে ফর্ম নয়! কমিশনের নিয়মে ক্ষোভে ফুঁসলেন কল্যাণ 

নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশিকা ঘিরে ফের রাজনৈতিক বিতর্ক। রবিবার শ্রীরামপুর পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট রক্ষা শিবিরে অংশ...

ফাইনাল ম্যাচে শাহরুখের মন্ত্রেই ছাত্রীদের তাতিয়ে ছিলেন? অকপট স্মৃতিদের কোচ

ভারতীয় মহিলা দল বিশ্বকাপ জেতার পরই চক দে ইন্ডিয়ার কবীর খান হয়ে উঠেছেন অমল মুজুমদার(Amol Muzumdar)। কী বলে...

এসআইআর আতঙ্কে মৃতদের পরিবারের পাশে তৃণমূল: রাজ্যজুড়ে শোকাহত পরিবারগুলির ঘরে দলের জনপ্রতিনিধিরা 

এসআইআর আতঙ্কে রাজ্যজুড়ে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। কোথাও আত্মহত্যা, কোথাও আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু— ভয় ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম...

বাংলাভাষায় ১০ কোটিও খরচ নয়! বাঙালিবিদ্বেষী বিজেপির রবীন্দ্র-বঙ্কিম ভাগে তোপ গণমঞ্চের

বিজেপি আদতে বাঙালি বিদ্বেষী, তা সাম্প্রতিক সময়ে বারবার প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণিত। সেই বিদ্বেষের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছে দেশ বাঁচাও...