Sunday, August 24, 2025

Sandhya Mukhopadhyay: শেষ কোন গান শুনতে শুনতে সন্ধ্যা চোখ বুজেছিলেন?

Date:

Share post:

ছেলেবেলা থেকে গান আঁকড়েই বড় হয়ে ওঠা।মৃত্যুর আগে পর্যন্তও সেই গানই ছিল তাঁর সঙ্গী।
মঙ্গলবার বিকেল। তখন আইসিইউতে ‘গীতশ্রী’। তাঁকে দেখাশুনো করার জন্য যে নার্সরা ছিলেন, তাদের কাছে গায়িকা আবদার করেন গান শুনবেন। কিন্তু আইসিইউতে তা যে অসম্ভব। শেষমেশ নার্সের কাছে গান শোনার আবদার জানান সন্ধ্যা মুখোপাধায়।

আরও পড়ুন:Belur Math: ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ভক্তদের জন্য ফের খুলছে বেলুড় মঠ
এত উঁচুমানের শিল্পীর আবদার না করতে পারেননি রবীন্দ্রসঙ্গীতে তালিম নেওয়া তনুশ্রী সামন্ত। গেয়ে ওঠেন, ‘তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে’, ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে’। তার পরেও বিশ্রাম নিতে নারাজ সন্ধ্যা। গান না শুনলে যে তিনি বিশ্রাম নিতে পারছেন না! অগত্যা আইসিইউয়ের নার্সিং ইন-চার্জ ঝুমা বিশ্বাস নিজের মোবাইলে চালালেন শিল্পীর পছন্দের গান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আইসিইউয়ে ‘গীতশ্রী’র ১০৪ নম্বর শয্যা তখন ভেসে যাচ্ছে সুরের মূর্ছনায়।

ঠিক এই সময়ই শুরু হল,’শহর থেকে অনেকদূরে চলো কোথাও চলে যাই…’। তখন চোখ বন্ধ করেছেন সন্ধ্যা। পরমুহূর্তেই নার্সরা খেয়াল করেন হৃদ্‌স্পন্দন নামতে শুরু করেছে। ৭২ থেকে নেমে তা ২১ এ পৌঁছেছে। সকলে একসঙ্গে ‘ম্যাডাম ম্যাডাম’ বলে ডাকতে শুরু করলেও আর চোখ খোলেননি সন্ধ্যা । মঙ্গলবারই নিভে যায় সন্ধ্যার শিখা।

২৭ জানুয়ারি কোভিড নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সন্ধ্যা। করোনামুক্ত হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালের ৩৫৫ নম্বর মহারাজা সুইট ছিল তাঁর ঠিকানা। বুধবার সেখানে বসে ঝুমা বললেন, ‘‘মাত্র এক মিনিট ৫৮ সেকেন্ড গানটা শুনতে শুনতেই শহর ছেড়ে পাড়ি দিলেন। জীবনে ভুলব না এই স্মৃতি।’’ গত কয়েক দিনের কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণ ভিজে আসছে নার্সিং ডিরেক্টর লক্ষ্মী ভট্টাচার্য, নার্সিং সুপার প্রেমলতা বিশওয়াল, ফ্লোর ইন-চার্জ দীপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রত্যেকেই বলছেন, ‘‘গলার মতো ওঁর ব্যবহারও ছিল মিষ্টি। কখনও বিরক্তি ছিল না।’’

শেষের দিনগুলিতে প্রতিদিন তাঁর দুপুরের মেনুতে থাকত গলা ভাত ও মাছের পাতলা ঝোল। আর সেইসঙ্গে টিভিতে সিরিয়াল দেখা মাস্ট। তার পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ফের সিরিয়াল।নার্স জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রাপচারের আগের দিন মেয়ে-জামাইয়ের কাছে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। মঙ্গলবার আইসিইউয়ে গিয়ে পছন্দের সুজি, ছানাও খেয়েছিলেন। তার পরেই গান শোনানোর আবদার করেন সন্ধ্যা। মোবাইলে চালানো নিজের গাওয়া গান শুনতে চাননি গায়িকা। মান্না দের গাওয়া গান শুনেই চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন ‘গীতশ্রী’।

spot_img

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...