ঘাতকদের সঙ্গে মালা দিয়ে নন্দীগ্রামের শহিদ মঞ্চকে অপবিত্র করতে চাইছেন শুভেন্দু, দাবি কুণালের

"শুভেন্দু অধিকারীর নৈতিক অধিকার নেই শহিদ মঞ্চে মালা দেওয়ার। কারণ, সেই সময় যাঁরা প্রকৃত আন্দোলন করেছেন, তাঁরা এই মঞ্চে। বাইরের কিছু লোক লোক এনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে চাইছে।"

কনকনে ঠাণ্ডায় তখন ফোটেনি ভোরের আলো। কুয়াশার চাদর পেরিয়ে শনিবার ভোর সাড়ে চারটে নন্দীগ্রামে (Nandigram) ভাঙাবেড়ায় শহিদ তর্পণ করলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ-সহ (Kunal Ghosh) স্থানীয় ও জেলা নেতৃত্ব। শুরুতেই মোমবাতি জ্বালিয়ে শহিদ স্মরণ। এরপর শহিদ মঞ্চে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মঞ্চে প্রায় ২ ঘন্টা ধরে চলে শহিদ তর্পণ। হাড়কাঁপুনি ঠাণ্ডা উপেক্ষা করেও রাত থেকেই।ভাঙাবেড়ায় শহিদ তর্পণ কর্মসূচিতে জনস্রোত।

“ভুলতে পারি নিজের নাম, ভুলবো নাগো নন্দীগ্রাম”। আজ ঐতিহাসিক ৭ জানুয়ারি। নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২০০৭ সালে এই দিনেই সিপিএম হার্মাদ বাহিনীর হাতে শহিদ হতে হয়েছিলেন আন্দোলনকারী ভরত মন্ডল, বিশ্বজিত মাইতি, শেখ সেলিম। হার্মাদদের সেদিনের সেই তাণ্ডবে এতো বছর পেরিয়েও বহু মানুষ ঘরছাড়া। যাঁদের এখনও কোনও খোঁজ নেই। মনে করা হয়, তাঁদেরও মেরে দেহ লোপাট করেছিল সিপিএম আশ্রিত দু*ষ্কৃতীরা। সেইদিন থেকে প্রতিবছর ৭ জানুয়ারি শহিদ দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ভোরে সেই কর্মসূচিতেই যোগ দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের (TMC)বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।

এদিন শুভেন্দু অধিকারীও শহিদ মঞ্চে মালা দেবেন, সাংবাদিকরা এমন বিষয় উত্থাপন করতেই ফের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে একহাত নিলেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর নৈতিক অধিকার নেই শহিদ মঞ্চে মালা দেওয়ার। কারণ, সেই সময় যাঁরা প্রকৃত আন্দোলন করেছেন, তাঁরা এই মঞ্চে। বাইরের কিছু লোক লোক এনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে চাইছে।”

কেন শুভেন্দুর নৈতিক অধিকার নেই শহিদ তর্পণ-এর এদিন তারও ব্যাখ্যা দেন কুণাল। তৃণমূল নেতার কথায়, ”শুভেন্দুর সবচেয়ে কলঙ্কের দিক এটা, যারা ঘাতক, যারা সেদিন গুলি চালিয়েছিল, হত্যা করেছিল, হার্মাদদের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাঁরা এখন ওর (শুভেন্দুর) সঙ্গী। ওর সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। আগে সিপিএম ছিল, এখন বিজেপি করে। যারা মেরেছিল বলে অভিযোগ, তারাই শুভেন্দুর সঙ্গে শহিদবেদিতে মালা দিতে যাবে, এটাই তো শহিদদের প্রতি সবচেয়ে বড় অপমান।শুভেন্দুর নৈতিক অধিকার নেই শহিদবেদিতে মালা দেওয়ার। কারণ, ও ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে বেইমানি করে বেরিয়ে গিয়েছে। ঘাতকদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে, ঘাতকদের দিয়ে অপবিত্র করছে শহিদবেদি।”

সেদিন নন্দীগ্রামে আন্দোলনের কোনও ধর্ম ছিল না, কোনও বর্ণ ছিল না। শহিদবেদিতে হিন্দু-মুসলমান সকলের নাম লেখা আছে। সকলের রক্তে এই আন্দোলন হয়েছে। কুণালের অভিযোগ, শুভেন্দু শহিদদের রক্তের বিনিময়ে নিজের কেরিয়ার তৈরি করেছে। এখন বিভাজনের রাজনীতি করছে। কোনও সম্প্রদায়কে জেহাদি বলছে, আবার ভোটের জন্য কোনও সম্প্রদায়ের কথা বলছে। আবার মায়া কান্না কেঁদে যেখানে মালা দিতে যাচ্ছে সেখানে সকলের নাম রয়েছে। তাই শুভেন্দুর কোনও অধিকার নেই মালা দেওয়ার।

শুভেন্দু জমি আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে শহিদের রক্তে নিজের কেরিয়ার বানিয়েছে বলেও দাবি করেন কুণাল। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের সব মানুষ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে ছিলেন। শুভেন্দু কাউকে কাউকে বিভ্রান্ত করেছে। এলাকার মানুষ কাদের সঙ্গে আছে সেটাই মাপকাঠি। শহিদ পরিবারের সদস্যরা সারা বছর ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গেই থাকেন। আজও এই মঞ্চে আছেন। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ সুফিয়ান, দুজন সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের আর নন্দ পাত্র এই মঞ্চেই রয়েছেন। ফলে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নাম ব্যবহার করে শুভেন্দুর সভাটাই তো অবৈধ। একটি শহিদবেদী কারও ব্যক্তিগত হতে পারে না। নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে হাইজ্যাক করবে, শহিদবেদিকে ব্যক্তিগত বানাবে, শহিদের রক্তে কেরিয়ার বানাবে, এটা কোনও রাজনীতি হতে পারে না।”

এদিন শুভেন্দুর চণ্ডীপুরের সভা নিয়েও কটাক্ষ করেন কুণাল। তাঁর কথায়, “ওর সভা মানে তো ৩০০ জন লোক হলে তার মধ্যে দেড়শো জন সিআরপিএফ। যেখানে সভা করে সেখানে লোক থাকে না। বাইরে থেকে ভাড়া করে লোক আনে।”

Previous articleভেঙে পড়ল যোশীমঠের মন্দির ! আতঙ্ক বাড়ছে স্থানিয়দের মনে
Next articleBreakfast Sports : ব্রেকফাস্ট স্পোর্টস