Friday, August 22, 2025

বিজেপির কৈলাস ঘনিষ্ঠ বিভাস, নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার কেঁচো খুঁড়তে কেউটে!

Date:

Share post:

চাকরি চুরির শিকড় যে অনেক গভীরে সেটা আগেই অনুমান করেছিল দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি।নিয়োগ দুর্নীতিতে ফের ফের সামনে এলো আরও একটি নাম। বীরভূমের বিভাস অধিকারী। তিনি আবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের ঘনিষ্ঠ। একটি সময় এই বিভাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল কৈলাসের। বিভাসবাবু নিজেই এমন দাবি করেছেন। বছর তিনেক ধরে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল অয়্যারহাউসিং কর্পোরেশন’-এর ডিরেক্টর। বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি ওই পদটি পেয়েছেন কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুন:বিভাসের আশ্রমে দীক্ষা নিয়েছিলেন বিজেপির কৈলাস ! ইডির দাবিতে চাঞ্চল্য

বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমার অন্তর্গত নলহাটি দু’নম্বর ব্লকের অন্তর্গত শীতলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা বিভাস অধিকারী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রভাব প্রতিপত্তি অতুলনীয়। বিভাস অধিকারী এমন এক ব্যক্তি যার রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক কেন্দ্র এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল আশ্রম। যে আশ্রমে বিভিন্ন সময় তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রী মুকুল রায় থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ বিভিন্নজনকে আসতে দেখা গিয়েছে। চাকরি চুরি কাণ্ডে এবার তার নাম জড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলো তার আশ্রম নিয়ে। এই তথ্য একেবারেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটোর মত।

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও স্বীকার করেছেন বিভাস অধিকারী। বীরভূমের নলহাটির কৃষ্ণপুরে তাঁর আশ্রমের উদ্বোধন করেন পার্থ চট্টোপাধ‌্যায়। তাই তাঁর সঙ্গে যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল, সেই ব‌্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও।

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার উত্তর কলকাতায় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার কার্তিক বোস রোডের ফ্ল‌্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি। চার মাস আগে ওই ফ্ল‌্যাটটি সিল করা হয়। এই ফ্ল‌্যাটের সামনে ছিল ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ‌্যাসোসিয়েশন’-এর বোর্ড। ওই সংগঠনের আসল ঠিকানা এপিসি রোডের একটি বহুতলে হলেও এখানে শাখা সংগঠন ছিল বলে দাবি ইডির। ওই সংগঠনের কর্মকর্তা ছিলেন বিভাস। সেই সূত্র ধরে সংগঠনের বহু বৈঠকও কার্তিক বোস রোডের ফ্ল‌্যাটে হয়েছে। প্রতিবেশীদের সূত্রে খবর এসেছিল যে, বিভাসের ওই ফ্ল‌্যাটে রাতে বড় বড় ব‌্যাগ নিয়ে অনেকে আসতেন। সিবিআই ও ইডির অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল ও কুন্তল ঘোষের মুখেও উঠে এসেছিল বিভাস অধিকারীর নাম। কুন্তল দাবি করেছিলেন, তাপসের মতো বিভাস অধিকারীও একজন বড়মাপের এজেন্ট। তবে বিভাসের দাবি, তিনি তাপস বা কুন্তল, কাউকেই চেনেন না। ওই দু’জন তাঁকেও চেনেন না।

ইডির কাছে খবর, বিভাস অধিকারীর নিজস্ব বিএড ও ডিএলএড কলেজ রয়েছে। ওই কলেজে যে ছাত্রছাত্রীরা ভরতি হতেন, তাঁদের শিক্ষকের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত। ফলে বিভাসের সঙ্গে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির যোগ ইডি উড়িয়ে দিচ্ছে না। ইডি-র দাবি, বিভাসের ফ্ল‌্যাট থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। তবে বিভাস জানান, তিনি ইতিমধ্যেই ইডিকে তাঁর ব‌্যাংক অ‌্যাকাউন্টের নথি জমা দিয়েছেন। সংবাদমাধ‌্যমকে বিভাস অধিকারী জানান, তাঁর সঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে এই রাজ্যের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র খুবই সুসম্পর্ক ছিল। বিভাসের দাবি, নলহাটির আশ্রমে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। বিভাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পরও কৈলাস বিজয়বর্গীয় তাঁকে দেখতে যান।

অন্যদিকে, বিভাস অধিকারী যে আশ্রম তৈরি করেছেন সেই আশ্রমের সঙ্গে ঠাকুর শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গের কোন সম্পর্ক নেই। এমনকি ওই আশ্রম সৎসঙ্গ অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। ঠিক এমনটাই দাবি করেছেন বীরভূম সৎসঙ্গের সহ প্রতি ঋত্বিক অনিল চক্রবর্তী। এই দাবির পর প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি আশ্রম তাশ্রম সবই লোক দেখানো!

অনিল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ১৯২৫ সালে প্রথম সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঠাকুর শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্র। মাতা ঠাকরুন শ্রী মনমোহিনী দেবী ছিলেন প্রথম সভাপতি। সৎসঙ্গ সোসাইটির নিয়ম-কানুন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস পাবনায় বসে ঠিক করেছিলেন। পরে দেশভাগের পর ১৯৫২ সালে সৎসঙ্গ নতুন করে রেজিস্টার্ড করা হয়। সেই সৎসঙ্গের সঙ্গে বিভাস অধিকারীর সৎসঙ্গের কোন সম্পর্ক নেই।

 

 

spot_img

Related articles

আইনি জটিলতা কাটিয়ে স্নাতকের মেধাতালিকা প্রকাশ, শুরু হচ্ছে ভর্তি: জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

আইনি জটিলতা কাটিয়ে স্নাতকস্তরে প্রকাশিত হল অনলাইনে পোর্টালে ভর্তির ফলাফল। শুক্রবার ফল (Result) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি প্রক্রিয়া...

কিছু হাই কোর্টের বিচারপতির কর্তব্যবোধ কম পড়ছে: মত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির

একাধিক হাই কোর্টের বিচারপতিদের স্বরূপ বাংলায় অনেক আগেই খুলে গিয়েছে, যখন হাই কোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে...

মোদিজি আসুন বাংলার উন্নয়ন দেখে যান: কটাক্ষ চন্দ্রিমার

“ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে আবার আসতে শুরু করেছেন। এবার থেমে থাকুন দাদা।“ নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কড়া...

স্বপ্নভঙ্গ নয়, মুক্তির লড়াই: জাতীয় স্তরের রেফারি হলেন গোপীবল্লভপুরের মনি খিলাড়ি

এ গল্প কোনো স্বপ্নভঙ্গের নয়, বরং শৃঙ্খল ভাঙার গল্প। কনকনে শীতের রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজের বিয়ে ভেঙে...