পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যত বাড়ছে তত দখল হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি, পশুপাখি আর কীটপতঙ্গের জায়গা। নির্বিচারে প্রাণী হত্যা করেই জায়গা দখল করতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু তখন কারো মনে পড়ে না উত্তম কুমার-সুপ্রিয়া দেবী অভিনীত ‘চিরদিনের’ ছায়াছবির সেই বিখ্যাত গান – ‘মানুষ খুন হলে পরে, মানুষই তার বিচার করে/ নেই তো খুনের মাফ… তবে কেন পায় না বিচার নিহত গোলাপ’ আসলে মানুষের বেঁচে থাকাটাই যেন দস্তুর। তবে জাপানের একটি সংস্থা আছে যারা মনে করে সত্যিই মানুষের প্রয়োজনে নিহত কীট-পতঙ্গের অন্তত শ্রদ্ধাটুকু প্রাপ্য।

জাপানের বিখ্যাত কীটনাশক (pesticide) কোম্পনি আর্থ কর্পোরেশন (Earth Corporation) প্রতি বছর তাঁদের পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য নিয়ম করে প্রাণিহত্যা করে। যে কোনও নতুন কীটনাশক বা কীটনাশকের কোনও নতুন উপাদান আবিষ্কার করলে তা প্রয়োগ করা হয় প্রথমে গবেষনাগারে (laboratory) রাখা কীটের ওপর প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োগের ফলাফল দেখে সেটা পৃথিবীতে বিভিন্ন জলবায়ু বা আবহাওয়ায় কীভাবে ব্যবহার করলে মানুষের কতটা কাজে লাগবে তা নির্ণয় করা হয়। সেই উদ্দেশে এই সংস্থার গবেশনাগারে ১০ লক্ষ আরশোলার (cockraoch) চাষ হয়। প্রতিবছরই প্রায় এই পুরো পরিমাণ আরশোলা গবেষনার কারণে মারাও যায়।

মানুষের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর প্রতিনিয়ত কোনও প্রাণীকে এভাবে হত্যা করায় খুবই আঘাত পান সংস্থার কর্ণধাররা। কিন্তু এই মৃত্যুও সভ্যতার ভারসাম্য রাখতে অবধারিত (obvious)। তাই মৃত আরশোলার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা (honour) জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। আকো (Ako City) শহরের মাইওদোজি (Myodoji) মন্দিরে প্রতি বছর এই উদ্দেশে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। যোগ দেন সংস্থার কর্মী ও তাঁদের পরিবারের মানুষজন। গত ৪০ বছর ধরে এভাবেই মানুষের কৃতকর্মের কিছু প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টায় জাপানি সংস্থা।
