তাঁর জীবন সংগ্রামের ইতিহাস। বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছেন তিনি। তার জন্য নেমে এসেছে প্রাণঘাতী আঘাত। সেই সব কথা সোমবার পাঁশকুড়ার সভা মঞ্চে স্মরণ করলেন তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। একই সঙ্গে জানালেন, “আমি চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব একটি মানুষের কাছে।“ কে তিনি? মমতা জানালেন, “মানুষটি হলেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। তিনি এক জন বিশিষ্ট মানুষ।“

এদিন সভা থেকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, নন্দীগ্রামের সময় বার বার আটকে দেওয়া হয়েছিল রাস্তায়। কোলাঘাটে রাত ২টো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে। সিপিএমের হার্মাদরা মদ খেয়ে পেট্রল বোমা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল আমার গাড়ি ঘিরে, যাতে আমি নন্দীগ্রামে যেতে না পারি। আমার উপর অত্যাচার করা হয়। আমি চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব একটি মানুষের কাছে। মানুষটি হলেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। তিনি এক জন বিশিষ্ট মানুষ।

এরপরই মমতা তোপ দাগেন বর্তমান রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। বলেন, “আজকের রাজ্যপালের কথা বলব না, রাজ্য আছে, পালের গোদাটা হারিয়ে গিয়েছে।“ ফের গোপালকৃষ্ণের কথা তুলে তিনি বলেন, “আমি বলব সে দিনের কথা। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এক জন বিরোধী দলনেতাকে দিয়ে আমাকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, রাতটা সরে যাও। নয়তো যে কোনও সময় তোমাকে পেট্রল বোমা মেরে ওরা মেরে ফেলবে। পুলিশ কিছু করতে পারবে না। কারণ, সিপিএম যা বলে, তখন পুলিশ তা-ই করে। এখন সেই সিপিএমই বিজেপির ওস্তাদ হয়েছে। আর এখন তো অনেক ভাল আছ তোমরা। পুলিশকে গাল দাও। আবার পুলিশই রক্ষা করে।“

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগে কেন বার বার পাশকুঁড়া আসতাম জানেন? আপনাদের মসজিদ, যেটা রাস্তার উপর ছিল, রাস্তা চওড়া ছিল না, দু’পাশে অনেক দোকান ছিল, বাড়ি ছিল। আসলে এক বার দাঁড়াতেই হত। এক জনের মা তাঁকে কাজুবাদাম ভেজে খাওয়াতেন। তেলেভাজা খেতে ভালবাসতেন। এখন আর খাওয়া হয় না! তারপর আমার এক প্রিয় ছেলেকে গদ্দার জেলে ভরে রেখেছে এই এলাকা দখলের জন্য। তাই আসা হয়নি। আমি ওঁকে বার করবই।

কেশপুর প্রসঙ্গে সেদিনের স্মৃতিতর্পণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কত কান কেটেছ, চোখ উপড়ে নিয়েছ? দেবের এলাকা দাসপুরে গেছিলাম। আামাদের হয়ে দেওয়াল লিখেছিল বলে চোখ উপড়ে নিয়েছিল। আর কেশপুর? আমি গিয়েছিলাম জলপাইগুড়িতে। একটা স্টেশন উদ্বোধন করতে। কেশপুরে সাত জনকে একসঙ্গে মারল। আমাকে ফোন করল। আপনি না এলে দেহ কবর দেব না। আমি উত্তরবঙ্গ থেকে হাওড়া হয়ে কেশপুরে এলাম। সব জানি।

তৃণমূল সভানেত্রী বলেন, সেদিন গড়বেতায় একজন মা কাঁদছেন। তাঁর দু’টি ছেলে খুন হয়ে গিয়েছেন। বিধবা মা বলছেন, দু’টি অস্ত্র চাই। এক হাতে বন্দুক, অন্য হাতে তৃণমূলের পতাকা। যে সিপিএম তাঁর ছেলেদের খুন করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে বদলা নিতে চাই। চমকাইতলার ঘটনাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, তাঁর গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী অজিত পাঁজা। বললাম, অজিতদা চলে যান। আমায় গুলি করুন, যত আছে।

আরও পড়ুন- মর্মান্তিক, ছত্তিশগড়ে পিকআপ ভ্যান উল্টে বৈগা উপজাতি সম্প্রদায়ের ১৮ জনের মৃত্যু

বাঁকুড়ার ঘটনা : এদিন তিনি তুলে ধরেন বাঁকুড়ার সেই ঘটনার কথাও। একটি পরিবারের দুই ছেলে আর্মিতে ছিল। বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়েছে। দেখে সারা বাড়ি অন্ধকার। মা দেখছেস একটা ছেলে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। মা বুঝতে পারেন, মুন্ডুর অনেকটা কেটে দিয়েছে। ছেলে জল চান। নিয়ে এসে দেখেন, দু’টি ছেলের মুণ্ডু আধকাটা।
