AB-র দাপটে সংসদে ছারখার বিজেপি, ‘বাঘের গর্জনে’ থমকালেন স্পিকারও

বলেছিলেন জবাব দেবেন। বুধবার, লোকসভার অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বাজেট নিয়ে তীব্র আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে মোদি সরকারের বঞ্চনা আর প্রতারণার জবাব দিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তাঁর দাপটে ছারখার হয়ে গিয়েছে বিজেপির প্রতিরোধ। এমনকী, কুযুক্তি দেওয়া স্পিকার ওম বিড়লাকেও পর্যন্ত চুপ করিয়ে দেন অভিষেক। লোকসভা দেখল বাংলার ছেলের সাবলীল হিন্দি-ইংরাজিতে গর্জন।
এদিন লোকসভায় ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেকের (Abhishek Banerjee) বাজেট-বক্তৃতা কার্যত ইতিহাস হয়ে রইল। ৫৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের বক্তৃতা কাঁপিয়ে দিল নড়বড়ে এনডিএ সরকারকেও। যেন বাঘের গর্জন। একেবারে ইস্যু ধরে ধরে মোদি সরকারের জনবিরোধী বাজেটের সমালোচনা করলেন অভিষেক। দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করা থেকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গ ও বাংলার প্রতি বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন তাঁর প্রতিটি লাইনে। বারবার বিজেপি সাংসদরা মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে তাঁকে বাধা দেওয়ার। ভাষণ থামিয়ে সেই কথার মুখের মতো জবাব দিয়ে আবার পড়া শুরু করেছেন তিনি। তাঁর হাতের কাগজে শুধু ছিল জবাবের পয়েন্ট। আর সেই অকাট্য যুক্তি দিয়ে শাসক-বেঞ্চকে থামিয়ে দিয়েছেন AB।

প্রথমে অভিষেক যখন বলতে ওঠেন, তখন লোকসভার চেয়ারে ছিলেন দিলীপ সাইকিয়া। কিন্তু অভিষেকের ঝড় আর তাঁকে থামতে বিজেপি সাংসদ বিশেষ করে সৌমিত্র খাঁ-র চিৎকার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। তৃণমূল সাংসদের বক্তব্যের মধ্যেই তাঁকে উঠিয়ে ফের চেয়ারে বসেন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। অভিষেককে থামানোর চেষ্টা তিনিও কম করেননি। বলেন, কেন বাজেট বক্তৃতায় ২০১৬-১৯-এর উদাহরণ তুলছেন তৃণমূল সাংসদ। পাল্টা মোক্ষম যুক্তি দেন অভিষেক। বলেন, এটা যদি অপ্রাসঙ্গিক হয়, তাহলে সংসদে জরুরি অবস্থার কথা আলোচনা হয় কি করে! তখন আপনি বাধা দেননি কেন? স্পিকার হিসেবে আপনি তো নিরপেক্ষ থাকবেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অসামান্য বডি ল্যাঙ্গুয়েজে থামতে বাধ্য হন ওম বিড়লাও।

শুধুমাত্র এই বিশেষণে এই আগুন ঝরানো বক্তৃতাকে বিশ্লেষণ করলে ভুল হবে। আসলে বুধবার সংসদে অভিষেকের বক্তৃতা শুনে মনে হচ্ছিল সংসদে বিরোধী পক্ষের নেতা পরপর যুক্তি তুলে ধরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন নড়বড়ে মোদি সরকারের অপদার্থতা। একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচারকে পয়েন্ট তুলে সবার সামনে প্রকাশ করে দেন অভিষেক। এককথায় এই বাজেটকে বললেন দিশাহীন। বাজেটের ইংরেজি অক্ষরের প্রতিটি শব্দ ধরে ব্যাখ্যা করলেন আসলে বাজেটকে মোদি সরকার কোনও ছেলেখেলার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। কুর্সি বাঁচানোর তাগিদে যেভাবে দুই শরিককে নির্লজ্জভাবে তোষামোদ করা হয়েছে বাজেটে তারও কড়া সমালোচনা করেছেন অভিষেক।

সংসদেও ডবল ইঞ্জিনের সরকারের প্রসঙ্গ তোলেন অভিযোগ। বলেন, উত্তরপ্রদেশে বারবার সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হয়। উসকানিমূলক মন্তব্য করে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চলে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বিজেপি এটাকে সমর্থন করে না। গোটা দেশের এটা জানা উচিত, লোকসভা হোক কিংবা রাজ্যসভা, এমনকী কোনও রাজ্যের বিধানসভাতেও বিজেপির কাছে একজনও মুসলিম সাংসদ কিংবা বিধায়ক নেই। পতাকার রঙে বৈচিত্র্য থাকলেই হয় না, সংসদে কতজন ভিন্ন ধর্মের সদস্য আছে সেটাই মূল বৈচিত্র্য।

অভিষেকের বক্তৃতার সময়ে ট্রেজারি বেঞ্চের তরফে বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতে না দমে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে হেনস্থা নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন আমার পুরো পরিবারে হেনস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তাও জনগণকে দমানো যায়নি। ডায়মন্ড হারবারের মানুষ তাঁকে ৭ লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী করেছেন। শাহরুখ খানের ফিল্মের ডায়লগ থেকে স্ট্রেট ব্যাটে খেলে বিজেপি দেওয়া যেকোনও বল মাঠের বাইরে পাঠাতে কসুর করেননি তৃণমূল সাংসদ।






Previous articleমুখ্যমন্ত্রীর মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ, রাজ্যপালের করা মামলায় সরব মমতার আইনজীবী
Next articleনিউজিল্যান্ডের অনুশীলন ড্রোনের মাধ্যমে রেকর্ড,কানাডার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের আইওসিতে